শেষ আপডেট: 6th March 2025 13:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লতা মঙ্গেশকরকে বিয়ে করব! কথাটা শুনে আঁতকে উঠলেন বাড়ির সবাই। বাড়ি ভর্তি চাকরবাকর, খানসামা, আর্দালি, আয়ারা ঘোরাফেরা করছে। তার মধ্যে এরকম অরাজকীয়সুলভ আচরণে হিন্দি সিনেমার ধাঁচেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন রাজাসাহেব। সিনেমার নকল রাজা নয়, সত্যিকারে রাজা। কিন্তু, রাজপুত্রের সেই এক গোঁ। লতা মঙ্গেশকরকে বিয়ে, নয়তো সারাজীবন 'কুঁয়ারা'ই থেকে যাবেন।
হিন্দি ফিল্ম জগতে অনেক নক্ষত্রদেরই ব্যক্তিগত জীবনে এমন অনেক মধুর প্রেমের বসন্ত ঘুরেফিরে এসেছিল। কিন্তু, সিনেমার ট্রাজিক পরিণতির মতোই বহু বিখ্যাত ব্যক্তিরই বসন্তবাতাসের মতো সেই প্রেম জানালা দিয়ে এসে বাস্তব পরিস্থিতির চাপে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর ও রাজস্থানের দুঙ্গারপুর রাজপরিবারের রাজপুত্র রাজ সিং দুঙ্গারপুরের সেই অব্যক্ত প্রেম আজও আরব সাগরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে দোল খায়।
স্বাধীনতার আগে হোক বা অব্যবহিত পরে ভারতে যে কয়েকটি বিনোদন অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, তার মধ্যে একটি হল সিনেমা ও গান। আরেকটি হল ক্রিকেট। ক্রিকেট মাঠে তখন মুম্বইতে খেলা হলে অনেক তারকাকেই দর্শকাসনে দেখা যেত। তার মধ্যে একটি মুখ অবশ্যই থাকতেন, তিনি হলেন লতা মঙ্গেশকর। আর ক্রিকেট টেস্টের প্রতিটি টিকিট বিনামূল্যে যাঁর দরজায় চলে আসত সেই মানুষটিও ছিলেন লতা। কেন তাঁর কাছে প্রতিটি খেলার টিকিট বিনা পয়সায় পৌঁছে যেত, কে পাঠাতেন? তা জানতে যেতে হবে অনেকটা ফ্ল্যাশব্যাকে। যিনি এই কাণ্ডটি ঘটাতেন তিনিও ভারতের এক প্রাক্তন ক্রিকেটার, ক্রিকেট প্রশাসক এবং আড়ালে-আবডালে লোকে বলে লতার রোমান্টিক সঙ্গী রাজ সিং দুঙ্গারপুর।
কে রাজ সিং দুঙ্গারপুর?
তৎকালীন রাজপুতানার ভূতপূর্ব রাজত্ব দুঙ্গারপুরে জন্ম রাজ সিংয়ের। রাজা মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিংয়ের ছোট ছেলে ছিলেন রাজ। সেই সময় রাজকুমারদের শখ থাকত ক্রিকেট, বিলিয়ার্ড ও গল্ফ খেলায়। রাজ সিংও ছিলেন পাগলের মতো ক্রিকেট ভক্ত। রণজি ট্রফি দলীপ ট্রফিতেও তিনি রাজস্থান ও মধ্যাঞ্চলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৫-৭১ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট খেলে তিনি অবসর নেওয়ার পর জাতীয় দলের প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন। তারপর ১৯৯০ সাল নাগাদ বিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন।
রাজ-লতা: এক অমর প্রেমকথা
১৯২৯ সালে একটি মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লতা। ৫ ছেলেমেয়েকে নিয়ে লতার বাবা-মায়ের খুবই কষ্টের সংসার ছিল। তবে এত কষ্টের মধ্যেও লতা মাত্র ৫ বছর বয়সে গান শেখা শুরু করেন। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন তাঁর প্রথম শিক্ষাগুরু। ১৯৪২ সালে গানের জগতে পুরোদস্তুর তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। কয়েক দশকে তিনি ৩৬টি ভাষায় পঞ্চাশ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। তাঁর গানে মুগ্ধ হয়েছিলেন মহারাজা রাজ সিং দুঙ্গারপুরও।
দুঙ্গারপুর রাজ পরিবারের রাজ সিং দুঙ্গারপুর ও লতা মঙ্গেশকরের প্রেম চর্চা তখন ছিল বলিউডের ওপেন সিক্রেট। একে অপরকে খুবই ভালোবাসতেন। রাজসিং সেই সময় নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন। লতার ভাই হৃদয়নাথের বন্ধু ছিলেন রাজ সিং। সেই সূত্রেই দুজনের আলাপ হয়েছিল। বন্ধুর দিদির সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম হয় রাজের। বিয়েও করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান রাজের পরিবার।
রাজ সিংয়ের বাবা মহারাওয়াল লক্ষ্মণ সিং সাধারণ পরিবারের মেয়ে লতাকে ঘরের বউ করতে রাজি ছিলেন না। রাজ সিংকে রীতিমতো তাঁর বাবা-মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছিল তিনি কোনও সাধারণ ঘরের মেয়েকে বিয়ে করবেন না। রাজ সিং সেই প্রতিজ্ঞা করতে বাধ্য হন। তবে সেই সঙ্গে তিনি আরও এক কঠিন প্রতিজ্ঞা করেন। কোনদিনই কাউকে বিয়ে করবেন না। অন্যদিকে, লতার পরিবারও চেয়েছিল মেয়ের জন্য মারাঠি বর। তাই রাজপুত ছেলেকে লতার বাড়ির লোকও মেনে নিতে রাজি হননি। বিয়ে না করেই রাজ এবং লতা একে অপরের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে, লতাও মনে মনে রাজকেই স্বামী হিসেবে মানতেন। অনেকে বলে থাকেন যে, তাঁরা নাকি গোপনে বিয়েও করেছিলেন। কিন্তু পরিবারের ভয়ে সত্যিটা স্বীকার করতে পারেননি।