
রফিকুল জামাদার
ডিএ (Dearness Allowance) নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান মোটামুটি ভাবে স্পষ্ট। আদালতে ধাক্কা খাওয়ার পরেও নবান্নকে (Nabanna) এখনও নড়ানো যায়নি। অথবা এও বলা যেতে পারে যে, তীব্র আর্থিক সংকটের কারণে নবান্নর সামনে নড়াচড়া করার বিশেষ পরিসর নেই। এহেন পরিস্থিতিতে সোমবার, সরকারি ভাবে ছুটির দিনে নবান্নে হঠাৎই আবির্ভাব ঘটল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রর (Amit Mitra)।
কেন? সোমবার দুপুরে নবান্নে পৌঁছন প্রবীণ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। তারপর সোজা চলে যান ১২ তলায় রাজ্যের অর্থসচিব মনোজ পন্থের ঘরে। সূত্রের দাবি, মূলত রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের বকেয়া ডিএ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কর্মচারিদের আশান্বিত হওয়ার বিশেষ কারণ নেই।
রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের বকেয়া ডিএ তিন মাসের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের স্পষ্ট রায় ছিল, ডিএ সরকারের দয়ার দান নয়, তা হল কর্মচারীদের অধিকার। মোদ্দা কথায়, ১৯ অগস্টের মধ্যে বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু হাইকোর্টের ওই রায় পুনর্বিবেচনার দাবি করে আবেদন করেছিল রাজ্য সরকার। ২২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। উল্টে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছিল, ৪ নভেম্বরের মধ্যে মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে জানাতে হবে, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি হবে না?
নবান্ন সূত্রে খবর, হাইকোর্টে মুখ্যসচিব ও অর্থসচিব কী জানাবেন, তার বয়ান তৈরি নিয়ে আলোচনা করতেই এদিন নবান্নে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। ৪ নভেম্বরের মধ্যে মুখ্যসচিব হরিকষ্ণ দ্বিবেদী ও অর্থসচিব মনোজ পন্থ আদালতে তাঁদের বয়ান জানানোর পর এ ব্যাপারে ৯ তারিখ শুনানি হওয়ার কথা।
হাইকোর্টে ধাক্কা খেলে সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ব্যাপারেও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আবার কর্মচারী সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করে রেখেছে। যাতে সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলে তাঁদের যেন ডাকা হয়।
এদিনের বৈঠক নিয়ে জানতে চেয়ে অর্থসচিব মনোজ পন্থকে ফোন করা হয়েছিল। তাঁকে টেক্সট মেসেজও করা হয়। তবে তিনি কোনও উত্তর দেননি। অর্থসচিব কিছু জানালে তা প্রতিবেদনে আপডেট করা হবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ডিএ নিয়ে খুব শিগগির নিষ্পত্তির আশা নেই। কারণ, কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থের কথা যথাযথ ভাবে বিচার করে তাঁদের বকেয়া মেটানোর যে রায় দিয়েছে তা আদর্শ গত ভাবে সঠিক। কিন্তু বিপরীতে এও সত্য যে ডিএ মেটাতে গেলে যে বিপুল অর্থ লাগবে তা রাজ্যের নেই। এ ব্যাপারে ঋণ নেওয়ার সুযোগও রাজ্যের নেই। এমনকি বাংলায় যদি তৃণমূল সরকারের পরিবর্তে বিজেপি সরকার গঠন করে, তা হলেও তা মুশকিল। কারণ, কেন্দ্র সরকারও নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনও একটি রাজ্যকে বিশেষ সুবিধা দিতে পারবে না। ঠিক যে কারণে দ্বিতীয় ইউপিএ জমানায় তৃণমূল শরিক দল হলেও মনমোহন সরকার বাংলার ঋণ পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারেনি। ঠিক সেই কারণে বাংলার কর্মচারীদের ডিএ-র বন্দোবস্ত করতে কেন্দ্রও রাতারাতি ব্যবস্থা নিতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কোনও একটি রাজ্যকে এভাবে সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়।
ফলে বিষয়টির কবে নিষ্পত্তি হবে, তা এক প্রকার অনিশ্চিত। আপাতত স্বল্প মেয়াদে শুধু এটুকুই দেখার যে নবান্ন তথা মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবের জবাবে হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হয় কিনা, বা উচ্চ আদালত কী নির্দেশ দেয়।