
এরই মধ্যে সেই ভরা বিমানবন্দরে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে আইসিস। নিহত পেরিয়েছে শতাধিক, আহত বহু। রক্তজলে ভাসছে মানুষের দেহ, হাহাকারে বিদীর্ণ চারপাশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি কেবলই আরও খারাপ হচ্ছে। খাবার নেই, জল নেই, নেই কোনও রকম নাগরিক পরিষেবা। দুর্দশার চরমে পৌঁছেছেন সকলে।এক আফগান নহিলা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর ভিড়ে থিকথিক করছে। প্রাণের ভয়ে, খালি পেটে সিঁটিয়ে আছেন সকলে। মিলছে না জলও। বিমানবন্দরে এক বোতল জলের দাম বেড়ে হয়েছে চল্লিশ ডলার, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার টাকা! এক প্লেট ভাত মিলছে ১০০ ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকায়! তার ওপর আফগান মুদ্রায় নয়, দাম দিতে হচ্ছে মার্কিন ডলারেই। সব মিলিয়ে কঠিন অবস্থায় হাজার হাজার মানুষ।
সোশ্যাল মিডিয়া কিছু ভিডিওয় দেখা গেছে, সেনা জওয়ানরা এগিয়ে এসে জল খাওয়াচ্ছেন শিশুদের। নিজেদের কাছে থাকা পানীয় জলই দিচ্ছেন তাঁরা। তবে তাতে কি আর হাজার মানুষের সমস্যা মেটে!বৃহস্পতিবার রাতে বিস্ফোরণের পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। নিরাপত্তা আটোসাঁটো হয়েছে, তবু বিমানবন্দরে ভিড় কমছে না। সতর্কতা জারি হয়েছে ফের হতে পারে বিস্ফোরণ, তবু পিছু হটছে না মানুষ। প্রাণের ভয়ে দেশ ছাড়ার তাড়নাই সবচেয়ে প্রকট এই মুহূর্তে।
জানা গেছে, আমেরিকা যাওয়ার পাসপোর্ট-ভিসা রয়েছেন এমন প্রায় দেড় হাজার জন বিমানবন্দরে বাইরে আটকে রয়েছেন। আফগান নাগরিকদের উদ্ধারের পাশাপাশি তাঁদেরও দেশে ফেরানোর কথা।এ তো গেল বিমানবন্দরের কথা। তার বাইরেও গোটা আফগানিস্তানেই ভয়ানক দশা। খাবারের সংকট শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, প্রতি দুজন আফগানবাসীর মধ্যে একজন অভুক্ত থাকছেন। ২০ লক্ষ শিশু ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার। তাদের কাছে দ্রুত খাবার পৌঁছে দেওয়া দরকার।
কিন্তু তালিবানি শাসনের আবহে আতঙ্ক পার করে সে খাবার পৌঁছবেই বা কী করে, কী করেই বা স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি! এ উত্তর কারও কাছে নেই। বরং গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহ দেখে অনুমান, এ অবস্থা আরও খারাপ ছাড়া ভাল হবে না।ইতিমধ্যেই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে আইসিস। তালিবান তাদের নিন্দা করেছে। বিশ্বকূটনীতি মহলের কাছে এ নিন্দা গ্রহণযোগ্য হয়নি, কারণ এ হামলার পিছনে তালিবানের মদত আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন আফগানিস্তানের ভাগ্য কে লিখবে, কী লিখবে, সেটাই দেখার।