
সম্প্রতি টালিগঞ্জের এক এটিএমে ঢুকে এটিএম কার্ড হাতসাফাই করে এক বৃদ্ধের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে একলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় সে। তার ঠিক আগেই রিজেন্ট পার্ক ও কসবাতেও একই পদ্ধতিতে জালিয়াতি করেছিল সে। এখনও পর্যন্ত প্রায় কুড়িজনের কাছ থেকে সে জালিয়াতি করেছে বলেই খবর ছিল পুলিশের কাছে। শেষমেশ ধরা পড়েছে সে। আজ, রবিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
তবে সহজে ধরা পড়ার কথা ছিল না তার। হাতসাফাই আর জালিয়াতির জাল ছিল বহু দূর বিস্তৃত। সৌবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল অসংখ্য পরিচয়। কখনও সে জয়দেব রায়, কখনও আবার শেখ শাহিদ আলম, কোনও সময় সে পাড়ার তনু! এ বছর এই ‘তনু’ই ঠাকুর দেখতে এসেছিল টালিগঞ্জ এলাকার জনক রোডের পাড়া। সেটাই কাল হল।
সেই সূত্র ধরেই টালিগঞ্জ থানার হাতে ধরা পড়ে গেল এটিএম জালিয়াতিতে অভিযুক্ত সৌবীর। জানা গেল, ছোটবেলা থেকেই হাতসাফাইয়ে হাত পাকিয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ক্লাস নাইন ড্রপআউট সৌবীর।
কীভাবে করেছিল কার্ড জালিয়াতি (ATM fraud)?
পুলিশ জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা জমা দিতে যান শরৎ বোস রোডের বাসিন্দা এক বৃদ্ধ। তিনি এটিএম কার্ড ব্যবহার করেই ৬ হাজার টাকা জমা দেন। তিনি বেরিয়ে আসার সময়েই হঠাৎ এটিএমে প্রবেশ করে সৌবীর। তখন অবশ্য তার পরিচয় শাহিদ।
সৌবীর বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করে, তিনি অ্যাকাউন্টের কেওয়াইসি আপডেট করেছেন কিনা, না করালে যেন এটিএম মারফত করিয়ে নেন। তা না করলে তাঁর সদ্য জমা দেওয়া টাকার এক শতাংশ ব্যাংক কেটে নেবে। তার নিজের টাকাও এভাবে কাটা গেছে বলে গল্প ফাঁদে শাহিদ।
উত্তরাখণ্ডে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, রাস্তা থেকে গড়িয়ে খাদে পড়ল গাড়ি! মৃত অন্তত ১৩
বৃদ্ধ বিশ্বাসও করেন। রাজি হন কেওয়াইসি আপডেট করতে, সাহায্য চান শাহিদের। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল শাহিদ অর্থাৎ সৌবীর। বৃদ্ধ ফের এটিএমে কার্ড সোয়াইপ করেন, তখনই পিন নম্বরটি দেখে নেয় সে। দুয়েকটা বোতাম খুটখাট করে বলে, বৃদ্ধের অ্যাকাউন্ট আপডেট হয়ে গিয়েছে।
এর পরে যন্ত্র থেকে সৌবীর নিজেই কার্ডটি বের করে নেয় এবং মুহূর্তের মধ্যে হাতসাফাই করে পাল্টে দেয় ওই এটিএম কার্ড। ওই একই ব্যাঙ্কের অন্য একটি এটিএম কার্ড বৃদ্ধর হাতে ধরিয়ে দেয় সে। বৃদ্ধও কিছু না বুঝে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যান।
এর পরেই অভিযুক্ত চুরি করা বৃদ্ধর কার্ড ব্যবহার করে এটিএমের সঙ্গে সংযুক্ত মোবাইল নম্বরটি পাল্টে নেয়। তার পরে সেই কার্ড সোয়াইপ করেই এটিএম থেকে হাতিয়ে নেয় এক লাখ টাকা! শুধু তাই নয়, তার পরে কাছেই একটি চশমার দোকানে ওই কার্ড ব্যবহার করে হাজার দু’য়েক টাকার একটি ফ্রেমও কেনে সে।
এসবের কিছুই টের পাননি ওই বৃদ্ধ, কারণ তাঁর মোবাইল নম্বরে কোনও মেসেজই আসেনি। পরে ই-মেলের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়েছে লাখ টাকা! তখনই তিনি টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ কার্ডের সমস্ত লেনদেন দেখে। ওই এটিএমের ও চশমার দোকানের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখে। তার ছবি বার করা হয় ফুটেজ থেকে। তার পরে খোঁজ চলে অভিযুক্তর। সে সময়েই টালিগঞ্জের জনক রোডের কয়েকজন বাসিন্দা ছবিটি দেখেই পুলিশকে জানান, এটি ‘তনুদা’র ছবি।
এর পরে তাকে ধরাটা কেবল সময়ের অপেক্ষা ছিল। পুলিশ জেনেছে, পড়াশোনা ছেডে় দিয়ে নানারকম জালিয়াতি শুরু করে সে। আট বছর আগে বিয়েও করে। তখন তার পরিচয় ছিল জয়দেব। তাদের সন্তানও রয়েছে। এর পরে বছর দুয়েক আগেই ইউটিউব দেখে সে এটিএম কার্ড পাল্টানোর জালিয়াতি শেখে! তার পরে শুরু করে এই কাজ। তাকে জেরা করে সমস্ত জালিয়াতির কথা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।