দ্য ওয়াল ব্যুরো: পঞ্চাশ বছর আগে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা জমানার সে ছিল মাইলফলক পদক্ষেপ।
কিন্তু মঙ্গলবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝাতে চাইলেন, এ বার পর্যালোচনার সময় এসেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে যদি সত্যিই ঘুরে দাঁড়াতে হয় তা হলে সেগুলিতে সরকারের অংশীদারিত্ব ৫০ শতাংশের নীচে আনতেই হবে।
এ কথার অর্থ পরিষ্কার। সরকারের অংশীদারিত্ব ৫০ শতাংশের নীচে নেমে গেলে সেগুলির রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক হিসাবে পরিচিতি আর থাকবে না। তাদের বেসরকারিকরণ হয়ে যাবে। অভিজিৎ আরও বোঝাতে চান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সীমাবদ্ধতা অসীম। অনাদায়ী ঋণের বোঝা, ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে ব্যাঙ্ক অফিসারদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদির নিরিখেই নতুন করে ভাবনার সময় আসন্ন।
এ দিন অভিজিৎ বিনায়ক বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সংকট ভয় পাওয়ার মতোই। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়াটাই সঙ্গত। আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আজ হয়তো ব্যাঙ্কের সব ভাল আছে, কালই দেখা গেল তুমুল সংকট। সেই সংকট আসার আগেই তা রুখে দিতে হবে।”
আরও পড়ুন: বিরাট সংকটের মুখে পড়তে চলেছে ব্যাঙ্কগুলি, সতর্ক করলেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন অভিজিৎবাবু। তার পর একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় আরও গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনের তদন্তের ভয়ে অনেক ব্যাঙ্কার তথা ব্যাঙ্ক অফিসার ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাঁরা ভাবছেন, ঋণের টাকা ফেরত না দিলে তিনি বুঝি ফেঁসে যাবেন”। এ কথা বলেই বেসরকারিকরণের পরামর্শ দেন অভিজিৎ। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে সরকারের অংশীদারিত্ব ৫০ শতাংশের থেকে কমে গেলে সেগুলি আর সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনের নজরদারির আওতায় পড়বে না। ফলে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হবে”।
অভিজিতের এই বক্তব্যের তীব্র আপত্তি করেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি বলেন, “আমি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণগ্রাহী। কিন্তু ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের যে পরামর্শ তিনি দিচ্ছেন সে ব্যাপারে আমার ঘোর আপত্তি রয়েছে”।
While I am in awe of Abhijit Banerjee's intellectual prowess I disagree strongly with him that govt should privatise public sector banks.
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) October 22, 2019
বস্তুত ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের কথা শুনলেই অনেকে গেল গেল রব তোলেন। কারণ, তাঁরা মনে করেন ব্যাঙ্কের টাকা বুঝি লুঠের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইদানীং অনেক বিশেষজ্ঞই বলতে শুরু করেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির যদি অনাদায়ী ঋণের বোঝা কমাতে হয় তা হলে সেগুলিতে সরকারের অংশীদারিত্ব কমাতেই হবে। কারণ, সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তা শোধ না দেওয়া এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। অথচ দেখা যাবে একই ব্যবসায়িক পরিবেশে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি কিন্তু মুনাফার সঙ্গে কারবার করছে। তাদের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ খুব কম।
প্রসঙ্গত, ভারতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির সংকট নিয়ে ধারাবাহিক ভাবেই সতর্ক করে চলেছেন অভিজিৎ। কদিন আগেই এ ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন, “আমার মনে হয়, বহু বছর ধরে ব্যাঙ্কে নানা সমস্যা রয়েছে। তার ফলেই এখন ব্যাঙ্কগুলি গভীর সমস্যায় পড়েছে। ব্যাঙ্কগুলির হাল ফেরাতে অনেক টাকা লাগবে। সরকারের হাতে অত টাকা নেই। আমার মনে হয়, এই অবস্থায় রুগণ ব্যাঙ্কগুলি বেচে দিয়ে সরকারের টাকা তোলা উচিত”।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেছিলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক এখন গুরুতর সংকটের মুখে। যত সংকট বাড়বে ততই নানা সমস্যার কথা জানা যাবে। এরকমই হয়। বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কের অবস্থা এখন ভালো নয়। তাদের বাঁচাতে যে অর্থ প্রয়োজন তার পরিমাণ বিপুল। তাই টাকা সংগ্রহের জন্যই কয়েকটি ব্যাঙ্ক বিক্রি করে দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। তাঁর কথায়, “রুগ্ন ব্যাঙ্কগুলির বেশ কয়েকটি শাখা আছে। সেখানে অনেক যোগ্য কর্মীও আছেন। সুতরাং ওই ব্যাঙ্কগুলি বিক্রি করা কঠিন হবে না। সেই অর্থ অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিকে বাঁচানোর কাজে ব্যয় করা যেতে পারে”।
পড়ুন দ্য ওয়াল-এর পুজোসংখ্যার বিশেষ লেখা…