
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঠিক এক যুগ আগের কথা। ২০১০ সালের রেল বাজেটে (Budget 2023) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কলকাতায় একাধিক মেট্রো রেল প্রকল্পের (Kolkata Metro) ঘোষণা করছেন, তখন অনেকেই টিপ্পনি করেছিলেন। কেউ বলেছিলেন, স্বপ্নের বিরিয়ানিতে যত ইচ্ছা ঘি ঢালুক, ক্ষতি কী! কেউ বা প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রান্তিক এলাকায় ট্রেন পৌঁছে দিতে রেলের মূলধন খাতে খরচ প্রচুর। শহরে মেট্রো চালানো অগ্রাধিকার নয়, তার জন্য দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগই ভাল।
সে সব নেতি নেতি উবে গেছে অনেকদিন হল। দেখা গেল, ভূতে নয়, টাকা জোগাচ্ছে রেলই। বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের (Nirmala Sitharaman) বাজেট ঘোষণায় কর ছাড় নিয়ে হইহইটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। তা সরিয়ে বাজেটের খাতায় ঢুকে জানা গেল, কলকাতার দুই মেট্রো রেলের কাজ এগোনোর জন্য বাজেটে ২৫৫০ কোটি (2.5k crore) টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এর মধ্যে নিউ গড়িয়া থেকে রাজারহাট হয়ে দমদম বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো রুটের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষে এই প্রকল্প খাতে বরাদ্দ হয়েছিল ৯০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ কাজ দ্রুত শেষ করতে এবার বরাদ্দ আরও প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে জোকা থেকে বিনয় বাদল দীনেশ বাগ পর্যন্ত মেট্রো রুটের কাজ শেষ করতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৩৫০ কোটি টাকা। এই রুটের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭৯৪ কোটি টাকা। তা প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা বাড়ানো হল আগামী অর্থবর্ষের জন্য।
দেখুন রুবি মেট্রোর ভিতরের চেহারা।
কলকাতা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্যও বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে সেই প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ এই দুই রুটের তুলনায় কম। মোটামুটি ভাবে ৩০০ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ হয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেল বোর্ডের যাঁরা কর্তা ছিলেন তাঁরা প্রায় সবাই অবসর নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রেল ভবনের এক কর্তা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দূরদর্শী ছিলেন। উনি যখন মুখ্যমন্ত্রী হন তখন কলকাতায় সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প চালু করা নিয়ে কথা চলছে। ফলে তখন নতুন রুটে পিপিপি মডেলে মেট্রোর জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া মুশকিল ছিল। উনি সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক নেত্রী ছিলেন। রেলমন্ত্রক ছিল তাঁর কাছে। ফলে বুদ্ধি করে তিনি রেলের আওতাতেই মেট্রো প্রকল্পের ঘোষণা করেন। শুধু তা নয়, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোকেও তিনি রেলের অধীনে নিয়ে এসেছেন। এতে রেলের উপর মূলধন খাতে খরচের বোঝা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু লাভ হয়েছে কলকাতাবাসীর। কারণ, পিপিপি মডেলে মেট্রোর কাজ করলে টিকিটের ভাড়া বেশি হবে। যেমন দিল্লি মেট্রোর ভাড়া কলকাতা মেট্রোর থেকে বেশি। কিন্তু কলকাতার সব মেট্রোই রেলের অধীনে। ফলে সেখানে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বিচার করে মেট্রোর ভাড়া তুলনায় কম থাকবে।
নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো রেলের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি নিউ গড়িয়া থেকে রুবির মোড় পর্যন্ত মেট্রো চলাচলের ট্রায়াল রান হয়েছে। আবার জোকা রুটেও ট্রায়াল রানের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাজেট বরাদ্দ বাড়ায় এ বার কাজ আরও দ্রুত এগোবে বলেই মনে করা হচ্ছে।