
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘ভাল আপনার, ভাল সবার’। গত পাঁচটা বছর ধরে এই স্লোগান এবং তার পেছনে থাকা দর্শনই মেনে চলেছে দেশের কনিষ্ঠতম সর্বজনীন ব্যাঙ্ক বন্ধন। আজ, ২৩ অগস্ট ৫ বছর পূর্ণ হল বন্ধন ব্যাঙ্কের। গ্রাহকদের সঙ্গে তথা গোটা সমাজের সঙ্গে দৃঢ় ও স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে বরাবরই ভাল কাজ করে চলেছে বন্ধন। আজ পাঁচ বছর পার করে ফেলার পরে তার আগামীর লক্ষ্য এবং অঙ্গীকার আরও অনেকটাই বড়।
যদিও করোনা আবহে এবার জাঁকজমক করে বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান হয়নি এ বছর, তবে ভবিষ্যতে গ্রাহকদের স্বার্থে তাঁদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় আরও জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এটাই এবছরের উদযাপন। এ প্রসঙ্গে বন্ধন ব্যাঙ্কের এমডি তথা সিইও চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেছেন, “এই কোভিডের সময়ে একটা নতুন টপ আপ লোনের স্কিম এনেছি আমরা। এর মাধ্যমে কেউ বিজনেস লোন নিয়ে থাকলেও সেটা টপ আপ স্কিমে আরও বাড়ানো যাবে।”
আজকের এই এত বড় সাফল্যের পেছনের গল্পটাও কিন্তু কম রোমহর্ষক নয়। ১৯৬০ সালে ত্রিপুরার আগরতলায় মিষ্টির দোকানের ব্যবসা ছিল চন্দ্রশেখর ঘোষের বাবার। স্বচ্ছলতা ছিল না ৯ সদস্যের পরিবারে। চন্দ্রশেখর মিষ্টির দোকানে কাজ করার পাশপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছিলেন কষ্ট করে। একসময়ে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন তিনি। চাকরিও করতে শুরু করেন।
কিন্তু স্বাধীন ব্যবসা করার নেশা ছিল চন্দ্রশেখরের রক্তে। সেই সঙ্গে অদম্য মনের জোর ও নতুন কিছু করার স্বপ্ন। তাই চাকরি ছেড়ে ২০০১ সালে তিনি একটি মাইক্রোফিন্যান্স সংস্থা খোলেন সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের ঋণ দেওয়ার জন্য। সংস্থার নাম দেন বন্ধন। এর পরে ২০০৯ সালে রির্জাভ ব্যাঙ্কের নন ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স কোম্পানি হিসেবে বন্ধনকে রেজিস্টার্ড করেন তিনি৷ এর পরে ২০১৩ সালে ব্যাঙ্কের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন চন্দ্রশেখর৷
লাইসেন্স পাওয়ার পরে ২০১৫-র ২৩ অগস্ট থেকে পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক হিসেবে যাত্রা শুরু করে বন্ধন। বন্ধন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্তমানে সারা দেশে তাঁদের ৪ হাজার ৫৫৯টি ব্যাঙ্কিং আউটলেট রয়েছে। ব্যাঙ্কের মোট শাখার মধ্যে প্রায় ৭১ শতাংশ আধা শহর ও গ্রামীণ এলাকায় খোলা হয়েছে। যাতে এইসব জায়গার মানুষকে যথাযথ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়া যায়। এটিএম রয়েছে ৪৮৫টি। মোট কর্মীর সংখ্যা ৪২ হাজার। আর বন্ধন ব্যাঙ্কের বর্তমান গ্রাহকের সংখ্যা ২ কোটি ৩ লক্ষ।
কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ বলছেন, “বন্ধনের একটি অন্যতম লক্ষ্য কর্মসংস্থান বাড়ানো। কোন্নগরে এনজিও হিসেবে বন্ধনের পথ চলা শুরু হয়েছিল ৩ জনকে নিয়ে। ধীরে ধীরে ফিনান্সিয়াল কোম্পানি হয়ে ব্যাঙ্ক। কম আয়ের মানুষকে নির্ভরশীল করার লক্ষ্য ছিল আমাদের। মহাজনদের চড়া সুদ থেকে বাঁচানোও উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষকে।”
এই জায়গা থেকেই বন্ধনের মোট কর্মকাণ্ডে ৬৪ শতাংশ জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প। তবে এ ছাড়াও ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগের (এমএসএমই) জন্য ঋণ, গোল্ড লোন এবং মধ্যবিত্তদের জন্য গৃহঋণ দেওয়া হচ্ছে। বন্ধনের ১.১২ কোটি ক্ষুদ্র ঋণ গ্রাহক তাঁদের ব্যবসায় অন্তত একজন করে কর্মী নিয়োগ করেছে ধরে নিলে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতারা তাঁদের নিজেদের জীবিকা ছাড়াও আরও ১.১২ কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, “যাঁরা আগে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সুযোগ পাননি, তাঁদের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষকে গত পাঁচ বছরে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মূলস্রোতে আনতে সফল হয়েছে বন্ধন ব্যাঙ্ক। সাধারণ মানুষকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে এসেছে বন্ধন। বন্ধনের সমস্ত গ্রাহককে তাই আমি অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাঁরা শুধু ঋণ নেওয়ার জন্য আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন তা নয়, তাঁদের জীবনের সঞ্চয়ও আমাদের কাছে রেখেছেন বিশ্বাস ও ভরসার সঙ্গে।’’
আজ পাঁচ বছরের পূর্তিতে বন্ধনের ঘোষণা, আগামী দিনেও দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগকে সাহায্য করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ, এই উদ্যোগগুলিই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ তৈরি করবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে। এই উদ্যোগগুলি নিজেদের পায়ে পোক্তভাবে দাঁড়াতে পারলেই আত্মনির্ভর এবং শক্তিশালী ভারত তৈরি হবে। তাই ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের ছোট উদ্যোগে রূপান্তরিত করার জন্যও উৎসাহ দেবে বন্ধন, যাতে তাঁরা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে, পণ্য পরিষেবা কর ও আয়করের নিয়ম নীতি মেনে ব্যবসা করতে পারেন এ সব ক্ষেত্রের জন্য সরকারি নীতির সুবিধা পান।
এবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী বন্ধন ব্যাঙ্কের মোট আমানত ৬০ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, প্রদত্ত ঋণ ৭৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। খরচ ও আয়ের অনুপাত ২৭.৯ শতাংশ, যা বেশ লাভজনক। বিগত ৫ বছরে ডিমনিটাইজেশন, ও হালফিলের করোনা বিপর্যয় সত্ত্বেও ব্যাঙ্কের পরিষেবার গুণগত মান সমান ভাবে বজায় রাখা হয়েছে।