Latest News

প্রয়াত আং রিটা শেরপা, ১০ বার এভারেস্ট ছুঁয়েছেন, ৩ দশক ধরে লড়েছেন হিমালয় রক্ষায়

দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১০ বার অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া এভারেস্ট আরোহণ করার পালক ছিল তাঁর মুকুটে। তুষারাবৃত পাহাড়ি পথে তাঁর দক্ষ ও ক্ষিপ্র চলাচল ছিল অতিমানবিক। তাই লোকমুখেই তাঁর নাম হয়ে গেছিল, ‘তুষারচিতা’। বংশপরিচয় ও পেশায় একজন শেরপা হলেও, তিনি আসলে ছিলেন এক প্রতিষ্ঠানসম। হিমালয়ের মানুষের গর্ব ছিলেন তিনি। আজ, সোমবার ৭২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। আং রিটা শেরপা। নেপালের পর্বতারোহণ ইতিহাসের একটা অধ্যায় সমাপন হল যেন।

আং রিটা শেরপার প্রতিবেশী মিংমা শেরপা জানিয়েছেন, আজ সকাল ১০টা চল্লিশে কাঠমাণ্ডুর জোরপাতির বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যু সংবাদে শোকপ্রকাশ করেছেন অনেকে।

১৯৪৮ সালে পূর্ব নেপালের ইল্লাজাং গ্রামে জন্ম আং রিটার। প্রত্যন্ত, ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা আং রিটা খুব ছোট বয়স থেকেই পেটের টানে পাহাড়ে মালবাহক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এসবের মধ্যে অবশ্য পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের লিঙ্কন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘রিক্রিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম’ বিষয়ে স্নাতক হন তিনি। ন’মাস আমেরিকার একটি জাতীয় উদ্যানে কাজও করেন।

এর পরেই নেপালে এসে যোগ দেন নিজের পারিবারিক পেশায়, শেরপা হিসেবে। তবে আং রিটা কখনওই কেবল একজন ‘শেরপা’ ছিলেন না, শুধুই অভিযানের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করার মধ্যে নিজেকে আটকে রাখেননি। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার মানুষজনের ভাল থাকা তাঁকে ভাবিয়ে ছিল। ভাবিয়েছিল, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের নিবিড়তা কতটা জরুরি।

সে কারণেই নন-প্রফিট সংস্থা ‘মাউন্টেন ইনস্টিটিউট’ গড়েছিলেন আং রিটা।  ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বে একটি অভিযান আয়োজিত হয় মাকালুর বরুণ ন্যাশনাল পার্কে। সংলগ্ন এলাকার মানুষদের নিয়ে তিনি একটি অভিনব উদ্যোগ নেন, যেখানে মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হয় প্রকৃতিকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে প্রকৃতি নিয়ে এতটাও বেশি সচেতনতা বা আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। কিন্তু দূরদর্শী আং রিটা সে সময় থেকেই বুঝেছিলেন, পাহাড়ি মানুষদের রক্ষা করতে হলে আগে পাহাড়কে রক্ষা করতে হবে।

২০১১ সালে তিনি ‘স্যার এডমন্ড হিলারি মাউন্টেন লিগ্যাসি মেডেল’ পান হিমালয়ের ইকোলজিকে লক্ষা করার এক অক্লান্ত সৈনিক হিসেবে। আর এসবের পাশাপাশিই চলতে থাকে এভারেস্ট অভিযান। কারণ তুষারপথের প্রতিকূলতা পার করে শীর্ষ ছোঁয়ার লড়াইয়ের নেশা তো তাঁর রক্তে! ১০ বার এভারেস্ট ছুঁয়ে ফেলেন, কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই।

এই চরম সাফল্যের জন্যই সুপরিচিত ও জনপ্রিয় তিনি। ১০ বার অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া এভারেস্টের শীর্ষ ছোঁয়া তো মুখের কথা নয়! কিন্তু এই চোখধাঁধানো সাফল্যের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে, সাগরমাথার প্রকৃতিকে রক্ষা করতে সেই কবে থেকে লড়ে চলেছেন তিনি। ইতিহাসে তো বটেই, নেপাল-হিমালয়ের ভূগোলের পাতাতেও তাই তাঁর অবদান অপরিসীম।

You might also like