
সরকারি ওই বিজ্ঞপ্তিতে হোম কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বাঁকুড়ার শিশু সুরক্ষা অফিসারকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কল্যাণী বাউরি ও তার তিন ভাইবোনকে যেন দায়িত্ব নিয়ে হোমে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং সুপারিন্টেন্ডেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, কল্যাণীর হোমের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সরকার নির্দেশ দিয়েছে, কল্যাণীদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি যেন ভাল করে খতিয়ে দেখা হয়। তার পারিবারিক অবস্থা নিয়েও ভাল করে খোঁজখবর নিয়ে ৫ অগস্টের মধ্যে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বাঁকুড়ার শিশু সুরক্ষা অফিসারকে।
কল্যাণীর কথা দ্য ওয়ালের মাধ্যমে জানার পরেই কল্যাণীকে সাহায্য করতে চেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল একাধিক সংস্থা। পরিচালক ও বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীও নিজের ফেসবুক পেজে কল্যাণীর ভিডিও শেয়ার করে, ঠিকানা চেয়ে লিখেছিলেন, তিনি পাশে থাকতে চান কল্যাণীর।
বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের বিসিন্দা গ্রামের বাসিন্দা কল্যাণী মাস ছয়েক আগে হারিয়েছিল মা পারুল বাউরিকে। বাবা আগেই প্রয়াত। নেই রেশন কার্ড, নেই আধার কার্ড। এই ভাবেই তিন ভাইবোনকে নিয়ে চরম কষ্টের সংসার কল্যাণীর। একচিলতে ঘরে বৃষ্টি পড়লেই জল পড়ে। বর্ষায় ভেজা বিছানায় রাত কাটায় তারা।
কল্যাণীর চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন আর পাঁচটা কিশোর-কিশোরীর মতোই। কিন্তু সংসারের লড়াইয়ে পিষে গেছে সব। তবু ভাইবোনদের নিয়ে তার বুকভরা আশা। সে চায় ভাইবোনদের মানুষ করতে, দাঁড় করাতে। কথাগুলি বলার সময় চোখের জল উপচে পড়ছিল তার। বলছিল, ভাইবোনদেরও খেলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু খিদের জ্বালায় আর খাবার জোগাড়ের তাড়নায় বিপন্ন তাদের শৈশব।
এই সবটা জানার পরে যে ভাবে বহু সংস্থা হাত বাড়িয়েছে সাহায্যের, পাশে থাকতে চেয়েছে কল্যাণীর লড়াইয়ের, তা প্রশংসনীয়। কলকাতা, বর্ধমান, জঙ্গিপুর– রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে একাধিক সংগঠন দ্য ওয়ালের ফেসবুক পেজেই জানান, তাঁরা কল্যাণীর ঠিকানায় সাহায্য পৌঁছে দেবেন। কিছু সংগঠন কল্যাণীর বাড়িতে সাহায্য-সামগ্রী পৌঁছেও দিয়ে আসে। দ্য ওয়ালের খবরের জেরে এবার সরকারি ভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করা হল তাদের।