Latest News

International Womens Day 2023: মেজর জেনারেল, অধ্যাপক, ডাক্তার! সব ভূমিকাতেই শীর্ষে কলেজে ফেল করা মেয়েটি

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

সাধারণ পরিবারের খুব সাধারণ মেয়ে ছিল সে। আলাদা করে সম্পদ বলতে ছিল, পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছে আর কোনও কিছুতেই হার মানতে না চাওয়া জেদ। আর সেই জেদকে সম্বল করেই পৌঁছে গিয়েছিল পুণের আর্মড ফোর্স মেডিক্যাল কলেজে (এএফএমসি)। গোটা ক্লাসে ছাত্রীসংখ্যা হাতে গোনা। আজ থেকে চার দশক আগে এ দেশের কোন মেয়েই বা ভাবত সেনাবাহিনীতে ডাক্তারি করার কথা (Woman Army)!

ঘরের মেয়ে যাবে সেনায় (Woman Army)!

মেয়েটির পরিবারের সদস্যরাও ভাবতে পারেননি। বলা ভাল, ধারণাই ছিল না। নতুন করে বা আলাদা করে ধারণা গড়তেও চাননি তিনি। সোজা গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে, সুযোগ পেয়ে, ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন। তার পরে বাড়িতে বাবাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, এই পড়াশোনা শুরু করবেন। বাড়ির সকলের তো চোখ কপালে! তাঁরা ভাবতেও পারেননি, সেনাবাহিনীতে ডাক্তারি করার জন্য পড়াশোনা করবে তাঁদের ঘরের মেয়ে!

Madhuri Kanitkar Wiki, Age, Husband, Children, Family, Biography & More – WikiBio

তাতে কী। তিনি নিজে ভেবেছিলেন। শুরুও করেছিলেন পড়াশোনা। প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা, নিয়মানুবর্তিতা, গাম্ভীর্য, বন্ধুদের সাহচর্য– সব কিছুর সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছিলেন খুব তাড়াতাড়ি। ছোট একটা ঘর থেকে যেন খোলা আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনুভব করেছিলেন, পিঠে দু’টি ডানা আছে, অপেক্ষা কেবল মেলে দেওয়ার।

স্বপ্ন বেশি, পরিশ্রম কম, তাই পরীক্ষায় ফেল (Woman Army)

কিন্তু মানুষ ভাবে এক, আর হয় আর এক। “কলেজের প্রথম পরীক্ষাতেই ফেল করে বসলাম আমি। ছিল না উপস্থিতিও। ফেল করার পরে বুঝতে পারলাম, আসলে এত বড় জায়গায় পৌঁছে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল আমার। স্বপ্ন দেখা বেশি হয়েছিল, কিন্তু পরিশ্রম কম।” আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসবের মঞ্চে হাসিমুখে কথাগুলি বলে চলেছেন মাধুরী কানিতকর। ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজিস্ট, নেফ্রোলজির অধ্যাপিকা আবার এক জন সুখী মা– এই চারটি পরিচয়েই সমান স্বচ্ছন্দ মানুষটি! (Woman Army)

Meet Major Gen Madhuri Kanitkar First Trained Paediatric Nephrologist Of The Armed Forces


নিজের জীবনের কথা বলার জন্য পঞ্চম আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসবের (আইআইএসএফ ২০১৯) ‘উইমেন সায়েন্টিস্টস অ্যান্ট অঁতেপ্রেনারস কনক্লেভ’-এ আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। সরাসরি বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও, বৃহত্তর ক্ষেত্রে নারী ক্ষমতায়নের দৃষ্টান্ত তিনি নিঃসন্দেহে। সফল চিকিৎসক তো বটেই। তাই তাঁর জীবনের ওঠা-পড়া, লডা়ই, অধ্যবসায় যে মহিলা বিজ্ঞানীদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে, তা বলাই বাহুল্য।

সাফল্যের শর্টকাট হয় না (Woman Army)

৫৮ বছরের মাধুরীর কথায় উঠে এল, পড়াশোনার পরবর্তী দিনগুলো। ডাক্তার হওয়ার পরে, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে প্রশিক্ষণ চলেছিল বেশ কয়েক মাস। ভোর থেকে উঠে সন্ধে পর্যন্ত অমানুষিক কায়িক পরিশ্রম। সেই সঙ্গে মানসিক দৃঢ়তার পাঠ। “অনেকেই পেরে উঠত না। হাল ছেড়ে দিয়েছিল। আমারও খুব পরিশ্রম হতো। কিন্তু আমি উপভোগ করতাম সবটাই। আমি জানতাম, এই পরিশ্রম পার করেই আমি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। আমি জানতাম, সাফল্যের কোনও শর্টকাট হয় না। (Woman Army)”

Major General Madhuri Kanitkar Becomes 3rd Woman To Hold Lt. General Rank | Femina.in

তাঁর সঙ্গে পাশ করা অনেক মেয়েই প্রশিক্ষণের মাঝপথে ছেড়ে চলে গেছিলেন। কেউ বিয়ে করে নেন, কেউ অন্য চাকরি খোঁজেন। শেষ পর্যন্ত রয়ে গেছিলেন তাঁরা ৬-৭ জন। দীর্ঘ পরিশ্রমের পথ পেরিয়েই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন মাধুরী (Woman Army)। দেশের এমন কোনও জায়গা নেই, যেখানে তাঁর পোস্টিং হয়নি। সমস্ত কাজে তাঁর উৎসাহ, দক্ষতা, পারদর্শিতা খুব সহজেই পেশাগত ভাবে সফল করে তোলে তাঁকে। এই পেশার পথেই আলাপ হয় রাজীব কানিতকরের সঙ্গে। তৎকালীন প্রেমিক, বর্তমানের জীবনসঙ্গী।

পরিবারই সবচেয়ে বড় সাপোর্ট সিস্টেম

মাধুরীর কথায় তাঁর কেরিয়ারের পাশাপাশিই বারবারই উঠে আসছিল তাঁর দাম্পত্য জীবনের কথা, পরিবারের কথা। পরিবার আর কেরিয়ার– এ দু’টি যে মহিলাদের পক্ষে একসঙ্গে সামলানো সম্ভব নয়, তা বিশ্বাস করেন না মাধুরী (Woman Army)। তাই তো বিয়ের পরে শেষ করেছেন এমবিবিএস। প্রথম সন্তান কোলে আসার পরে পার করেছেন এমডি-র কঠিন সমুদ্র। দ্বিতীয় সন্তান যখন ছোট, তখনই যোগ দিয়েছেন সেনাবাহিনীতে

Finding opportunity in a challenge | Retd. LT. GEN. Madhuri Kanitkar | TEDxChowringheeWomen - YouTube

তার পরে আর থামেনি উন্নতির পারদ। বারবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং হয়েছে। “এক এক সময়ে মনে হয়েছে আর পারছি না। হাল ছেড়ে দেব। পাশে দাঁড়িয়েছেন আমার স্বামী।”– বলছিলেন মাধুরী। স্বামীর কাছ থেকে সবসময়ই সাপোর্ট পেয়েছেন মাধুরী (Woman Army)। তিনি নিজেও সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদেই রয়েছেন। তাঁর জীবনেও কম ওঠাপড়া নেই। তাই জীবনের সমস্ত কঠিন সময়েই দু’জন দু’জনের সঙ্গী হয়েছেন। ঠিক করেছেন, “আমরা একসঙ্গে বেড়ে উঠব, কিন্তু আমাদের মধ্যে দূরত্ব কখনও বাড়তে দেব না।”

Armed Forces Medical Services officers retiring this year to get extension till December: Lt Gen Madhuri Kanitkar - The Economic Times

পাশে ছিল সন্তানরাও। খুব ছোট বয়সেই মা ও বাবার কাজের গরিমা বুঝতে শিখেছিল তারা। কখনও কোনও অভিযোগ অভিমান দূরের কথা, বরং মাধুরী কখনও চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে তারাই বলত, “সারাদিনের জন্য মা চাই না আমাদের। কিছুক্ষণের জন্য এমন মাকে পেয়েই আমরা খুশি।”

২০ শতাংশ নিজের জন্য রাখো

মাধুরী বিশ্বাস করেন, জীবনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা খুব জরুরি। সাফল্যের জন্য নিজের সক্ষমতাগুলোকেও চিহ্নিত করা জরুরি। তার পরে চলুক লড়াই। কিন্তু সে লড়াইয়ে নিজের ১০০ শতাংশ ব্যয় করতে রাজি নন তিনি। তাঁর কথায়, “লক্ষ্যের পেছনে নিজের ৮০ শতাংশ দিয়ে দাও। বাকি ২০ শতাংশ নিজের জন্য রাখো। নিজের শারীরিক সুস্থতা, মানসিক স্ফূর্তির জন্য আলাদা করে সময় দাও। তা হলেই সবটুকু সুন্দর হবে, তাহলেই সাফল্য সর্বাঙ্গীণ হবে। এমন কিছুর পেছনে দৌড়চ্ছো, যেটা পাওয়ার পরে দেখলে নিজেই নিঃশেষ হয়ে গেছো– তাহলে কিন্তু সে প্রাপ্তির স্বাদ আর নিতে পারবে না।” (Woman Army)

May be an image of 2 people, people standing and indoor


প্রাপ্তির স্বীকৃতি মিলেছে জীবনভর। মিলেছে অসংখ্য সম্মান, পুরস্কার। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু মাধুরী আজও মনে করেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তিনি নিজেই। অন্য কেউ নয়। তাই নিজেকেই রোজ আরও একটু সুন্দর ও সফল করার চেষ্টা করেন তিনি। চেষ্টা করেন, এত দিন যা শিখেছেন, যা পেয়েছেন তা নিজের সাধ্যমতো সমাজকে ফিরিয়ে দিতে।

তাই এখনও, চাকরি জীবনের উপান্তে পৌঁছেও জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরে পোস্টিং নিয়েছেন তিনি। স্বেচ্ছায়। দিল্লিতে সেমাবাহিনীর হেড অফিসে বসে কাজ করার সুযোগ হেলায় হাতছাড়া করেছেন। “কী করব এক জায়গায় বসে! সীমান্তেই থাকতে চাই, লড়তে চাই। যত দিন সম্ভব, দেশের জন্য যতটা বেশি লড়তে পারি, সেটাই আমার চাওয়া।”– গমগম করে উঠল কোমল স্বর অথচ দৃঢ় ভঙ্গিতে। (Woman Army)

তাই বিজ্ঞান উৎসবের মঞ্চ থেকে আগামীর জন্য মাধুরী কানিৎকরের বার্তা, “লড়াইয়ের প্রথম পদক্ষেপটা নিজেকেই নিতে হয়। কেউ ঘরে এসে হাত ধরে বাইরে বার করে কাউকে লড়িয়ে দেয় না। আমার গল্পটা সবে শুরু হয়েছে। তুমিও তোমারটা শুরু করো। একদিন ঠিক একসঙ্গে গল্প লিখব আমরা।”

১৯ বছরের মেয়ের কলমে জন্ম নিয়েছিল ভয়ংকর দানব! আজও ভোলেনি পৃথিবী

You might also like