
দ্য ওয়াল ব্যুরো : বৃহস্পতিবার সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেছিলেন, যারা জনতাকে আগুন লাগাতে বলে, তারা কখনও নেতা নয়। তা নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছিল নানা মহল। তাদের বক্তব্য ছিল, সেনাপ্রধান রাজনীতি করছেন। শুক্রবার ফের মুখ খুললেন সেনাপ্রধান। তিনি বললেন, ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর ‘চূড়ান্ত ধর্মনিরপেক্ষ’। তারা কেবল ইনসানিয়ৎ অর্থাৎ মানবতা ও শরাফত অর্থাৎ ভদ্রতা দ্বারা পরিচালিত।
এদিন দিল্লির মানবাধিকার ভবনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অফিসারদের সামনে তিনি ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ভারতের সেনাবাহিনী সবসময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনকে সম্মান করে চলে। তাঁর কথায়, “আমরা কেবল নিজেদের দেশের নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা করি না, শত্রুদেরও মানবাধিকারও রক্ষা করি। আমরা যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে জেনিভা কনভেনশন মেনে চলি।”
সন্ত্রাস দমন সম্পর্কে তিনি বলেন, “জঙ্গিদের আলাদা করে চিহ্নিত করে আমরা অভিযান চালাই। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখি, নিরীহ মানুষের যেন ক্ষয়ক্ষতি না হয়। মানুষের হৃদয় জয় করতে পারলেই নিখুঁতভাবে এই অভিযান চালানো যায়। কাজটা সহজ নয়।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি সন্ত্রাস দমন অভিযান চালানোর পরে তদন্ত চালানো হয়। সংশ্লিষ্ট নথিপত্রও রেখে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সেনাপ্রধান বলেন, “লিডারের কাজ হচ্ছে নেতৃত্ব দেওয়া। নেতৃত্ব দেওয়া এত সহজ কাজ নয়। কারণ যখনই আপনি কোনও দিকে যাবেন, সবাই আপনাকে অনুসরণ করবে। দেখে মনে হয় নেতৃত্ব দেওয়া খুব সহজ কাজ। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও অত সহজ নয়।” তারপরেই একজন লিডারের কী করা উচিত, তা নিয়ে মন্তব্য করেন রাওয়াত। তিনি বলেন, “তাঁরাই নেতা, যাঁরা মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে যান। কিন্তু যাঁরা মানুষকে ভুল বোঝান, তাঁরা কখনওই লিডার হওয়ার যোগ্য নন। আমরা দেখছি হাজার হাজার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হিংসার দিকে যাচ্ছে তারা। আগুন জ্বলছে। সংঘর্ষ হচ্ছে। যাঁরা এটা করছেন তাঁরা লিডার নন।”
আগামী ৩১ ডিসেম্বর সেনাপ্রধানের পদ থেকে অবসর নেওয়ার কথা বিপিন রাওয়াতের। এদিন দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে দিল্লি জুড়ে হয়ে চলা এই বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান। রাওয়াতের এই মন্তব্যের পরে পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি খুব উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন সরকার বিরোধী দল। ছাত্র-ছাত্রীরা অরাজনৈতিক আন্দোলন করলেও কোথাও কোথাও রাজনৈতিক রং তাতে লেগে গিয়েছে। এটা কখনই অভিপ্রেত নয়। সেটাই সবার সামনে এদিন তুলে ধরার চেষ্টা করলেন সেনাপ্রধান। বোঝাতে চাইলেন, প্রতিবাদের ভাষা কখনওই হিংসা নয়।