শেষ আপডেট: 27th January 2025 11:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দেশে সিপিআই (মাওবাদী) দলের ধার ও ভার দুই-ই কমছে। সব থেকে বড় খরা দেখা দিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের অভাবে। সাম্প্রতিক হিসাবে কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদী দলের জীবিত ও সক্রিয় পলিটব্যুরো সদস্য সংখ্যা নেমে এসেছে চারে। ছত্তীসগড় পুলিশের হিসাবমতো বর্তমানে পলিটব্যুরোয় রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক নামবাল্লা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু, মুপাল্লা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি, মাল্লাজুল্লা বেণুগোপাল রাও ওরফে সোনু এবং মিসির বেসরা। ২০০৪ সালেও মাওবাদী দলের পলিটব্যুরোয় ১৬ জন সদস্য ছিল। কিন্তু, লাগাতার মাওবাদী দমন অপারেশনে তাঁদের অনেকেই মারা গিয়েছেন, অথবা ধরা পড়েছেন, আত্মসমর্পণ করেছেন এবং অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গিয়েছেন।
বর্তমানে জীবিত-সক্রিয় নেতাদেরও বয়স হয়ে গিয়েছে। যেমন কেশব রাওয়ের ৬৭ বছর, গণপতির ৭৫, সোনুর ৬২ এবং বেসরার ৬৪ বছর বয়স। পলিটব্যুরোর নীচে যে কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে, তারও সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১১-১২ জনে এসে ঠেকেছে। ছত্তীসগড় পুলিশ সূত্র টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে চার পলিটব্যুরো সদস্য ছাড়া রয়েছেন থিপ্পারি তিরুপতি ওরফে দেবজি (৬৪), কাদারি সত্যনারায়ণ রেড্ডি ওরফে কোসা (৭২), গণেশ ইউকে (৬০) ও পুল্লারি প্রসাদ রাও ওরফে চন্দ্রন্না, যাঁরও বয়স ৬০ পেরিয়ে গিয়েছে।
এছাড়া, পাতিরাম মাঝি ওরফে অনিলদা ঝাড়খণ্ডে লুকিয়ে রয়েছেন এবং মোদেম বালকৃষ্ণ ও গজর্লা রবির নাম ছত্তীসগড় পুলিশের তালিকায় নেই। এঁরা দুজনেও মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, কেন্দ্রীয় কমিটি এই অভাব পূরণ করতে তাই মাঝেমাঝে বিশেষ জোনাল এবং রাজ্য কমিটি থেকে লোক নিয়ে অভাব পূরণের চেষ্টা চালায়। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগই হলেন সশস্ত্র এবং গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষিত আদিবাসী কমান্ডার। অধিকাংশই সামান্য অথবা পুরোপুরি অশিক্ষিত যোদ্ধা। পুরনো দিনের নকশাল নেতাদের মতো আদর্শবাদী শিক্ষায় গড়ে ওঠা নয়। পড়াশোনায় বিদ্যান কিংবা আগের নেতাদের মতো ওয়ারঙ্গলের রিজিওনাল ইঞ্জনিয়ারিং কলেজ বা বর্তমানের এনআইটি থেকে পাশ করা লোকজন আর নতুন করে পাওয়া যাচ্ছে না।
গোয়েন্দা অফিসারের মতে, মাওবাদীদের মধ্যে দল পরিচালনার স্পষ্ট একটা ফাঁক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ উচ্চশিক্ষিত, আদর্শবাদী, সংগঠন পরিচালনায় দক্ষ, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নেতা কমে গিয়েছে। অনেকেই সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন নয়তো ধরা পড়েছেন, আত্মসমর্পণ করেছেন অথবা অসুস্থতায় মারা গিয়েছেন। ফলে দ্বিতীয় প্রজন্মের যে নেতারা আসছেন তাঁদের বেশিরভাগই যুদ্ধ বা হামলায় পারদর্শী হলেও লেখাপড়া বা শিক্ষাদীক্ষায় কোনও জ্ঞানই নেই। কমিউনিস্ট ভাবধারা বা আদর্শের সঙ্গেও তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই।
কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকজন পলিটব্যুরো সদস্য মারা গিয়েছেন বিভিন্ন কারণে, কয়েকজনকে দল বহিষ্কার করেছে। যেমন প্রশান্ত বসু ওরফে কিষেনদা ২০২১ সালে গ্রেফতার হন, কাটাকম সুদর্শন অসুস্থতায় মারা যান ২০২৩ সালে। কোবাড গান্ধী গ্রেফতার হন ২০১৯-এ, কিন্তু তাঁকে দল বহিষ্কার করে। প্রমোদ মিশ্র ২০২৩-এ এবং সুমানন্দ গ্রেফতার হন গতবছর। তারও আগে ২০১০ সালে সংঘর্ষে মারা যান চেরুকুরি রাজকুমার ওরফে আজাদ এবং মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেনজি ২০১১ সালে পুলিশের হাতে নিহত হন। সুশীল রাও ও নারায়ণ সান্যাল ২০১৪ ও ২০১৭ সালে অসুস্থতায় মারা যান।