
রূপাঞ্জন গোস্বামী
উত্তর দিক বা তিব্বতের দিক থেকে এভারেস্টে (Everest) ওঠার পথে, ৮৫০০ মিটার (২৭৯০০ ফুট) উঁচুতে আছে চুনাপাথরের ছোট্ট এক গুহা। গুহার ভিতর বাম পাশ ফিরে ঘুমিয়ে রয়েছেন এক পর্বতারোহী। এভারেস্ট শৃঙ্গের দিকে মুখ ফেরানো। মুখের উপর জ্যাকেটের হুডটা টেনে নিয়েছেন। মুখ তাই দেখা যায় না। দেখতে দেবেনও না তিনি। বাহুদুটি বুকের কাছে টেনে নেওয়া। লাল রঙের ক্লাইম্বিং জ্যাকেটের রং চটে গেছে। পরনের নীলচে কালো রঙের ট্রাউজারও মলিন। পা দুটো ছোট্ট গুহাটি থেকে বেরিয়ে শৃঙ্গে যাওয়ার পথের উপর এসে পড়েছে। পায়ে জ্বলজ্বল করছে ফ্লুরোসেন্ট রঙের দু’টি সবুজ ক্লাইম্বিং বুট। শুয়ে আছেন ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের জওয়ান তেসোয়াং পালজোর। শুয়ে আছেন ২২ বছর ধরে। সারা বিশ্ব যে মৃতদেহটিকে চেনে গ্রিন বুট( Green Boot) নামে। তাই গুহাটির নামই হয়ে গেছে গ্রিন বুট কেভ।
সকাল ৯ টা, ১০ মে,১৯৯৬
রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল। ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের চার সদস্য, তিব্বতের দিক থেকে এভারেস্টের দুধসাদা বরফ কেটে উপরে উঠে চলেছে। যদিও উত্তর দিকে বরফ অনেক কম, তাই শৃঙ্গ আরোহণ করা দক্ষিণের চেয়ে অনেক কঠিন। টিমে আছেন হেড- কনস্টেবল তেসোয়াং পালজোর, সুবেদার তেসোয়াং সামানলা, ল্যান্সনায়েক দোরজে মোরাপ এবং টিমের ডেপুটি লিডার ইন্সপেক্টর হরভজন সিং। প্রথম তিনজন টগবগ করে ফুটতে থাকা লাদাখি যুবক এবং ঈর্ষণীয় পর্বতারোহণ স্কিলের অধিকারী।
দিনের শুরুটা ভালো হয়নি। ক্যাম্প-VI থেকে এভারেষ্ট শৃঙ্গ জয়ের জন্য বার হওয়ার কথা ছিলো ভোর ৩.৩০ মিনিটে। কিন্তু আবহাওয়ার খারাপ থাকার কারণে আরোহীদের বার হতে দেরি হয়ে। শৃঙ্গ জয়ের জন্য টিমটি বার হয় সকাল ৮ টায়। সাড়ে চার ঘন্টা দেরি এমনিতেই হয়েছিল, তাই সদস্যরা ঠিক করেন শৃঙ্গ আরোহণের ঝুঁকি না নিয়ে, দ্রুত ডেথ জোনে ফিক্সড রোপ লাগিয়ে ফিরে আসবেন। এভারেস্টে আজ পর্যন্ত যত মৃত্যু ঘটেছে তার ৫০% ঘটেছে এই ডেথ জোনে। তাই আইটিবিপি টিম তাদের ফেরাটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল।
দুপুর ২.৪০
পালজোরের দল দেরিতে শুরু করলেও নিখুঁত ভাবে ও দ্রুত এগিয়ে চলেছিল শৃঙ্গের দিকে। কিন্তু হঠাৎ খামখেয়ালি বাতাস ক্ষিপ্ত বাজপাখীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল টিমটার ওপর। অ্যাডভান্স বেসক্যাম্পে অপেক্ষারত অভিযানের লিডার মহিন্দর সিং-এর কঠোর নির্দেশ ছিল বেলা ২.৩০ মিনিট থেকে ৩টে, এই সময়ে টিমের সদস্যরা যে অবস্থায় থাকুক না কেন, ফেরার পথ ধরবে।
তিন লাদাখি যুবকের অনেক পিছনে ছিলেন ডেপুটি লিডার হরভজন সিং। ঘড়িতে আড়াইটে বাজতেই হরভজন উপরের তিন জনকে সিগন্যাল দেখালেন ফেরার জন্য। কিন্তু তিন লাদাখি আরোহী হয় তাঁর সিগন্যাল দেখেননি বা দেখেও উপেক্ষা করেছিলেন। ডেপুটি লিডারের কথা না শুনে, তিনজন দ্রুতগতিতে উপরে উঠে যাচ্ছে দেখে ফ্রস্ট বাইটে আক্রান্ত হরভজন সিং দলনেতার নির্দেশ মেনে ক্যাম্প-VI এ ফেরার পথ ধরলেন।
বিকেল ৩টা
অ্যাডভান্স বেসক্যাম্পে অস্থির ভাবে পায়চারি করছিলেন দলনেতা মহিন্দর সিং। বারবার তাকাচ্ছিলেন ওয়াকি টকি সেটের দিকে। হঠাৎ যেন ঘুম থেকে জেগে উঠল সেটি। সুবেদার তেসোয়াং সামানলার কন্ঠস্বর ভেসে এল ইথার তরঙ্গে,
-স্যার, আমরা সামিটের দিকে যাচ্ছি
-না , না একেবারে না, আবহাওয়া দ্রুত খারাপ হয়ে আসছে।
-প্লিজ স্যার, সামিট দেখতে পাচ্ছি, এক ঘণ্টাও লাগবে না, আমরা তিনজন ফিট আছি।
-ওভার কনফিডেন্ট হয়ো না। প্লিজ আমার কথা শোনো। নেমেই এসো ক্যাম্প-VI এ। সূর্য অস্ত গেলে বিপদে পড়বে।
সুবেদার তেসোয়াং সামানলা কথা শোনেননি, বরং ওয়াকি টকি ধরিয়ে দিয়েছিলেন হেড-কনস্টেবল তেসোয়াং পালজোরের হাতে।
-স্যার, প্লিজ আমাদের সামিটের অনুমতি দিন। আত্মবিশ্বাস আর শৃঙ্গ জয়ের উত্তেজনা ছিল পালজোরের গলায়। তারপর আচমকাই কেটে গেছিল ফোনটা। অ্যাডভান্স বেসক্যাম্পে লিডার মহিন্দর সিংয়ের মুখ থমথমে। অশনিসঙ্কেত দেখতে পাচ্ছেন অভিজ্ঞ ক্লাইম্বার মহিন্দর।
বিকেল ৫,৪৫
আবার ওয়াকি টকিতে গলার আওয়াজ ভেসে এল। সুবেদার তেসোয়াং সামানলা জানালেন, পালজোর, মোরুপ এবং তিনি দাঁড়িয়ে আছেন এভারেস্টের শৃঙ্গে। উত্তর দিক থেকে অবশেষে এভারেস্ট জয় করলেন ভারতীয়রা। অ্যাডভান্স বেস ক্যাম্পে খুশির হুল্লোড় শুরু হয়ে গেল। লিডার মহিন্দর সিং তাঁর টিমের শৃঙ্গ জয়ের খবর দিল্লিতে পাঠাতে বসলেন। কিন্তু চিন্তিত মুখে। সারা ভারতের সেনাবাহিনী ও পর্বতারোহী মহলে উৎসব শুরু হয়ে গেল।
সন্ধ্যা ৬.৪৫
বেসক্যাম্প আর অ্যাডভান্স বেসক্যাম্পের আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। এভারেস্টকে জাপটে ধরে ভয়াবহ গতিতে বরফ আর বাতাসের ছোবল মারতে লাগল ১৯৯৬ সালের সেই কুখ্যাত তুষারঝড় বা ব্লিজার্ড। মুখ শুকিয়ে আসে নিচে থাকা টিমের সদস্যদের। লিডার মহিন্দর সিং মুখে সাহস দেন, এই তিনজন এর আগেও এরকম ভয়ঙ্কর অবস্থায় পড়েছেন এবং বেরিয়ে এসেছেন। তাই সমস্যা হলেও তাঁরা মাঝরাতের মধ্যে ক্যাম্প- VI এ ঠিক নেমে আসবেন। কিন্তু এভারেস্টের ডেথ জোনের উপরে এরকম ভয়াবহ মাত্রার তুষারঝড়ের সম্মুখীন হওয়া সামান্য কথা নয়! তিনি নিজেও জানতেন আরোহীদের ফিরে আসার সম্ভবনা খুবই কম।
রাত ৮ টা
লিডার মহিন্দর সিং ঠিক করলেন, ফুরোকাওয়া থেকে আসা একটি পেশাদার জাপানি টিমকে সাহায্য করতে বলবেন। তাঁর সামনেই জাপানি টিমটির দলনেতা কোজি ইয়াদা ক্যাম্প-VI এ থাকা জাপানি অভিযাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। পরিস্থিতির বর্ণনা করলেন। তারপর মহিন্দর সিংকে বললেন, জাপানি আরোহীরা শৃঙ্গ জয়ের পথে পালজোরদের দেখতে পেলে সব রকম সাহায্য করবেন। জাপানিরা এটিকে নিজেদের দলের দুর্ঘটনা বলে গ্রহণ করেছেন। লিডার মহিন্দর সিং জাপানি দলনেতার এই আপদকালীন অবস্থায় সাহায্য করার মানসিকতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
.আরও পড়ুন: জিভ কেন কাটা গেছিল খনার, বিক্রমাদিত্যের নবরত্নসভার দশম রত্ন ছিলেন এই কথামানবী
১১ ই মে, সকাল ৯ টা
ব্লিজার্ড থেমে গিয়েছিল। জাপানি দল খুব ভোরেই ক্যাম্প-VI থেকে শৃঙ্গের দিকে রওনা হয়েছিল। সকাল ৯ টা, জাপানি টিমের লিডার কোজি, চিন্তিত মহিন্দর সিংকে জানালেন, তাঁর দলের দুই অভিযাত্রী হিরোশি হানাদা, এইসুকি শিগেকাওয়া ও শেরপারা দোরজে মোরুপকে দেখতে পেয়েছেন। মারাত্মক ফ্রস্ট বাইটে আক্রান্ত অবস্থায় বরফে শুয়ে আছেন মোরুপ। জাপানি আরোহীরা মোরুপকে ফিক্সড রোপের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে সামিটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। লিডার মহিন্দর সিং হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন জাপানি দলনেতার দিকে।
সকাল ১১ টা
পরিস্কার ও ঝকঝকে আবহাওয়ায় জাপানি দলের দুই আরোহী ও তিন শেরপা দেখতে পেলন সামানলা আর পালজোরকে। বরফের মধ্যে অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন। কিন্তু তাঁরা সাহায্য না করেই এগিয়ে গেলেন শৃঙ্গের পথে। এক ফোঁটা জল পর্যন্ত দিলেন না মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ দুটির মুখে।হেড-কনস্টেবল তেসোয়াং পালজোর, সুবেদার তেসোয়াং সামানলা, ল্যান্সনায়েক দোরজে মোরাপ চিরতরে হারিয়ে গেলেন এভারেস্টের ডেথ জোনে।
কেন ফিরলেন না পালজোররা!
বিভিন্ন মতামত এসেছিল। সেগুলি হলো; দলনেতা, সহ-দলনেতার নির্দেশ না মানা, এভারেস্টকে অন্য আর পাঁচটা পর্বত ভাবা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, আবহাওয়াকে উপেক্ষা করা, অবিস্মরণীয় কীর্তি করার অদম্য তাগিদ, জাপানি দলের অমানবিক ব্যবহার। এছাড়াও দ্রুত আরোহণ করতে গিয়ে জীবনীশক্তি ফুরিয়ে ফেলা, তারপর প্রচন্ড ক্লান্তিতে, অক্সিজেনের অভাবে, ঠাণ্ডায় জমে অসহায়ের মত মৃত্যুকে ডেকে নেওয়া।
কোথায় গেল মাউন্টেন এথিকস!
লিডার মহিন্দর সিং লিখেছিলেন, “জাপানিরা আমাদের আশাহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গেলেন। কোথায় গেল মাউণ্টেন এথিকস?” ১৯৬৫ সালের প্রথম সফল ভারতীয় এভারেস্ট অভিযানের দলনেতা এম এস কোহলি বলেছিলেন,“সবাই শুধু নিজের খেয়াল রাখবে, এক টিমের লোক অন্য টিমকে সাহায্য করবেনা। এটা অমানবিক এবং এটা পর্বতারোহণের স্পিরিটের বিরোধী”।
যিনি প্রথম মানুষ হিসেবে নেপালের সব কটি ৮০০০ মিটারের শৃঙ্গ জয় করেছিলেন এবং একই সিজনে দু’বার K2 জয় করেছিলেন, সেই শেরাপ জাঙ্গবু শেরপা বলেছিলেন, “এভারেস্টে একটা জীবন বাঁচানো একশোটা সামিটের সমান। আমরা আবার ফিরে যেতে পারবো পাহাড়ে, কিন্তু চলে যাওয়া প্রাণ ফেরাতে পারবো না”। পরে জাপানি লিডার কোজি ইয়াদা বিবিসিকে বলেছিলেন, “অনেকে বলবেন এটা অমানবিক বা স্বার্থপরতা। কিন্তু ৮০০০ মিটারের উপরে একটা অন্য পৃথিবী আছে। যার কল্পনা করা নীচে থেকে সম্ভব নয়। সেখানে বাস্তব চিত্রটা সম্পূর্ণ অন্য। আত্মসচেতন হওয়াটা অন্যায় নয়”।
তাহলে International Climbing and Mountaineering Federation কেন পর্বতারোহীদের code of ethics-এ বলছে “helping someone in trouble has absolute priority over reaching goals we set for ourselves in the mountain”।
পালজোর হয়ে গেলেন গ্রিন বুট (Green Boot)
ফরাসি ক্লাইম্বার পিয়ের প্যপেরন, ২০০১ সালের ২১ মে, এভারেস্ট শৃঙ্গের কাছে লাইমস্টোনের গুহায় দেখতে পান একটি দেহ। তাঁকে আকর্ষণ করে দেহটির পায়ে থাকা গ্রিন বুট (Green Boot)। তিনি জানতেন না দেহটি কার। তাই তিনি ভিডিওতে গ্রিন বুট নামে সম্বোধন করেন। দেহটির পোশাক দেখে সনাক্ত করা হয় পালজোরকে, অভিশপ্ত দিনটিতে একমাত্র তাঁর পায়েই ছিল এই গ্রিন বুট।
আর ফিরবে না বড়খোকা
৩৮০০ মিটার উচ্চতায় থাকা লাদাখি এক গ্রাম সাকতি। এই গ্রামেই ১৯৬৮ সালের ১০ এপ্রিল জন্মেছিলেন তেসওয়াং পালজোর। বছরের বেশিরভাগ রাতেই, তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। বার্লি চাষের খেত আর পপলার গাছের ভিড়ে ঢাকা উপত্যকার এই মিষ্টি গ্রামে ছোট্ট দোতলা বাড়ি পালজোরদের। চারিদিকে তিব্বতীয়দের ধর্মীয় পতাকা। সেখানে থাকেন পালজোরের মা তাসি আঙ্গমো।
ছয় ভাইবোনের বড় ছিলেন পালজোর। সারা গ্রামে নম্র ও বিনয়ী হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। দেখতে সুন্দর হলেও বান্ধবী ছিলো না, এতোটাই লাজুক ছিলেন তিনি। পালজোর তাঁর ভাইদের বলতেন, বিয়ের চেয়ে বড় কিছু করতে চাই। কমান্ড্যান্ট মহিন্দর সিংও বলেছিলেন, “খুব কথা বলতো পালজোর। ভালবাসত কঠিন রক ফেসে ক্লাইম্ব করতে। সে যখন আরোহণ করতো, মনে হতো যেন কোনও বানর তরতরিয়ে পাহাড় চড়ছে। মহিন্দর সিং-এর মনে পড়ে পালজোর রোস্টেড চিকেন খেতে ভালোবাসত। অবসর সময়ে গান গাইত। কঠিন কাজে কেউ না থাকলেও পালজোরকে ঠিক পাওয়া যেত। ভীষণ পরোপকারি ছিল”।
আইটিবিপিতে যোগদানের পর, পাহাড়ে চড়ার নেশা পেয়ে বসেছিল পালজোরকে। মা চাকরি পাওয়াতে খুশি হলেও, পাহাড়ে চড়া নিয়ে খুশি ছিলেন না। তাই ‘মিশন এভারেস্ট’-এ নির্বাচিত হয়েও মাকে জানাননি পালজোর। বন্ধুরা মা’কে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মা বলেছিলেন, “আমাকে বলেছিল অন্য একটা শৃঙ্গ জয় করতে যাচ্ছি। সব সময় বাড়ির ভালো চিন্তা করতো, সে হয়তো ভেবে ছিল এভারেস্ট ক্লাইম্ব করলে পরিবারে স্বচ্ছলতা আসবে”।
কেউ কথা রাখেনি
সব ভাইদের চেষ্টায় স্বাচ্ছন্দ ফিরেছে আজ। কিন্তু বড় খোকা আর ঘরে ফিরে আসেনি। পালজোরের মা তাসি আঙ্গমো বিবিসিকে বলেছিলেন, দু’জন আইটিবিপির লোক এসে জানিয়েছিলেন তাঁর ছেলে এভারেস্টে হারিয়ে গেছে। আইটিবিপি নাকি এক ব্যাটেলিয়ন ও হেলিকপ্টার নামিয়ে দিয়েছিল পালজোরকে উদ্ধার করতে। কিন্তু এত চেষ্টার পরও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরের দু’দিন পালজোরের মা, সমস্ত গুম্ফাতে গিয়ে মাথা ঠুকেছিলেন। পরে তাঁর মনে হয়েছিল আইটিবিপি ঠিক বলেনি তাঁকে। সে রকম কোনও উদ্ধারকাজের চেষ্টাই হয়নি।
গ্রামেই পালজোরের পারলৌকিক কাজ হয়েছিল আইটিবিপির তত্ত্বাবধানে। আইটিবিপি অফিসিয়ালরা বলেছিলেন, ইন্সিওরেন্সের টাকা ও পেনসন পাবেন পালজোরের মা। কিন্তু তা ছিল নগণ্য। তাই পালজোরের মা বিবিসি’কে বলেছিলেন, ” আইটিবিপির ব্যবহার নিন্দার যোগ্য, তারা ভালো নয়। এই টাকায় আমাদের চলবে? সন্তান অমূল্য, কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার। তাঁরা তাঁদের দেওয়া কথা রাখতে পারতেন”।
কথা কিন্তু রেখেছিলেন পালজোর। লাইট হাউসের মতো, এভারেস্টে আরোহণরত আরোহীদের শৃঙ্গের পথ চিনিয়ে গিয়েছিলেন গ্রিন বুট। উত্তর দিক থেকে এভারেষ্টে ওঠা আরোহীদের ৮০% গ্রিন কেভে বিশ্রাম নিতেন। শৃঙ্গের পথ চিনে নেন হেড-কনস্টেবল তেসোয়াং পালজোরের পাশে বসে। তারপর শৃঙ্গের পথে এগিয়ে যেতেন। এভারেস্টের তুষার সমুদ্রে ২২ বছর ধরে জ্বলতে থাকা সবুজ লাইটহাউস পালজোর, অপেক্ষা করতেন পরবর্তী আরোহীর জন্য, কর্তব্যে অবিচল হয়ে।
আরও পড়ুনঃ তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, হত্যার চেষ্টাও, আজ নারী পাচারকারীদের যম সেই ‘ সুনীতা কৃষ্ণণ’