
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ফুটবলের রাজপুত্র নেই।
দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা নেই।
চলে গেলেন ম্যাজিশিয়ান। হঠাত্।
মারাদোনা বিদায়। এই লেখাটি লিখেও অনেকে ভাবছেন সত্যি ঘটনা তো। তিনি এমন এক স্বপ্নের চরিত্র, যিনি সর্বসাধারণের কাছে ছিলেন রাজপুত্র।
কয়েকদিন আগেও তিনি ছিলেন হাসপাতালে, তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। কেউ ভাবতেই পারেননি তিনি চলে যাবেন আচমকা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে। কিন্তু মারাদোনা মনে হয় এমনই। তিনি সেই বিশ্ব গোলার্ধের কাছে অজানা, অচেনাই থেকে গেলেন। মৃত্যুর মতো শেষ পরিণতিতেও আচমকা ধাক্কায় চমকে দিলেন সকলকে। মাত্র ৬০ বছর বয়সে মারা গেলেন ফুটবলের ঈশ্বর দিয়েগো মারাদোনা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সম্প্রতি মারাদোনার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তা সফলও হয়। কিন্তু বাড়ি আসার পরেই যে তিনি চিরঘুমে চলে যাবেন, কেই বা জানত! সবথেকে বড় কথা, মারাদোনা যে সত্যিই নেই, এই খবর লিখতে গিয়েও হাত কেঁপেছে তাবড় ক্রীড়া সাংবাদিকদের। তাঁর চলে যাওয়ার খবর প্রথম প্রকাশিত হয় আর্জেন্তিয়ান সংবাদমাধ্যমে, আজ বুধবার রাতে। তার পরেই মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে দুঃসংবাদ।
সারা দুনিয়া স্তব্ধ। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়েছে, মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। তিনি এমন এক সময়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন, যে সময়ে করোনাভাইরাসে ছেয়ে রয়েছে বিশ্ব। কিন্তু মারাদোনা করোনার কাছে হারেননি। তিনি কোভিডকে নেগেটিভ করেছিলেন, হার মানলেন হৃদরোগের কাছে।
হৃদরোগের সমস্যা তাঁর বরাবরই। এর পেছনে বারবারই দায়ী হয়েছে তাঁর অনিয়ন্ত্রিত বেহিসেবি জীবনযাত্রা। সেই বেহিসেবি যাপনই কি তাঁর অকাল মৃত্যুর কারণ, এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে তামাম ফুটবলপ্রেমীদের মনে।
১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন মারাদোনা। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনাল জয় করার সেই ম্যাচ আজও মনের মণিকোঠায় রেখে দিয়েছেন বিশ্বের বহু ফুটবলপ্রেমী। সেই ম্যাচেই মারাদোনার বিখ্যাত ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোলটি সর্বকালের সেরা গোল হয়ে থেকে গেছে।
তাঁর জয়ের কাহিনি অগণ্য। একের পর এক পালক যোগ হতেই থেকেছে তাঁর মুকুটে। কিন্তু সে জয়যাত্রায় খানিক যতি পড়ে, ১৯৯১ সালে কোকেন নেওয়ার অপরাধে তিনি ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে ব্যান হয়ে গেলে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৪ সালে ড্রাগ টেস্টে ফেল করে বিশ্বকাপ থেকেও নির্বাসিত হন তিনি।
এর পরেই ১৯৯৭ সালে ঘোষণা করেন অবসর। শুরু করেন কোচিং। কিন্তু ১৯৯৯ এবং ২০০০ সালে হৃদরোগের ও শ্বাসকষ্টের সমস্যার জন্য তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় একাধিক বার। ২০০৪ সালে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মাত্রাতিরিক্ত মাদক নেওয়ার ফলেই এমন অবস্থা হয়।
সব মিলিয়ে বিতর্ক আজীবন সঙ্গী হয়েছে তাঁর। কখনও ড্রাগ কখনও বা বামপন্থী রাষ্ট্রপতির পক্ষ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য। পাশাপাশি মদ্যপানে মাত্রাছাড়া আসক্তি ধীরে ধীরে অসুস্থও করে দেয় তাঁকে। ওজনও বাড়ে অনেকটা।
এর পরে মারাদোনার দু-দু’টি গ্যাস্ট্রিক বাইপাস অপারেশন হয়, তাঁর ওজন কমানোর জন্য এবং মাদক নেওয়ার ফলে শারীরিক ক্ষতির চিকিতসার জন্য। অস্ত্রোপচার যে শুরু হল, তা যেন আর কখনওই থামেনি। তার মধ্যেও ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার জাতীয় দলেরও কোচ ছিলেন তিনি।
এ বছরেও জানুয়ারি মাসে পাকস্থলীতে রক্তপাত হওয়ায় অস্ত্রোপচার করতে হয় তাঁর। জুলাই মাসে হয় হাঁটুতে অস্ত্রোপচার। এর পরেই খবর আসে তিন সপ্তাহ আগে, মারাদোনার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। তারও অস্ত্রোপচার হয় সফলভাবে। তার পরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এক ক্লিনিকে। সেখানে তাঁর অ্যালকোহল আসক্তি দূর করার চিকিৎসা চলছিল। সেখান থেকে ১১ নভেম্বর বাড়িও ফেরেন মারাদোনা।
তার ঠিক দু’সপ্তাহের মাথায় বিশ্ব-ফুটবলকে শূন্য করে দিয়ে শূন্যে পাড়ি দিলেন ফুটবলের রাজপুত্র।