
‘বারুইপুর জলাশয় বাঁচাও কমিটি’র তরফে লিফলেট বিলি করে দাবি করা হয়েছে: কলপুকুর, পদ্মপুকুর-সহ এলাকার বিভিন্ন ছোট-বড় জলাশয় বেশ কয়েক বছর ধরে অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে। কখনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে, কখনও নাগরিক অসচেতনতায়, কখনও আবার প্রশাসনিক উদাসীনতায় বুজে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে তারা। প্রাকৃতিক ভারসাম্যও বিপন্ন।
এই অবস্থায় জোট বেঁধেছেন বারুইপুরের সাধারণ মানুষ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন, বারুইপুর হাইস্কুল, মদারাট পপুলার অ্যাকাডেমির প্রাক্তনীরা ও এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কমিটি। শুরু হয়েছে জলাশয় বাঁচানোর আন্দোলন।
গত রবিবার এই কমিটির তরফে পাঁচ দফা দাবি পেশ করে এলাকায় গণসাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। কমিটির দাবিগুলি হল: ১) অবিলম্বে কলপুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে এবং তার সংস্কারের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকারকে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে, ২) আদিগঙ্গা-সহ পদ্মপুকুর অঞ্চলের মানচিত্র প্রকাশ করতে হবে, ৩) পদ্মপুকুরের যে অংশ ইতিমধ্যেই ভরাট করে বিক্রি করা শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, ৪) প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা জলাশয়ে ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং ৫) খাল সংস্কার করে জলনিকাশি ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে বর্ষায় রেল চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
কমিটির সদস্য কৌশিক মুখোপাধ্যায় জানালেন, বারুইপুরের রেললাইন তৈরির সময়েই কাটা হয়েছিল স্টেশনের পাশের কলপুকুর। পদ্মপুকুর বলে আর একটি জলাশয়ও অনেক বড় ছিল। কয়েক বছর আগেও পরিযায়ী পাখিরা আসত এই দু’টি জলাশয়ে। তাঁর অভিযোগ, ইদানীং পরিকল্পিত ভাবে বোজানো হচ্ছে পুকুর দু’টি। পৌরসভা উদাসীন। সেই জায়গা থেকেই রবিবার গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন তাঁরা। দু’ঘণ্টায় প্রায় হাজারটি সই সংগ্রহ করা হয়।
তিনি জানিয়েছেন, এরকম আরও দু’দফায় সই সংগ্রহ করে গণকনভেনশন করা হবে। তাতেও কাজ না হলে পদযাত্রা। শেষমেশ কোনও মহল কোনও উদ্যোগ না নিলে, কমিটির পক্ষ থেকে পরিবেশ আদালতে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৌশিকবাবু। আপাতত সচেতনতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধ মনে করানোটাই জরুরি বলে মনে করছেন তাঁরা। এবং এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দলমত নির্বিশেষে। কোনও রাজনৈতিক রং যাতে না লাগে, সে দিকেও নজর রেখেছেন তাঁরা।
কৌশিকবাবুর দাবি, ২৫ অগাস্ট প্রথম গণস্বাক্ষর সংগ্রহের দিন বাধা পেয়েছেন তাঁরা। শিয়ালদহ জিআরপি-র অনুমতি থাকলেও পুলিশ এসে সরে যেতে বলেন তাঁদের। কৌশিকবাবু জানালেন, তাঁদের কাছে বারবার বার্তা পৌঁছনোর চেষ্টা করা হয়েছে এই কাজ বন্ধ করার। এমনকী স্থানীয় কাউন্সিলরও এক বার ঘটনাস্থলে ঘুরে যান বলে দাবি কৌশিক বাবুর।
বারুইপুর জলাশয় বাঁচাও কমিটির কনভেনর স্বপন ভারতী জানালেন, তাঁদের এই উদ্যোগ সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও এটা কেবল নিষ্ক্রিয়তা নয়, ইচ্ছাকৃত ভাবে পুকুর বোজানোর পক্ষ নেওয়াও হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই কারণেই নাগরিকদের জোট বাঁধা দেখে প্রশাসনের একাংশ ভয় পাচ্ছে বলে দাবি স্বপনবাবুর।