শেষ আপডেট: 30th November 2024 17:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'একটু উষ্ণতার জন্য' শনিবারের এই বিকেলটাকে তুলে রাখা যাক। শীতের উদ্বোধনী গীত এখনও শুরু হয়নি। মাঠেঘাটে বোনা হয়ে গিয়েছে আলু। উৎসবের সব আলোয় কালশিটে পড়ে গিয়েছে। প্রতিবাদে, প্রতিরোধে, প্রতিশোধের জ্বালাতেও যেন শান্তিবারি নিয়ে এল হঠাৎ মন খারাপ করে দেওয়া এই বৃষ্টি।
দীর্ঘদিনের বৃষ্টির অভাবে শহর-গাঁয়ের গাছগাছালিতে লেগেছিল ধুলোর পলেস্তারা। বায়ুদূষণের ভয়ঙ্কর হাতছানির মধ্যে ত্বকেও লেগেছিল টানটান ভাব। সক্কাল সক্কাল চান করতে গেলে বুকটা একটু করে কেঁপে উঠছিল। এসিটা বেশ কয়েকদিন ধরেই লকআউটে আছে। রাতের পাখার গতিও কমে এসেছে। তারমধ্যে মশার ভ্যানভ্যানানি আর ডেঙ্গির ভয়ে রাতের ঘরে একচোখ জ্বেলে জেগে থাকা মশার মারার তেলের যন্ত্রখানি। এর মধ্যেই শরীর যেন একটু উত্তাপ চায়।
এদিন সকাল থেকেই হুড়মুড়িয়ে হাওয়া বইছিল। তারমধ্যেই ছিল আপিস যাওয়ার তাড়া। গিন্নিদের খানিক নিশ্চিন্দি। স্কুল ছুটি অনেক সংসারেই। দুপুর হতেই আকাশ কালো মুখ করে সেই বুক হা-হু করা হুতাশ বয়ে আনল যেন। হবু দম্পতি প্রেমিক-প্রেমিকাদের তো পোয়াবারো। এক ছুটে গঙ্গার ধারে গিয়ে গায়ে আলতো গরমের পোশাক জড়িয়েও যেন একটু কাঁপুনি লাগছে। আরও কাছাকাছি, আরও কাছে এসো...।
দুই তালুর মধ্যে ধরা থাক চায়ের ভাঁড়। কারও ক্যাটরিনা কইফের পছন্দের কফি। তবে ধোঁয়া ওড়া মাস্ট। আলতো চুমুকে লেগে থাক সুগন্ধী লিপস্টিকের স্পর্শ। সেই জায়গাটাকেই ছুঁয়ে ঠোঁট লাগুক কলকাতার কিং খানের। গঙ্গার উপর দিয়ে তখন না হয় উড়ে যাক দুএকটি সাদা বক। নদীতে চরে বেড়াক ডিঙিখানা। আমায় ভাসাইলি রে...আমায় ডুবাইলি রে! গানটা কার, কবেকার না জানা থাকলেও বুকের মধ্যে কেমন যেন এক ধুকপুকানি। শরীরের উত্তাপের দেওয়া-নেওয়ার এই পালা যেন শেষ না হয়। বৃষ্টি হোক না হোক আজ বর্ষাকাল। এ ভরা বাদর, মাহ ভাদর যেন।
নন্দনের ঝোপের আড়ালে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের গাছগাছালির আবডালেও কপোত-কপোতীর মেলা বসেছে। হালকা আলো-অন্ধকারে একে অপরের খুব কাছাকাছি। নিঃশ্বাসের ঘনত্ব, মুখের কাছে মুখের উত্তাপ একটা বলয় তৈরি করে দিয়েছে। সেই লক্ষ্মণগণ্ডি যেন কোনওমতেই ছিঁড়ে না যায়। হাতে হাত লাগলে যে এত ভালো লাগে তা আগে কোনও দিন টের পাওয়া যায়নি। অথচ এর আগে কতবার...!
অ্যাকাডেমির ছোট্ট একফালি রেস্তরাঁয় চপ আর চা। বাইরে তখনও কেউ গিটার হাতে গেয়ে চলেছে কোন এক সুর। ক্যাথিড্রালের কান ঘেঁষে যে ফুটপাতটা গিয়েছে, সেখানে জনমনিষ্যি নেই। মাঝেমধ্যে দুএকটা মুড়িমাখা, ঘটি গরম জোর গতিতে হেঁটে চলে যাচ্ছে। এদের কাউকে আর ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে, কেবলই মনে হচ্ছে এখনই তাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে গেলে ভালো হতো। বৃষ্টি তখনও হয়ে চলেছে। ছাতায় আর মানছে না। দুএকটা হাঁচি আর কাশিও আসছে। আহা...হা এই উষ্ণতা যেন চিরন্তন হয়ে থেকে যায়। আযুগ, আজীবন। এই বৃষ্টি যেন ভগবানের বরে অমরত্ব লাভ করে।