শেষ আপডেট: 25th March 2025 13:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গত ৭ মার্চ, বিজ্ঞানী-গবেষকরা এক বিশাল মিছিল করেন ওয়াশিংটনে। সরকারি তহবিলের দাবিতে নয়, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্যও নয়। আমেরিকার মাটিতে মেধাজীবীদের অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে 'স্ট্যান্ড আপ ফর সায়েন্স' নামে মিছিলে স্লোগান উঠেছিল 'সায়েন্স ইক্যুয়াল টু প্রগ্রেস'। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দফার জমানাতেও এরকমই মিছিল হয়েছিল। কিন্তু এবারের ধার ও ভার অনেকটাই আলাদা। কারণ, আমেরিকা থেকে কৃতী বিজ্ঞানী, গবেষকদের বিতাড়নের স্রোতের পাল্লা এবার অনেকটাই ভারী। যে গণ মেধা নিকাশি-স্রোতের (Brain Drain) ঢেউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানিতে ঘটেছিল, প্রায় ৮ দশক পর সেই নালার জলের মতো মেধা বিতাড়ন পর্ব ঘটতে চলেছে পুঁজিবাদী আমেরিকাতেও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের বহু জ্ঞানিগুণী বিজ্ঞানী-গবেষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের অনেকেরই গবেষণা কাজের বরাদ্দ অর্থে কাঁচি পড়ে গিয়েছে। এমনকী বহু মেধাবী গবেষকের কাজের ভিসা নিয়ে নানান নিরাপত্তাজনিত খুঁটিনাটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। যা তাঁদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে। এ কারণে বহু বিজ্ঞানী ও গবেষকই আপাতত মার্কিন মুলুক ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা সহ ইউরোপীয় দেশগুলির দিকে ঝুঁকছেন। যেখানেই স্থায়ী ও শান্তিতে কাজের সুযোগ মিলছে, সেদিকে ভিড়ে যাচ্ছেন অনেকে।
এদিক দিয়ে এখন এগিয়ে রয়েছে ফ্রান্স ও সুইডেন। যারা সরাসরি বিজ্ঞানী-গবেষকদের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি, আর্থিক ও পরিবেশের সহায়তা দেওয়ার খোলা প্রস্তাব দিচ্ছে। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকা থেকে মেধা-নিকাশি স্রোতের পরিপূর্ণ সুবিধা নিচ্ছে এই দেশগুলি। ন্যাশনাল হেল্থ ইনস্টিটিউট (NIH)-এর মতো আমেরিকার অভিজাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অনুদান প্রত্যাহার করে নিয়েছে দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন। যার ফলে বহু গবেষণা মাঝপথে অথই জলে পড়ে গিয়েছে।
একটি স্পেনীয় সংবাদপত্রের খবর হচ্ছে, আমেরিকার বহু কংগ্রেস সদস্য, প্রদেশ আধিকারিকরা এবং কোম্পানিগুলি ইউরোপীয় কমিশনের কাছে এ ব্যাপারে আর্জি জানিয়েছেন। যাতে আমেরিকা থেকে পাততাড়ি গোটানো এইসব বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যতে কাজের সুযোগ করে দেওয়া যায়। কমিশন এই প্রস্তাব ও আর্জি নিয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে। ইউরোপিয়ান রিসার্চ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মারিয়া লেপটিন একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ব্যক্তিগত বা বেসরকারি গবেষণা কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নেই আমেরিকায়। সরকারও উৎসাহ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টে (USAID) ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করা মার্কিন নাগরিক অ্যালেক্স কং গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর কাজ মাঝপথে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ ট্রাম্প চেয়ারে বসেই ইউএসএইডকে তহবিল দেওয়া বন্ধ করে দেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবর বলছে, ট্রাম্প আসার পর প্রায় ৭,৪০০ জন বিদেশি গবেষককে অর্থ অনুদান বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে অর্থের অভাবে তাঁদেরও গবেষণার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এই অবস্থায় সেদেশে পড়তে যাওয়া ও গবেষণার কাজে নিযুক্ত ভারতীয় মেধাবী পড়ুয়ারাও অগাধ জলে পড়ে গিয়েছেন।