
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হবে বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর। পদ্মা নদীর উপর তৈরি এই সেতু ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে উন্মাদনা চরমে। এই উন্মাদনার প্রধান কারণ দুটি, এক. একটি আন্তর্জাতিক মানের সেতু প্রাপ্তি। দুই. সম্পূর্ণ দেশিয় অর্থে সেটি নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের (Bangladesh)অনেকেই উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা সেতুটিকে সাবলম্বী অর্থনীতির প্রতীক বলে মনে করেন। আর সেটির উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সে দেশের স্বাধীনতার ৫০ এবং।জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ পালনের আবহের মধ্যে।
এই সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে হাসিনার সরকার শুধু আন্তর্জাতিক স্তরে বাধার মুখে পড়েছে তা নয়, অ্যন্তরীণ রাজনীতির জটও ছিল পুরো মাত্রায়। বিরোধীরা বরাবর এই সেতু (Padma Bridge) তৈরি নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলেছে। আজও তুলছে। দিন কয়েক আগেই বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা সংসদে তথ্য দিয়ে দাবি করেন, সমমানের অনেক সেতুর তুলনায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচ বেশি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখান, যে সেতুগুলির সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে সেগুলির তুলনায় পদ্মা সেতু অনেক উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি।

তবে সবকিছু কাটিয়ে অবশেষে বাংলদেশের স্বপ্নের সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এই সেতু তৈরি হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। শুধু তাই নয়, খুব কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। পাশাপাশি, যেহেতু এই সেতুর সঙ্গে রেল যোগাযোগ যুক্ত তাই কলকাতা-ঢাকা ট্রেন এবার থেকে আরও কয়েক ঘণ্টা কম সময় নেবে। পড়শি দেশের এই সেতু লাগোয়া ভারতের জন্যও লাভদায়ক হতে পারে, মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
সেতুতে চল্লিশ তলার সমান পাইলিং করা হয়েছে, দশ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার হবে এই সেতু। বিশেষজ্ঞডের কথায় সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হলে একশ বিশ বছরেও কিছু হবে না এ সেতুর।

তবে এই সেতু ঘিরে জট কম হয়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রকল্প শুরু হতেই কেটে যায় বেশ কয়েকবছর। রাজনৈতিক কারণ যেমন ছিল তেমনই ছিল আর্থিক জটিলতাও। নানা জট কাটিয়ে শুরু হয় হাসিনার সরকারের এই স্বপ্নের প্রকল্প।
ফের শুরু হল ভারত-বাংলাদেশ বাস পরিষেবা, দুই বছর করোনার কারণে বন্ধ ছিল
১৯৯৯ সালে প্রাক–সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূত্রপাত। এরপর পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষ হয়েছিল ২০০৫ সালে। তারপর অনুমোদন পেতেই কেটে যায় আরও দুই বছর। শুরু হয় সেতুর নকশা তৈরির কাজ। এই সেতুর ওপর দিয়ে শুধু গাড়ি চলবে না, যাবে রেলও। সেই পরিকল্পনা যুক্ত হয় এই প্রকল্পের সঙ্গে।
এই সেতুর প্রাথমিক নকশা তৈরি করে জাপানি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই। তবে এই নকশা পরবর্তী সময়ে পুনরায় করা হয়। তারপর আসে এই সেতু তৈরির বাজেটের বিষয়।

বাংলাদেশ সরকার সূত্রে খবর, এই সেতু নির্মাণের জন্য ব্যয় মূল্য ধরা হয় ৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। ২০০৫ সালের ১৯ অক্টোবর ডিপিপি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
তবে জট শুরু হয় তখন থেকেই। তৎকালীন জোট সরকার এই পরিকল্পনার অনুমোদন দেয়নি। পরে ২০০৭ সালে এই সেতুর জন্য দরপত্র ডাকা হয়। তবে ততদিনে বাজেট আরও ২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায়। কিন্তু ফের নতুন করে নকশা করা শুরু হয়। ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়ে যায়। তবে ততদিনে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ার অন্যতম এক কারণ সেতুর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি। শুরুতে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ৫.৫৮ কিলোমিটার। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬.১৫ কিলোমিটারে। মোট ৪১টি স্প্যান থাকবে এই সেতুতে। তার মধ্যে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌ চলাচল করতে পারবে।
সেতুর অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করে হাসিনার সরকার। তবে সেখানেও ধাক্কা। এই সেতু নির্মাণ ঘিরে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ। বিশ্ব ব্যাংকের আনা অভিযোগের ভিত্তিতে একের পর এক আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রতি স্থগিত করে।
বিশ্ব দরবারে যখন এই সেতু নির্মাণের অর্থায়নের জন্য একের পর এক দরজা বন্ধ হতে থাকে, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Seikh Hasina) ঠিক করেন, এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নেই তৈরি করবে বাংলাদেশ সরকার। তবে বছরের পর পেরিয়ে যাওয়ার পরে শুরু হয় না সেতু নির্মাণের কাজ। ২০১৮ সালে এই সেতু নির্মাণের খরচ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এই সেতুর প্রথম স্প্যান স্থাপন হয়। তারপর ধীরে ধীরে কাজ এগোতে থাকে। অবশেষে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সেতুর শেষ স্প্যান নির্মাণের কাজ শেষ হয়। তারপর বাকি কাজ শেষ করতে লাগে আরও দুই বছর। চলতি বছরের ২৫ জুন এই সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে হাসিনার সরকার শুধু আন্তর্জাতিক স্তরে বাধার মুখে পড়েছে তা নয়, অ্যন্তরীণ রাজনীতির জটও ছিল পুরো মাত্রায়। বিরোধীরা বরাবর এই সেতু তৈরি নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলেছে। তবে সবকিছু কাটিয়ে অবশেষে বাংলদেশের স্বপ্নের সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এই সেতু তৈরি হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যপক উন্নতি হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। শুধু তাই নয়, খুব কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। পাশাপাশি, যেহেতু এই সেতুর সঙ্গে রেল যোগাযোগ যুক্ত তাই কলকাতা-ঢাকা ট্রেন এবার থেকে আরও কয়েক ঘণ্টা কম সময় নেবে। যা অভাবনীয়।

এই সেতু বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চলছে। কী সেই রেকর্ড? এই সেতুতে চল্লিশ তলার সমান পাইলিং করা হয়েছে, দশ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার হবে এই সেতু। বিশেষজ্ঞডের কথায় সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হলে একশ বিশ বছরেও কিছু হবে না এ সেতুর।
এই সেতু বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চলছে। কী সেই রেকর্ড? এই সেতুতে চল্লিশ তলার সমান পাইলিং করা হয়েছে, দশ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার হবে এই সেতু। বিশেষজ্ঞডের কথায় সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হলে ১২০ বছরেও কিছু হবে না এ সেতুর। দ্বিতল বিশিষ্ট পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সর্ববৃহত সেতু হতে চলেছে। সেতুটি দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমের ১৯টি জেলাকে সরাসরি যুক্ত করবে।