
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: জন্মের পর ছেলের দুটি হাত নেই দেখে জ্ঞান হারিয়েছিলেন মা। স্বজনদের কেউ কেউ নাকি বলেছিলেন দু’হাত না থাকা ছেলেকে বাঁচিয়ে রেখে কী লাভ! কিন্তু পরম স্নেহে লালন করে সন্তানকে বড় করে তোলেন বাবা-মা। এখন সেই সন্তানের বয়স ৩৭ বছর। আইটিআই পাশ ( ITI Pass ) করা যুবক সুজিত দাঁ ( Burdwan Handicap Man) তাঁর দুই পা দিয়ে ট্র্যাক্টর চালিয়ে আজ স্বাবলম্বী। পার্টনারশিপে করেন স্পেয়ার পার্টসের ব্যবসাও ( Spare Spare Parts Business )।
রায়নার প্রত্যন্ত উচালন গ্রামে বাড়ি সুজিত দাঁয়ের। তাঁদের যৌথ পরিবার। ছোট বয়সেই সুজিত তাঁর বাবা স্বপন দাঁকে হারান। বাড়িতে মা পুতুলদেবী-সহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। সুজিত জানান, হার না মেনে লড়াই করে বেঁচে থাকার প্রেরণাটা ছোট বয়সেই পেয়েছিলেন গ্রামের মাস্টারমশাই শক্তিপদ ভট্টাচার্য্যর কাছে। মাস্টারমশাই পায়ে গুঁজে দিয়েছিলেন পেনসিল। কীভাবে লিখতে হয়, দেখিয়ে দিয়েছিলেন তাও। এরপর তাঁর দেখানো পথেই পায়ে লিখে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করে আইটিআই ( ITI ) থেকে ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পূর্ণ করেন সুজিত। বলেন,“আইটিআই পাশের পর ডিভিসির চাকরির পরীক্ষায় বসেও পাশ করেছিলাম। প্যানেলে নামও উঠেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের পর কোথায় কী হয়ে যায় আর কিছুই জানতে পারিনি।”
এরপর আর বসে না থেকে এক পরিচিতের সাহায্য নিয়ে কেবল দু-পায়ের ভরসায় ট্র্যাক্টর চালান শেখেন। ট্র্যাক্টর চালিয়েই প্রথম উপার্জন শুরু করেন। এখন পাশাপাশি ধানের ব্যবসা করেন। খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে করেন স্পেয়ার পার্টসের ব্যবসাও। সুজিত জানান, ব্যবসার কাজও তিনি দু পায়েই করেন। তবে এখনও বাড়িতে থাকলে মা খাইয়ে দেন। তবে বাইরে থাকলে পায়ের আঙুল দিয়ে চামচ ধরে খাবার তুলে খান।
‘আমি শয়তান হয়ে গেছি’, মামলাকারীকে বললেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
সুজিত জানান, পা দিয়ে তাঁকে সবকিছু করতে হয় বলে তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই। বরং নিজেকে নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন। শুধমাত্র দু’পা দিয়েও যে জগতের সবকিছুকে জয় করা যায়, সেটা তিনি করে দেখাতে পেরেছেন। তবে তারপরেও সুজিতের আক্ষেপ, প্রশাসন তাঁর পাশে দাঁড়াল না। কোথাও একটা স্থায়ী চাকরি পেলে অনেক উপকার হত।
পুতুলদেবী বলেন, “ছেলেকে জন্ম দেওয়ার পর যখন দেখি আমার ছেলের দু’টি হাতই নেই, তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারপরেও অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ আমায় সহ্য করতে হয়েছে। পরিবারের সবাই পাশে ছিল বলে ছেলে সুজিত সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। পায়ের ভরসায় লেখাপড়া শিখে ছেলে যখন স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেয় ওই মাসেই আমার স্বামী মারা যান। নিজের প্রচেষ্টায় ও ঈশ্বরের কৃপায় আজ আমার ছেলে সুজিত শুধু নিজেই সাবলম্বী হয়নি, অন্যদেরও জীবন সংগ্রামের দিশা দেখাচ্ছে।”
সুজিতের ছোট কাকু তুলসি দাঁ বলেন,“সাধারণ মানুষ দু’হাতে যা যা করে তার ৯০ শতাংশ সুজিত পায়েই করে। একেবারে অন্যরকম লড়াই।”