
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নতুন করে করোনা অতিমহামারী সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে পথে নেমেছেন চিনের উহান প্রদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ (Protests Against Covid Lockdowns in China)। সরকার বিরোধী এই আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১০ জন বিক্ষোভকারীর। তার মধ্যেই বিক্ষোভের খবর প্রচার করার জন্য বিবিসির এক সাংবাদিককে (BBC Journalist) গ্রেফতার করে পেটানোর (beaten by cops) অভিযোগ উঠল হুনানের পুলিশের বিরুদ্ধে।
শনি ও রবিবার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল চিনের একাধিক শহরের রাজপথ। নতুন করে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপের বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছেন করোনা ভাইরাসের আঁতুরঘর হুনান প্রদেশ সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন। তাঁদের দাবি, লকডাউন নয়, কাজ চাই। রবিবার সাংহাই থেকে সেই বিক্ষোভের খবর সম্প্রচার করছিলেন বিবিসির সাংবাদিক এড লরেন্স। এরপরেই তাঁকে গ্রেফতার করে হাতকড়া পরিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে বেশ কয়েক ঘণ্টা থানায় আটকে রেখে লাথি, ঘুষি মারা হয় বলএ জানিয়েছে বিবিসি। তাঁদের সাংবাদিকদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে তাঁরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বলে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন সংবাদ সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
যদিও পরে লরেন্সকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। যদিও চিনের তরফে এই ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি বা ক্ষমাপ্রার্থনাও করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে বিবিসি বিবৃতিতে। সংস্থাটির তরফে আরও জানানো হয়েছে, চিনের দাবি, ভিড়ের মধ্যে ওই সাংবাদিক কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ‘এটাকে আমরা কোনও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা বলে মনে করছি না,’ দাবি বিবিসির।
উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহ ধরে চিনে ফের হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। একটানা পাঁচদিন ধরে প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে একাধিক শহরে নতুন করে কোভিড বিধিনিষেধ আরোপ এবং আংশিক লকডাউনের পথে হাঁটতে চলেছে সরকার। উহানেও তেমনটাই হচ্ছে। এতেই খেপেছেন সাধারণ মানুষ। লকডাউনের বিভীষিকায় ফিরতে চান না কেউ। উহান-সহ একাধিক শহরে পথে নেমে, স্লোগান তুলে সে কথাই জানাচ্ছেন তাঁরা। এমনকি নজিরবিহীন ভাবে চাইছেন প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের পদত্যাগ!
বিক্ষোভের আঁচ উস্কে গেছে, চিনের প্রান্তিক শহর উরুমকিতে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। ১০ জন মানুষ একটি বাড়ির ভিতর পুড়ে মারা গেছেন। স্থানীয়দের দাবি, করোনার বিধিনিষেধকে সামনে রেখে আগুন লাগার পরেও ওই বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি বাসিন্দাদের! প্রতিবাদে সাদা কাগজ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান অনেকে, মোমবাতি জ্বালিয়ে মৃতদের শ্রদ্ধাও জানানো হয়।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে সরকার।
অনেকেই বলছেন, চিনে সচরাচর এ ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায় না। কারণ, সে দেশে সরকারের সমালোচনা করা মানেই কড়া শাস্তির মুখে পড়া। তবে সাম্প্রতিক কালে চিনের ‘জিরো কোভিড নীতি’ এতটাই সমস্যার কারণ হয়েছে, মানুষের অসন্তোষ আর বাঁধ মানছে না। তার জেরেই এই বিক্ষোভ।
জিরো কোভিড নীতি, অর্থাৎ করোনা রোগীর সংখ্যা দেশে একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, তার অন্যতম হাতিয়ার হল নানাবিধ বিধিনিষেধ এবং লকডাউন। লকডাউনের বিরুদ্ধে বহুদিনই গলা তুলেছে দেশবাসী। কিন্তু সম্প্রতি কোভিড রোগীর সংখ্যা ফের বাড়তে শুরু করায় জিন পিং ফের জোর দিয়ে বলেন, চিন কোনওভাবেই এই নীতি থেকে সরে দাঁড়াবে না। এর ফলে পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে মানুষ।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই বিশ্বের প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মেলে। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চিনে। এর পর খুব দ্রুত বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এই মারণভাইরাস। বহু মানুষের মৃত্যু হতে থাকে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, ভ্রমণ বিধিনিষেধ শুরু হয় সারা বিশ্বে।
অভিযোগ, এখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশ কঠোর করোনা বিধি থেকে সরে এলেও, চিন ‘জিরো কোভিড নীতি’র নাম করে এখনও সেসব জারি রাখছে। ফলে মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না, কাজ হারাচ্ছে বহু মানুষ। এসবের মধ্যেই আবারও ফিরে এসেছে করোনা।
আত্মহত্যা করতে পারে আফতাব! তিহারের ৪ নম্বর সেলে কড়া নজরদারি, আজ ফের পলিগ্রাফ পরীক্ষা