
নেপালের বাসিন্দা দীপক যোশীর ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। গত ৪০ বছর ধরে মামলার ফাইল নিয়ে নিম্ন আদালত থেকে জেলা আদালত আর জেলা আদালত থেকে হাইকোর্টের এজলাসে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। সুবিচার পাননি। সুবিচার দূরের কথা, সেভাবে কোনও শুনানিই হয়নি। বিচারাধীন বন্দি হয়ে থেকে গেছেন। সুদীর্ঘ চারটে দশক ধরে মামলার বিচার প্রক্রিয়া থমকে। আর এই এতগুলো দীর্ঘ বছর ধরে সংশোধনাগারে পড়ে আছেন তিনি।
তবু খেলা ঘুরল। বিচারের বাণীর কান্না থামল। ‘বড়লোকদের তামাশা’ দেখার সৌভাগ্য হল বৃদ্ধের। মাঝে কেবল পেরিয়ে গেছে চল্লিশটা বছর, একটা মানুষের জীবন, যৌবন, পরিবার, স্মৃতি– সবকিছু।
আজ দীপক যোশীর দিকে হঠাৎই নজর পড়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিভিএন রাধাকৃষ্ণণের। তিনি নিজেই কৌতূহলে উল্টে দেখেন ফাইল। তাতেই অবাক হয়ে যান তিনি। ৪০ বছর ধরে তাঁর মামলার শুনানিই হয়নি! চল্লিশ বছর আগে নিম্ন আদালত তাঁর যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেছিল। তার পর থেকেই গারদবন্দি তিনি।
৪০ বছরের বন্দিদশায় সমস্ত স্মৃতি যেন তাঁর কাছে আবছা হয়ে গিয়েছে। তিনি মনে করতে পারেন না তাঁর আসল বাড়ি কোথায়। তবে নথি ঘেঁটে জানা গিয়েছে, তিনি নেপালের বাসিন্দা ছিলেন। কোনও এক কাজে দার্জিলিংয়ে এসেছিলেন ১৯৮১ সালে, সেখানেই খুনের দায়ে বন্দি হয়ে যান। ২০০৫ সালে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে দমদম সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। ৩৫ বছরের যুবক আজ ৭৫ বছরের বৃদ্ধ হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সংশোধনাগারে থেকে ভুলে গিয়েছেন সবকিছু। নিজের নাম ছাড়া আর কিছু বলতে পারছেন না।
বিচারপতির নির্দেশে ইতিমধ্যেই নেপালের রাষ্ট্রদূতকে ওই ব্যক্তির ঠিকানা খুঁজে বার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি যাতে সুবিচার পান এবং পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারেন, সে জন্য আজ হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলাও রুজু করেছে।
সুদিন কি তবে এল দীপকের জীবনে? আর কয়েক দিন পরেই হয়তো উত্তর মিলবে।