
ভোটের দুপুরে বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে চলে গেলেন গতবারের তৃণমূল সাংসদ তথা এ বার যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনুপম হাজরা। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম সেরে কেষ্টকাকার সঙ্গে জমিয়ে লাঞ্চ সারলেন তিনি।
হাফহাতা পাঞ্জাবি পরে অনুব্রত। বুকের বাঁদিকে তৃণমূলের সিম্বল। আর গাঢ় নীল রঙের হাফহাতা টি-শার্ট গায়ে অনুপমের গলায় পদ্মফুলের উত্তরীয়। গপ্প করলেন। চলল হাসি ঠাট্টা। তারপর ডাল, পোস্ত আর দই মাছ দিয়ে পেট পুরে ভাত খেলেন দু’জনে। বোলপুরে অনুব্রতর নিচুপট্টির বাড়িতে তৈরি হল গণতন্ত্রের ফ্রেম।
সৌজন্য সাক্ষাৎ বললেও যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থীর তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে জল্পনা। অনুপমের যাওয়া নিয়ে নজরবন্দি অনুব্রত বলেন, “এই তো সবাই বলে আমি ত্রাস! দেখুন, বিজেপি-র প্রার্থী এসে খাওয়া-দাওয়া করল। কী সুন্দর গণতন্ত্র।” অনুপম বোকামো করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, “ওঁকে এ বারও প্রার্থী করতাম।”
কেষ্ট মণ্ডলের এমন কথা শুনে অনেকেই বলছেন, তাহলে কি অনুপম আবার পুরনো শিবিরে ফিরতে চাইছেন? মন টিকছে না বিজেপি-তে? এর মধ্যেই অনুপম ‘বিজেপি কর্মীরা সব অপদার্থ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে আলোচনাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভোটের দিন যখন বিজেপি অভিযোগ করছে নানুর, নলহাটি, মহম্মদবাজার-সহ বীরভূমের একাধিক জায়গায় অনুব্রতর বাহিনীর হাতে তাদের কর্মীরা আক্রান্ত, তখন দলের প্রার্থী কি না তাঁর সঙ্গে সৌজন্য লাঞ্চ করছেন! এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে গুঞ্জন। তবে অনেকে আবার বলছেন, এ সব কৌশল। অনুপম আসলে সবটা ঘেঁটে দিতে চাইছেন। যা করেছেন গত কয়েক বছর ধরে।
বছরখানেক বনিবনা ছিল। তারপর সব চুকে গিয়ে গিয়েছিল। কখনও অনুব্রত মণ্ডলের নাম না করে আক্রমণ করেছেন, তো কখনও গোটা তৃণমূল দলকেই আক্রমণ করেছেন। চোদ্দর ভোটে জিতে প্রথমবার সংসদের মুখ দেখেছিলেন। তরুণ এই সাংসদকে নিয়ে উদ্দীপনাও ছিল শাসক দলে। কিন্তু এমন সব কাণ্ড করে বসেন অনুপম যে, ষোলর ভোটের সময় বীরভূম জেলা তৃণমূল সিদ্ধান্ত নেয় তাঁকে প্রচারেই ডাকা হবে না। যত সময় এগিয়েছে তত তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় অনুপমের। কয়েক মাস আগে তো অনুপমকে ‘পাগল-ছাগল’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন কেষ্ট। শেষমেশ বহিষ্কার।
তারপরের ঘটনা সবার জানা। অভিন্ন হৃদয় বন্ধু সৌমিত্র খান বিজেপি-তে যাওয়ার পরই অনুপম পা বাড়ান মুকুল রায়ের বাড়ির দিকে। ভোট ঘোষণার আগে পর্যন্ত যোগ দেননি। পাছে মামলা খেতে হয়। মুকুল সে কথা প্রকাশ্যে জানিয়েও দেন। স্পষ্ট করে বলেন, “অনুপম আছে আমার কাছে। প্রশাসন কমিশনের আওতায় গেলেই যোগ দেবে ও।”
হয়তো সত্যিই সৌজন্য দেখাতেই গিয়েছিলেন অনুপম। কিন্তু বাংলার রাজনীতির যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে অনেকেই গোটা ব্যাপারটাকে সে চোখে দেখছেন না।