সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়
মহারাষ্ট্রে প্রত্যাশিত ভাবে সরকার গড়ছে বিজেপি-শিবসেনা জোট। কিন্তু অপ্রত্যাশিত হল বিজেপির আসন এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে গেল। বিজেপি-র আসন গত ভোটের তুলনায় কমে গেল কমবেশি ২১টি।
যা দেখে এখন থেকেই পেশী ফোলাতে শুরু করে দিয়েছে বহুদিনের শরিক দল শিবসেনা। এমনকি বালাসাহেব ঠাকরের নাতি আদিত্য ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিও তুলে দিয়েছেন শিব সৈনিকরা।
শুধু তাই নয়, মাতুশ্রীর (মুম্বইতে প্রয়াত বালাসাহেব তথা ঠাকরে পরিবারের বাসভবন) অন্য়তম আস্থাভাজন সৈনিক সঞ্জয় রাউত বলেছেন, মন্ত্রিসভাতেও এ বার ফিফটি-ফিফটি করতে হবে। এখন শোনা যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র ও অর্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর চাইতে পারে শিবসেনা।
২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় ২০১৪ সালে একা ২৬০টি আসনে লড়ে ১২২টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। মাত্র দু’টি আসনে সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন-পূর্ব জোট ভেঙে যায় দীর্ঘদিনের দুই শরিকের। সেই নির্বাচনে ২৮২ আসনে প্রার্থী দিয়ে শিবসেনা পেয়েছিল মাত্র ৬৩টি আসন। ভোটের পরে ফের জোট গড়ে বিজেপি-শিবসেনা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার জোট গড়ে দুই দল। বার বার বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার দেওয়া শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও তাঁর ছেলে আদিত্য ঠাকরেকে বোঝাতে তাঁদের বাড়ি মাতুশ্রীতে গিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নিজে। লোকসভায় মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসন আছে, তার মধ্যে বিজেপি ২৩টি ও শিবসেনা ১৮টি আসন পেয়েছিল।
এ বার বিধানসভা ভোটের আগেও দুই শরিকের মধ্যে দর কষাকষি কম হয়নি। ভোটের ফল বের হতে দেখা যায়, বিজেপি ১০১টি আসন পেতে চলেছে। শিবসেনারও গত বারের তুলনায় আসন কমেছে, তারা পাচ্ছে ৫৭টি। কিন্তু বিজেপির আসন কমে যাওয়া তাদের দর কষাকষির সুবিধা করে দিয়েছে।
মহারাষ্ট্রে এগিয়ে থেকেই ভোটযুদ্ধ শুরু করেছিল বিজেপি। তাই তারা একক ভাবেই ১৩৫টির বেশি আসন পাবে বলে ঘোষণা করে দিয়েছিল। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া এড়াতে রাজ্যের ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনা না করে কাশ্মীরের মতো জাতীয় ইস্যু নিয়ে ভোটের প্রচার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের মতো নেতারা। রাজ্যের কৃষকদের কথা তেমন ভাবে তাঁদের মুখে শোনা যায়নি। ভোটে জয় সম্পর্কে তাঁরা যে নিশ্চিত, বিজেপির শরীরের ভাষা সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিল। বুথফেরত সমীক্ষার ফলও তাই-ই ছিল।

মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ
ছন্নছাডা় বিরোধী শিবিরে শেষ মুহূর্তে জোট হয়েছিল কংগ্রেস ও শরদ পওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) মধ্যে। বুথফেরত সমীক্ষার ফল দেখে মনে হচ্ছিল মহারাষ্ট্রে বিরোধীরা কেবল অস্তিত্বরক্ষার লড়াই লড়ছেন। কিন্তু ভোটের ফল বেরতে দেখা গেল, যা ভাবা হয়েছিল তার থেকে ভালো ফল করেছে প্রধান বিরোধী জোট। রাজ্যে স্থানীয় ইস্যুগুলি যে গুরুত্বহীন নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে ছোট দল ও নির্দলদের জয়ে। রাজ্যে আগের বারের থেকে বেশি আসন পেয়েছে এনসিপি।
১৮৮৫ সালে যে রাজ্যে তৈরি হয়েছিল জাতীয় কংগ্রেস, এখন সেই রাজ্যে চার নম্বরে নেমে গেছে কংগ্রেস। রাজ্যে তাদের নামভারী কোনও নেতাও নেই এখন। তাই স্থানীয় নেতা শরদ পওয়ারের উপরেই ভরসা করেছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের মতো মাঝপথে লড়াইয়ে ময়দান ছেড়ে তিনি পালিয়ে যাননি। মহারাষ্ট্রে একযোগে প্রচার করতে দেখা যায়নি দুই শরিককে। কিন্তু রোদে পুড়ে জলে ভিজে একাই প্রচার করে যান এনসিপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মহারাষ্ট্র ভোটে এখন তিনিই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। বড়শরিক কংগ্রেসকে ছাপিয়ে তিনি এখন রাজ্যে তিন নম্বর দল।