
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের (Bangladesh) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও খনি বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তাহের আহমেদ খুন হয়েছিলেন ২০০৬ সালে। তাঁর একমাত্র মেয়ে সাগুফতা তবসসুম আহমেদ তখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ১৬ বছরের মাথায় এ মাসের গোড়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন সহ চারজনকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সাজা দিয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। অভিযুক্তদের দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে সেদেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন: কালবৈশাখীতে তছনছ বই-খাতা, চরম বিপদে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী
প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও মামলায় এই ধরনের কঠোর সাজার একাধিক রায় হয়ে থাকে আদালতে। কিন্তু অধ্যাপক তাহের আহমেদের খুনের মামলাটি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে সাড়া ফেলে দিয়েছে তাঁর মেয়ে তবসসুমের কারণে।
তাহের খুনের কিছুদিনের মধ্যেই জামিন পেয়ে যায় ধৃতরা। সেই খবর নাড়িয়ে দেয় অধ্যাপকের কিশোরী মেয়ে তবসসুমকে। বুঝতে পারেন, মামলাও পাহারা দেওয়া প্রয়োজন। নইলে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাবে। আর পাহারা দেওয়ার জন্য আইনজীবী হতে হবে তাঁকে।
পরিবারের সম্মতি নিয়ে আইন নিয়ে পড়াশুনো শুরু করেন তবসসুম। পাশাপাশি বাবার খুনের মামলার অগ্রগতির দিকেও নজর রাখছিলেন। কারণ, আর পাঁচটা খুনের মামলার মতো এটিও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আইনি লড়াই। মামলা লড়ছিল বাংলাদেশ পুলিশ।
তবসসুম আইন নিয়ে পড়লেও পেশাদার আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে তেমন ছিল না। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, বাবার খুনের মামলার সুবাদেই নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালতে নাম লেখান ল’ ডিগ্রি অর্জনের পর। কারণ, একটা সময় উপলব্ধি করেন, মামলার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করলে লক্ষ্য পূরণ হবে না। বিস্তর আইনি জটিলতা থেকে মামলাকে মুক্ত করতে হলে আইনজীবীর গাউন পরে আদালতে দাঁড়াতে হবে।
ওই একটি মামলা নিয়েই চলে ১৬ বছরের টানা লড়াই। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তাহেরের সহকর্মী অধ্যাপক মহিউদ্দিনকে মূল অভিযুক্ত সাব্যস্ত করে। পদোন্নতি নিয়ে বিবাদের জেরেই সিনিয়র অধ্যাপককে খুন করান মহিউদ্দিন।
রায় ঘোষণার পর মা’কে পাশে নিয়ে কান্না জড়ানো গলায় বছর বত্রিশের তবসসুম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ওষুধ যেমন মানুষের রক্তে মিশে যায়, এই মামলাটিও আমার জীবনে সেই ভাবেই মিশে গিয়েছিল। বাবার খুনের মামলার কারণেই আর পাঁচজনের মতো এই ১৬ বছরে স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারিনি আমি। সব সময় তাড়া করে বেড়াত বাবাকে খুনের মামলাটি। অধ্যাপক তাহেরকে খুন করে সেপটিক ট্যাঙ্কে দেহ ফেলে দেওয়া হয়েছিল।