Latest News

মুলায়মের শ্রাদ্ধের আগেই চাচা-ভাতিজার লড়াই শুরু, অখিলেশ-শিবপালের নয়া বিবাদ কী নিয়ে

দ্য ওয়াল ব্যুরো: তাঁদের সম্পর্ক পাহাড়ি আবহাওয়ার মতো। এই রোদ, এই বৃষ্টি। মুলায়ম সিং যাদব (Mulayam Singh Yadav) প্রয়াত হয়েছে আজ আট দিন হল। হাসপাতালে মৃত্যুশয্যার পাশে এবং অন্ত্যেষ্টির সময় চাচা শিবপালকে (Sivpal) দেখা গিয়েছে ভাতিজা অখিলেশের (Akhilesh Yadav) পাশে পাশে। এমনকী সোমবার দুপুরে চাচা-ভাতিজা এবং অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল পারিবারিক বিমানে চেপে হরিদ্বারের গঙ্গায় মুলায়মের চিতাভস্ম ভাসিয়ে দিয়ে এসেছেন। সেখান থেকে সন্ধ্যায় এটাওয়ার পৈত্রিক বাড়িতে ফেরার পর থেকে দু’জনের কথা বন্ধ।

বাড়ি ফিরে শিবপাল জানতে পারেন, গোলা গোকর্ণনাথ বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রচারে সমাজবাদী পার্টির স্টার ক্যাম্পেইনারদের তালিকায় ভাতিজা অখিলেশ তাঁকে রাখেননি। গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন দলের সভাপতি অখিলেশের পাঠানো তালিকা অনুমোদন করেছে। অর্থাৎ অখিলেশ বুঝিয়ে দিয়েছেন, কাকা শিবপালকে তিনি দলে ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং বাবার শ্রাদ্ধশান্তির কাজ একসঙ্গে করলেও তাঁকে নেতাগিরি ফলানোর সুযোগ দেবেন না। বস্তুত, অখিলেশ তাঁকে দল ছেড়ে যাওয়ার বার্তাও দিচ্ছেন বারে বারে।

মুলায়মের জীবদ্দশাতেই তাঁর পরিবার বারে বারে খবরের শিরোনাম হয়েছে সাংসারিক বিবাদ ঘিরে। সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তাঁর পুত্র এবং পুত্রবধূ বারে বারে অভিযোগ করেন যে, নেতাজি অর্থাৎ মুলায়মকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন অখিলেশ। মুলায়মের চিকিৎসার ব্যাপারেও শেষ কথা বলেছেন তিনি। অসুস্থ মুলায়মকে দেখতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আগে হাসপাতাল অখিলেশের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Image - মুলায়মের শ্রাদ্ধের আগেই চাচা-ভাতিজার লড়াই শুরু, অখিলেশ-শিবপালের নয়া বিবাদ কী নিয়ে
মুলায়মের চিতাভস্ম গঙ্গায় ভাসানোর আগে হরিদ্বারের ঘাটে অখিলেশ, শিবপালের একত্রে মন্ত্রপাঠ। রয়েছেন অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল।

শিবপাল-অখিলেশ লড়াইয়ের সূত্রপাত সমাজবাদী পার্টির শীর্ষপদটি নিয়ে। ২০১৭-তে বাবার সঙ্গে আইনি লড়াই করে পদটি ছিনিয়ে নেন অখিলেশ। কারণ, শিবপাল দলের একাংশের সঙ্গে যোগসাজস করে ওই পদে বসতে মুলায়মকে একপ্রকার রাজি করিয়ে ফেলেছিলেন। কাকার পরিকল্পনা জানতে পেরে পাল্টা থাবা দেন ভাইপো।

তা নিয়েই শিবপালের সঙ্গে বিরোধের সূত্রপাত। মুলায়মের এই ভাইয়ের দাবি ছিল, দাদার পর তাঁরই দলের নেতৃত্ব পাওয়া উচিত। অখিলেশের বিরুদ্ধে দাদাকে অপহরণের অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ভাইপোর সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে না উঠে তিনি প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি নামে দল গড়ে আলাদা হয়ে যান। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি।

অস্ত্রে আত্মনির্ভর: রফতানির ৩৫ হাজার কোটির বরাত দেশের হাতে

এ বছর বিধানসভা ভোটের আগে ফের ভাতিজার দ্বারস্থ হন চাচা। ভুল স্বীকার এবং অনেকটা আত্মসমর্পণের কায়দায় অখিলেশকে নেতা মেনে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে প্রার্থী হয়ে নিজের আসনটি রক্ষা করেন শিবপাল।

কিন্তু ওই পর্যন্তই। দলের মূল স্রোতে কাকাকে আর ঢুকতে দিতে চান না অখিলেশ। মুলায়মের কথায় শিবপালকে সমাজবাদী পার্টির প্রতীকে লড়াইয়ের অনুমতি দিলেও দলীয় সূত্রে খবর, কাকাকে তিনি বিজেপির চর মনে করেন। এ নিয়ে যাদব পরিবারে একাধিকবার অশান্তি হয়েছে। শিবপালের পরামর্শেই মুলায়মের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলের বউ অপর্ণা ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দেয় বলে অভিযোগ অখিলেশের। তবে বাবার মুখ চেয়ে ভোটের আগে তেমন একটা মুখ খোলেলনি তিনি।

ভোট মিটতেই তিনি শিবপালকে ছেঁটে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছেন। প্রথম পদক্ষেপ ছিল নির্বাচনের পর সমাজবাদী পার্টির পরিষদীয় দলের বৈঠক। সেই বৈঠকে অখিলেশকে বিরোধী দলনেতা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ সেই বৈঠকে ডাকা পাননি শিবপাল।

অখিলেশের উপর পাল্টা চাপ তৈরি করতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকেন। যোগীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। বদলা নিতে অখিলেশ বিধানসভায় দলের বক্তা তালিকা শিবপালকে বাদ দিয়ে দেন। বিধানসভার কোনও কমিটিতেও কাকাকে রাখেননি তিনি।

সমাজবাদী পার্টি সূত্রের খবর, অখিলেশের এই সব পদক্ষেপ তাঁর আগাম পরিকল্পনারই অংশ। মুলায়ম শয্যাশায়ী হওয়ার পর থেকেই তিনি নিজের মতো করে দলের টিম সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর পয়লা কৌশল হল, তিনি বাদে মুলায়মের রক্তের সম্পর্কের কেউ যেন দলের ব্যাপারে নাক না গলায় তা নিশ্চিত করা।

শিবপাল সেই তালিকায় সবচেয়ে চেনা এবং বিপজ্জনক মানুষ। অখিলেশ চান, কাকা এখনই বিজেপির হাত ধরে চলে যান। কারণ দলে থেকে তিনি অনেক বেশি সমস্যা করবেন। উপ নির্বাচনের স্টার ক্যাম্পেইনারের তালিকায় নাম না রাখা তেমনই একটি প্রতীকী সিদ্ধান্ত, যার আসল বার্তা ‘দূর হঠো’।

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন বার্তা দেওয়া হল শিবপালকে। হালে আরও একটি উপনির্বাচনে দলের প্রচারে ডাক পাননি মুলায়মের ভাই। নেতাজি তখন বেঁচে।

You might also like