
তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
সুনসান একটা দ্বীপ। জনমনিষ্যি নেই। নেই কোনও পশুপাখিও। চার পাশে জলের মধ্যে বিচ্ছিন্ন ভাবে ভাসছে এক টুকরো নির্জন ভূখণ্ড। গাছপালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে, আর চোখে পড়ে কিছু পরিত্যক্ত বাড়িঘর। শুনে মনে হয়, বেড়াতে যাওয়ার জন্য বেশ সুন্দর জায়গা। কিন্তু গেলেই ভয়ে বুক ছ্যাঁৎ করে ওঠে দৃশ্য দেখলে। গোটা দ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শুধু পুতুল আর পুতুল! নানা রকমের পুতুলে ছেয়ে আছে গোটা একটা দ্বীপ!
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে ১৭ মাইল দক্ষিণে জোকিমিলকো এলাকায় অবস্থিত এই দ্বীপের স্থানীয় নাম ‘ইলসা ডে লাস মিউনিকাস’। যার অর্থ, পুতুলের দ্বীপ। শোনা যায়, প্রায় একশো বছর আগের একটি অস্বাভাবিক ঘটনার পর থেকেই এভাবে পুতুল জমতে শুরু করে দ্বীপে। বাড়তে থাকে রহস্য।
ঠিক কী হয়েছিল?
শোনা যায়, দ্বীপটি ছিল স্যাঁৎস্যাঁতে। অন্ধকারে আচ্ছন্ন। মানুষজন বাস করতেন বেশ কিছু। একশো বছর আগে, কোনও এক শীতের দুপুরে তিনটি মেক্সিকান শিশু পুতুল নিয়ে খেলা করছিল এই দ্বীপেই। আর খেলাচ্ছলেই নাকি তারা পুতুলের বিয়ে দেয়। আচমকা, খেলতে খেলতেই ওই তিন শিশুর মধ্যে এক জন উধাও হয়ে যায় জঙ্গলে। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কয়েক দিন পরে শিশুটির ফুলে ওঠা মৃতদেহ ভেসে ওঠে দ্বীপেরই একটি খালের জলে। লোকমুখে প্রচারিত, এর পর থেকেই নানা রকম অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে শুরু করে দ্বীপে। মানুষজন দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেন।
এর পরে, ১৯৫০ সালে ঘটে নতুন এক ঘটনা। ডন জুলিয়ান সানতানা নামের এক সন্ন্যাসী এই নির্জন দ্বীপটিকে বেছে নেন ধ্যান করার জন্য। শোনা যায়, তাঁর কাছেই নাকি সেই মৃত শিশুর আত্মা আবদার করেছিল, দ্বীপে অনেক পুতুল নিয়ে আসতে! পুতুল খেলতে খেলতে আচমকা হারিয়ে যাওয়া ওই শিশুর অতৃপ্ত আত্মার কথা ভেবেই দ্বীপটিতে পুতুল আনার সিদ্ধান্ত নেন ডন।
তবে যেমন-তেমন সাধারণ পুতুল নয়। শিশুটির আত্মা নাকি চেয়ে বসে বীভৎস সব দেখতে পুতুল। যেগুলো দেখলে মনে হবে, খুব কষ্ট পেয়ে প্রাণ হারানো শিশু। ঠিক যেমন করে বীভৎস চেহারা নিয়ে ভেসে উঠেছিল ওই শিশুর নিজের দেহ! ওই শিশুর আত্মার অনুরোধেই এর পরে জুলিয়ান বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া পুতুল সংগ্রহ করতে থাকেন। সেগুলিকে পাথর দিয়ে আরও নষ্ট করেন। সেগুলিই দ্বীপের চার পাশে টাঙিয়ে দেন তিনি। এতে নাকি শিশুটির আত্মা খুশি হয়। আর সেই থেকে, এভাবেই এই দ্বীপটি গড়ে ওঠে পুতুলের দ্বীপ হিসেবে। লোকমুখে ঘুরতে থাকে ভয়ঙ্কর গল্পকথা।
মানুষের মধ্যে প্রচলিত এই সব ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য মেক্সিকান সরকার ১৯৯০ সালে এই দ্বীপটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যটন অঞ্চল বানানোর উদ্যোগ নেয়। ‘ন্যাশনাল হেরিটেজ’ বলে ঘোষণাও করে দ্বীপটিকে। কিন্তু পর্যটকেরা ওই রকম রাশি রাশি পুতুল দেখে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বলে জানান। কমতে থাকে পর্যটকদের সংখ্যা। সারা বছরে ২০-৩০ জনের বেশি পর্যটক এমুখো হন না। ফলে সরকারি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
ডন জুলিয়ান কিন্তু একাই থেকে গিয়েছিলেন দ্বীপে। পুতুল জমাতে থেকেছেন দ্বীপ জুড়ে। কিন্তু ২০০১ সালের ২১ এপ্রিল ঘটে যায় আরও একটি রহস্যময় ঘটনা। দ্বীপের একটি খালে মাছ ধরছিলেন ডন। পরে শোনা যায়, ওই খালেই নাকি দেহ মিলেছিল ১০০ বছর আগের সেই শিশুর। সেই দিন মাছ ধরার সময়ে আচমকাই ডন জুলিয়ান বলেন, জলের নীচ থেকে কেউ এক জন তাঁকে ডাকছে। যেতেই হবে তাঁকে। এর কিছু দিন পরেই ডন জুলিয়ানের মৃতদেহ সেই খাল থেকে পাওয়া যায়। ঘটনার সময়ে ডনের ভাই ওই দ্বীপে ছিলেন। দাদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনিই ঘটনার কথা জানান পুলিশকে।
সমাধান হয়নি রহস্যের। ওভাবেই রয়ে গিয়েছে দ্বীপ। আশ্চর্য এই দ্বীপ ভর্তি হয়ে রয়েছে পুতুলে। গাছের ডালে ঝুলছে পুতুল, পরিত্যক্ত ঘরের দেওয়ালে ঝুলছে পুতুল। যেদিকে চোখ যায় সে দিকে শুধু পুতুল আর পুতুল। কিন্তু এই পুতুলগুলোর আদর নেই। বরং তাদের নিয়ে ভয় আর আতঙ্কই আজও ছেয়ে রয়েছে মেক্সিকোবাসীর মনে।
আরও পড়ুন…
https://www.four.suk.1wp.in/students-are-on-scary-roads-for-going-to-school-allover-the-world/?fbclid=IwAR2u24wQ7PRaQF2AEMHpKNpUpUQEtXYiXdFRq2OP1dHUJqDpxVLJ8dZKlC0