
সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ত্রিপুরায় সপ্তাহান্তের লকডাউন চালু হয়েছে। শনিবার বেলা বারোটা থেকে সোমবার ভোর ছটা পর্যন্ত পুরোপুরি জারি থাকছে কার্ফু। এখন ত্রিপুরায় মোট কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা ৫৬ হাজার ১৬৯। সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ৫৭৪ জনের। অ্যাকটিভ কেস ৫১৫২।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ রোগীই মিউট্যান্ড ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছেন। আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডক্টর তপন মজুমদার বলেন, “অন্য কিছু রাজ্যের মতোই ত্রিপুরাতেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত থাবা বিস্তার করছে। কমবয়সিদের মধ্যে এমনকি শিশুদের মধ্যেও সংক্রমণ মিলছে।”
জানা গেছে, কেরল, অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, ওড়িশা, ছত্তীসগড় এবং মণিপুর– গত কয়েক সপ্তাহে এই ছ’টি রাজ্যে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য ওই রাজ্যগুলিতে উচ্চ পর্যায়ের মেডিক্যাল টিম পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কোভিড নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রককে সাহায্য করবে ওই টিমগুলি।
তারা বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে খতিয়ে দেখবে সেখানে কোভিড নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষত টেস্টিং যথেষ্ট সংখ্যায় হচ্ছে কিনা, ঠিকমতো কনটেনমেন্ট জোন তৈরি করা হয়েছে কিনা, সেদিকে নজর দেবেন টিমের সদস্যরা। রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে কতগুলি বেড আছে, যথেষ্ট সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স, ভেন্টিলেটর, মেডিক্যাল অক্সিজেন ইত্যাদি আছে কিনা, সেদিকেও লক্ষ রাখা হবে। কীভাবে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ কমানো যায়, সে বিষয়েও পরামর্শ দেবেন টিমের সদস্যরা।
কয়েক দিন আগেই হু-র প্রধান তেদ্রোস আদহানম ঘেব্রেইসাস সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ভারতে প্রথম দেখা গিয়েছিল করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট। এখন অন্তত ৯৮টি দেশে ওই ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়েছে। কোনও কোনও দেশে বেশিরভাগ করোনা রোগীর শরীরে এই ভ্যারিয়ান্ট পাওয়া যাচ্ছে। আমরা অতিমহামারীর এক বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছি।
হু প্রধান বলেন, যে দেশগুলিতে টিকাকরণের হার কম, সেখানকার হাসপাতালগুলিতে ফের দেখা যাচ্ছে রোগীদের ভিড়। ঘেব্রেইসাসের মতে, “এই পরিস্থিতিতে কোনও দেশই নিরাপদ নয়।” হু-র বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, ক্রমাগত ডেল্টা ভাইরাসের অভিযোজন ঘটছে। বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে হু প্রধানের পরামর্শ, ডেল্টা ভাইরাসের কীরকম অভিযোজন হচ্ছে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সেইমতো ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঘেব্রেইসাসের মতে, কোনও দেশ দু’ভাবে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির মোকাবিলা করতে পারে। প্রথমত, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে মজবুত করে তুলতে হবে। নজরদারী আরও বাড়াতে হবে। এর পাশাপাশি বেশি টেস্টিং, দ্রুত কোভিড রোগীকে চিহ্নিতকরণ, রোগীকে আইসোলেশনে পাঠানো, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব রাখা নিশ্চিত করা ইত্যাদিও কোভিডকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, কোভিড সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য উপযুক্ত পোশাক, অক্সিজেন এবং ভ্যাকসিন যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রাখতে হবে।