
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দশ বছর বয়স থেকে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে রাজার। সেই থেকে প্রতি মাসে দু’বার করে রক্ত নিতে হয় তাঁকে। বেঁচে থাকার লড়াইটা বেশ কঠিন ছিল। তবু কখনও তাঁকে হাল ছেড়ে দিতে দেখা যায়নি। বর্ধমানের (Bardhaman) রাজা দেবনাথের (Raja Debnath) ওষুধ-পথ্যে জর্জরিত জীবনে এক মুঠো আলো ‘শাপলা শালুক’।
বর্ধমানে জনপ্রিয় লিটল ম্যাগাজিন এই ‘শাপলা শালুক’। গল্প, কবিতা, মননশীল প্রবন্ধ, কী নেই তাতে! ১৭ বছর ধরে সেই ম্যাগাজিন প্রকাশ করছেন রাজা। তাঁর কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেই। তবু ‘শাপলা শালুক’-এর হাত ধরে রাজা সাহিত্যপ্রেমীদের মন জয় করে ফেলেছেন, তাঁকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এক সাহিত্য অনুরাগীদের বলয়।
বর্ধমানের আনন্দপল্লীর বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের উজ্জ্বল ওরফে রাজা দেবনাথ। দু’বছর আগেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। দিনরাত অজস্র ওষুধ খেতে হয়। ভাল করে হাঁটাচলাও করতে পারেন না তিনি। তবু শহরজুড়ে তাঁর নামডাক।
প্রথাগত শিক্ষা নেই রাজার। ছোটবেলা থেকে বাড়িতেই পড়াশোনা করেছেন। ক্লাস ওয়ান থেকে স্নাতক স্তরের বই, সব পড়ে ফেলেছেন বাড়ি বসেই। রাজার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী, বোন কলেজে পড়ান। বাড়ি থেকে প্রতি মাসে যে হাতখরচ তিনি পান, তা দিয়েই চলে ‘শাপলা শালুক’। অনেক তরুণ লেখক-লেখিকাকে প্রথম প্রকাশের সুযোগ দিয়েছেন রাজা। তবে বেশিরভাগই প্রচার পেয়ে যাওয়ার পর এই মানুষটাকে আর মনে রাখেননি। সাহিত্য আঁকড়ে একলাই কেটে যাচ্ছে তাঁর দিন।
রাজা ভয় পান, আজকালকার ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোনের ঝলমলে স্ক্রিনেই মজে থাকে দিনরাত। ম্যাগাজিন, লেখালেখির প্রতি আস্তে আস্তে তাদের সমস্ত আগ্রহ চলে যাচ্ছে। এভাবে একদিন হয়তো সাহিত্যচর্চাই বিরল হয়ে পড়বে বর্ধমানে।
বর্ধমানের উজ্জ্বলের কথা শুনে লোকে বলাবলি করেন, মুকুট হয়তো কাঁটার, তবু তিনি ‘রাজা’।
আরও পড়ুন: সামুদ্রিক মাছ রান্না করে খেয়ে মৃত্যু যুবকের! মর্মান্তিক ঘটনা গোসাবায়