
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কদিন আগের কথা। বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতের স্ত্রী ও দুই সহযোগীর ১১ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেদিন এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহর উদ্দেশে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিয়েছিলেন সঞ্জয় (Amit Shah-Sanjay Raut)।
শনিবাসরীয় সকালে দেখা গেল সেই সঞ্জয় হঠাৎ হিন্দিতে গলা মিলিয়েছেন অমিত শাহর সঙ্গে (Amit Shah-Sanjay Raut)। হিন্দি গানে অবশ্য নয়। এক প্রকার হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান প্রসঙ্গে তালে তাল ঠুকেছেন সেনা মুখপত্রের সম্পাদক।
রবি ঠাকুরের বইয়ের চেয়েও দামি মমতার ‘কবিতাবিতান’! স্ক্রিনশট দেখিয়ে তোপ শ্রীলেখার
হিন্দি ভাষা সর্বজনীন করার ব্যাপারে অমিত শাহর মন্তব্য নিয়ে ইদানীং দেশজুড়ে বিতর্ক চলছে। রান্নার গ্যাসের দাম হাজার পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাকতালীয় ভাবে তাতে আরও হাওয়া লেগেছে। তাতে গ্যাসের গন্ধ হয়তো বা কিছুটা চাপা পড়েছে। সে যাক। অমিত শাহর ওই মন্তব্যের পর দক্ষিণের আঞ্চলিক দলগুলি তীব্র সমালোচনায় বিঁধতে শুরু করেছে দিল্লিকে। এদিন সেই প্রসঙ্গেই শাহর পাশে দাঁড়িয়েছেন সঞ্জয়। রাউত বলেছেন, “হিন্দি এমন একটি ভাষা যা সারা দেশে চলে। তাই এই ভাষাকে কাজের ক্ষেত্রে গ্রহণ করাই উচিত।”
‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’ সঙ্ঘের বহু পুরনো স্লোগান। অমিত শাহের ওই কথা শুনে অনেকেই বলেছিলেন, নাগপুরের অ্যাজেন্ডা নিয়ে হিন্দি আগ্রাসনে নেমেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিস্তর সমালোচনাও হয়েছিল। এও বলা হয়েছিল, ইংরাজির পরিবর্তে হিন্দিকেই সামগ্রিক ভাবে ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার সময় এসেছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, ভারতের মতো এত ভাষাভাষির দেশে কখনওই একটি ভাষাকে জাতীয় ভাষা বা রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। জোর করে কখনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া যায় না। এইরকম বৈচিত্রপূর্ণ দেশে একটি ভাষাকে যদি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয় তাহলে একদিকে যেমন আঞ্চলিক ভাষাগুলির প্রতি অবমাননা করা হবে তেমন বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের মৌলিক মূল্যবোধও আঘাতপ্রাপ্ত হবে। তাঁদের মতে, এটা সম্ভবত অমিত শাহও বোঝেন। হতে পারে এ হল শুধু দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা। মোদী জমানায় ঘরোয়া অর্থনীতি যখন হামাগুড়ি দিচ্ছে, তখন এ ধরনের জাতীয়তাবাদী সুড়সুড়ি দিয়ে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানো চলছে।
অমিত শাহ হিন্দির প্রসঙ্গ উত্থাপন করার পরই চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রেও হিন্দি ভাষার উপযোগিতা তুলে ধরা হয়েছে গেরুয়া শিবিরের তরফে। তার পাল্টা তামিলনাড়ুর ডিএমকে-এর এক মন্ত্রী বলেছিলেন, চেন্নাইতে এখন যাঁরা পানিপুরী (ফুচকা) বিক্রি করে তাঁরা তো হিন্দিতেই কথা বলেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, হিন্দি যদি চাকরি পাওয়ার মানদণ্ড হয় তাহলে হিন্দিভাষীরা কেন উত্তর, পশ্চিম ভারত থেকে দক্ষিণ ভারতের শহরগুলিতে এসে ফুচকা বিক্রি করছেন।
তবে শিবসেনা মুখপাত্রের এই বক্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা উস্কে দিয়েছে। কারণ শিবসেনার রাজনৈতিক পুঁজির অন্যতম হল মারাঠা ভাষার প্রতি স্বাভিমান। তারপরেও সঞ্জয় রাউতের এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত অনেকের। তাও আবার ইডি ভুলে হিন্দি!