
ডুয়ার্সের ক্যারন, মাঝেরডাবরি, জিতি সহ কয়েকটি চা বাগান এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন এই অসুর সম্প্রদায়। মাদারিহাটের পিংকি চৌপথি এলাকাতেও বাস করেন এই সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া কালকূট বন বস্তিতেও অসুর সম্প্রদায়ের কিছু মানুষরের খোঁজ মিলেছে। একসময় মুলত লোহা গলানোর কাজে পারদর্শী ছিলেন তাঁরা। বর্তমানে বিভিন্ন চা বাগানে কর্মরত। বন দফতরের চুক্তি ভিত্তিক কাজের সঙ্গেও যুক্ত আছেন অসুর সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। গোটা বাঙলা যখন শারদ উৎসবে মাতোয়ারা তখন ভারত ভুটান সীমান্তের ক্যারন চা বাগানই হোক বা আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া মাঝের ডাবরি চা বাগান, সর্বত্রই ঘরবন্দি থাকতেই দেখা যেত এই সম্প্রদায়ের মানুষকে। তাই হালফিলের এই পরিবর্তন রীতিমতো নজর কেড়েছে গোটা উত্তরবঙ্গের।
মাদারিহাটের পিংকি চৌপথির সাঞ্চারিও অসুর বলেন, “আমাদের বাবা মাকে কখনও দুর্গা পুজোয় আনন্দ করতে দেখিনি। আমরা কিন্তু দুর্গা পুজায় আনন্দ করতে চাই। তাই এখন আমরা নতুন জামাকাপড় কিনি। পুজো মণ্ডপে যাই। কারণ পৌরাণিক অসুরের সঙ্গে আমাদের যে কোনও সম্পর্ক নেই তা প্রমাণিত হয়েছে। এতদিন অসুর বলে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার পরিকল্পনা হয়েছিল।”
তবে অসুর সম্প্রদায়ের মানুষের দুর্গা পুজায় সামিল না হওয়ার সঙ্গে পুরাণ ও ইতিহাসের কোনও যোগ নেই বলে বিশ্বাস করেন বিভিন্ন জনজাতির গবেষকরা। গবেষক প্রমোদ নাথ বলেন, “ অসুর শূদ্র বংশের মানুষ, এটা ঠিক। এরা অনার্য। মুলত দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর মানুষ। কিন্তু পৌরাণিক অসুরের সাথে এই অসুরদের যোগাযোগের কোনও প্রমাণ নেই। বরং আর্য অনার্য লড়াইয়ের যে কাহিনি অবলম্বনে অনেক পৌরানিক গল্প রচিত হয়েছে, সেভাবেই দুর্গার হাতে বধ হওয়া অনার্য অসুরকে এই বাস্তবের অসুরদের আদিবংশ বলে কোথাও কোথাও বর্ণনা করা হয়ে থাকতে পারে। আর তার ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।”
তাঁর মতে এই কারণেই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষরা আগে দুর্গা পুজায় সামিল হতেন না। সেই ভ্রান্তি ভাঙছে এখন। আর সবার সঙ্গে তাঁরাও এখন মন্ডপমুখী।