
বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়র গাওয়া গান বাজিয়ে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় রাস্তায় ঘুরছে গেরুয়া শিবিরের প্রচার ট্যাবলো। আর তৃণমূলের (TMC) বাবুল সুপ্রিয় তখন একটি পথসভায় বসে! সামনে বাজছে সেই গান….. “এই তৃণমূল আর না আর না!”
সিনটা ভাবতে পারছেন!
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগের কথা। হরেক কিসিমের গানে বাংলার ভোট বাজার তখন তুঙ্গে। তার মধ্যেই বিজেপি তাদের একটা প্রচার গান রেকর্ড করিয়েছিল বাবুল সুপ্রিয়কে দিয়ে। সে গানের লাইনও ছিল চোখা চোখা। যেমন, “দিদির পায়ে হাওয়াই চটি, ভাইয়েরা সব কোটিপতি/ পুলিশ তোমার ডিএ বাকি, এই মিছিলে হাটবে নাকি!” আবার কোনও লাইনে বলা হয়েছিল, “কালীঘাটের টালির চালা, ওই চোরেদের পাঠশালা/ চোর গুন্ডা রাজ্য চালায়, পুলিশ লুকায় টেবিল তলায়!” আর প্রতি লাইনের শেষে কোরাসে বাজছে, “এই তৃণমূল আর না আর না!” সে গানের রিদমও ছিল জম্পেশ।
বিশ্বভারতীর শতবর্ষে মুক্তি পেল তথ্যচিত্র, নাচে-গানে জমজমাট রবি-স্মরণ সল্টলেকে
আগামী ২৫ নভেম্বর আগরতলা কর্পোরেশন সহ ত্রিপুরার ২০টি পুরসভা ও নগর পঞ্চায়েতের ভোট। বাবুল কার্যত আগরতলার মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। পাড়ায় পাড়ায় প্রচার করছেন। বিজেপির সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ত্রিপুরা নির্বাচন কমিশনের দুয়ারে ধর্না দিচ্ছেন। শুক্রবার সন্ধেবেলা আগরতলার রামনগর এলাকায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী তপন দত্তর সমর্থনে পথসভা চলছিল। বক্তৃতা করছিলেন সায়নী ঘোষ। বড় সভা নয়। মফঃস্বলে স্ট্রিট কর্ণার যেমন হয়। মাটিতেই চেয়ার পাতা। সেখানে বসেছিলেন বাবুল।
হঠাত্ই ভেসে আসে বাবুলের কণ্ঠস্বর। তারপর দেখা যায় বিজেপির ট্যাবলো আসছে। সেই ট্যাবলোতে লাগানো চোঙায় বাজছে বাবুলের গাওয়া সেই গান। যখন তিনি বিজেপির সাংসদ, মোদীর মন্ত্রী। যখন তিনি টিএমসিকে বিদ্রুপ করে লিখতেন ‘টিএমছিঃ!’
স্বাভাবিক ভাবেই সায়নী কিছুটা উত্তেজিত হন। তারপর বাবুল তাঁকে থামিয়ে তৃণমূলের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে নিয়ে বোঝাতে চান, ভাবুন একবার! ওই দলটার (পড়ুন বিজেপির) নেতাদের এতটাই অহং যে, যিনি গানটা বানিয়েছিলেন তিনিই আজ দল বদলে দিদির সঙ্গে রয়েছেন। বাবুল এও বলেন, বিজেপি যত তাঁর গাওয়া উনিশের ওই গান বাজাবে তত বিজেপি ছেড়ে লোকজন তৃণমূলে আসবে।
অনেকের মতে, বাবুলের একথা নেহাতই ম্যানেজ করার চেষ্টা। তবে দলবদলুদের এই ধরনের অস্বস্তিতে প্রায়ই পড়তে হয়। এই যেমন তৃণমূল মাঝে মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরনো সব ক্লিপিং ছড়িয়ে দেয়। যেখানে কোনও এক কালে হাতের মুঠি আকাশে ছুড়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও, মোদী হঠাও দেশ বাঁচাও। সিপিএম কখনও কখনও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। এসএফআই নেতা থাকাকালীন বিভিন্ন উদাহরণ টেনে বোঝানোর চেষ্টা করতেন হিটলারের মানসিক গঠনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানসিকতার বিন্দুমাত্র ফারাক নেই। কিন্তু বাবুলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ডাইরেক্ট হয়ে গিয়েছে। এই যা!