শেষ আপডেট: 1st April 2024 13:08
দ্য ওয়াল ম্যাগাজিন ব্যুরো: দাদা রামকুমারের মৃত্যুর পর তখন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মা ভবতারিণীর সেবক নিযুক্ত হয়েছেন গদাধর ঠাকুর। ঠাকুরের মাতৃপুজোর ধরনটি ছিল ভারী অদ্ভুত। কখনও "দেখা দে দেখা দে" বলে দেবীর কষ্টিপাথরের মূর্তি জড়িয়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠতেন, কখনও বা নগ্ন হয়ে উপবীত ত্যাগ করে মাঝরাত্রে জঙ্গলে চলে যেতেন সাধনা করতে। নবীন পূজারির সেই দিব্যোন্মাদ দশা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় দক্ষিণেশ্বরে। সে খবর ভাসতে ভাসতে কলকাতা ছাড়িয়ে সুদূর কামারপুকুরে সারদামণির কানেও পৌঁছয়। কেউ বলে মৃগীরোগ, কেউ বা বলে রানির মন্দিরে গিয়ে পাগল হয়ে গেছে রামকৃষ্ণ। সেসব শুনে অস্থির সারদাদেবী ঠিক করলেন, আর না! কলকাতা গিয়ে নিজের চোখে দেখে আসবেন অসুস্থ স্বামীকে। দরকারে সেবা করে সুস্থ করে তুলবেন তাঁকে।
সেকালে কামারপুকুর থেকে দক্ষিণেশ্বর যেতে হলে সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুরের উপর দিয়ে যেতে হত। পথে সহযাত্রীদের থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলেন সারদা। দিনের আলো ফুরিয়ে অন্ধকার নেমেছে। চারপাশে গা ছমছমে জঙ্গল। সেই জনমানবশূন্য অরণ্যের ভিতর আচমকা মা সারদার পথরোধ করে দাঁড়ায় ভয়ংকর একদল ডাকাত। কথিত আছে, সেদিন লজ্জাশীলা গৃহবধূ সারদার চোখের ভেতরে নিজেদের আরাধ্যা দেবী মা কালীর রক্তচক্ষু দেখেছিল ডাকাতেরা। নিজেদের অপরাধ বুঝতে পেরে মা সারদার পায়ে লুটিয়ে পড়ে তারা। কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চায়। ডাকাত ভক্তদের অনুরোধে সে রাত্তিরটুকু পুরুষোত্তমপুরেই কাটাতে হয় মা সারদাকে। দেবীজ্ঞানে তাঁর সেবা করে ডাকাতেরা। রাতে মাকে খেতে দেওয়া হয় চাল-কলাই ভাজা। পরের দিন সেই ডাকাতেরাই তাঁকে পৌঁছে দেয় তারকেশ্বরে, অপেক্ষমান বাকি সঙ্গীদের কাছে। সেদিন মা সারদার মুখে ভয়ঙ্করী ডাকাতকালীর ঘোরবর্ণা রূপ দেখেছিল ডাকাতেরা। সে রূপেই আজও পুজো হয় পুরুষোত্তমপুরের ডাকাত কালী। দেবীর গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণ, চোখ দুটো টকটকে লাল। চার প্রহরে চারবার পুজো হয় মায়ের। পুজোর প্রসাদে আজও ফল-মিষ্টি, লুচি ভোগের পাশাপাশি নিয়ম মেনে রাখা হয় মা সারদাকে দেওয়া চালভাজা কলাইভাজাও।
হুগলি জেলার সিঙ্গুরের কাছেই পুরুষোত্তমপুরে অবস্থিত ডাকাত কালীমন্দির বাংলার অন্যতম এক প্রাচীন, বিখ্যাত মন্দির। এককালে ডাকাতদের দ্বারাই পূজিতা হতেন দেবী। বঙ্গদেশে ডাকাতদের গল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে কালীপুজোর ঐতিহ্য। বাংলার দুধর্ষ ডাকাতদের প্রায় সকলেই ছিল মা কালীর ভক্ত। নিয়মিত শ্যামা মায়ের পুজো দিত তারা। কালী পুজো দিয়ে তবেই বের হত ডাকাতি করতে। খুনজখম লুঠতরাজ শেষে ফিরে এসে ডাকাতি করা সামগ্রী সব অর্পণ করত মায়ের চরণে। তন্ত্রমতে মদ-মাংস দিয়ে পুজো হত মায়ের। হত নরবলিও।
সিঙ্গুরের কালীপুজোর সঙ্গেও মিশে রয়েছে হাড় হিম করা ডাকাতদের কাহিনি। সিঙ্গুরের ডাকাত কালীমন্দির তেমনই এক মিথ। স্থানীয়রা এই ডাকাত কালীকে এতটাই জাগ্রত মনে করেন যে মন্দিরের নিত্যপুজো ছাড়া আশেপাশের তিনটি গ্রামে আর কোনও কালীমূর্তির পুজো হয় না। মূর্তি তো দূরের কথা, গ্রামের কোনও বাড়িতে মা কালীর ছবি লাগানো ক্যালেন্ডারও টাঙায় না কেউ। হুগলি জেলার এই প্রাচীন জনপদ আর তার বিখ্যাত ডাকাত কালীর মন্দির নিয়ে আজও কানে আসে অজস্র জনশ্রুতি। সেসব কাহিনি শুনলে ভয়ে রোমাঞ্চে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে আজও।
প্রাচীন সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থিত সিঙ্গুর এককালে বেশ সমৃদ্ধ গ্রাম ও বন্দর ছিল। তার আদি নাম ছিল সিংহপুর। খ্রীষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এখানে রাজত্ব করতেন মহারাজা সিহবাহু বা সিংহবাহু। তাঁর নামানুসারেই রাজধানীর নাম হয় সিংহপুর। রাজার জ্যেষ্ঠপুত্র বিজয়সিংহ বাবার অবাধ্য হওয়ায় রাজা সমস্ত সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত করেন তাঁকে। পিতৃরাজ্য থেকে নির্বাসিত হয়ে বিজয়সিংহ দেশান্তরে যাবেন স্থির করেন। তিনি নিজের অনুগত সাতশ যুদ্ধকুশল সেনা নিয়ে সমুদ্রযাত্রা করেন।
প্রথমে সোপারে, ও পরে লঙ্কাদ্বীপে যাত্রা করেন তাঁরা। লঙ্কার আদি নাম ছিল তাম্বপন্নি বা তাম্রপর্ণী। বিজয়সিংহ ও তাঁর দলবল তাম্রপর্ণী দ্বীপে পদার্পণ করা মাত্রই সেখানকার রাজা বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুদ্ধ শেষে সেখানকার অধিবাসীদের পরাস্ত করে দ্বীপ অধিকার করেন বিজয় ও তাঁর বাহিনী। সিংহাসনে নিজের অধিকার পাকাপাকি করতে কিছুদিন পরে তিনি সেখানকার রাজকন্যাকে বিবাহও করেন। সিঙ্গুরের সিংহ-রাজবংশ ডালপালা মেলে সুদূর লঙ্কায়। রাজা হওয়ার পর লঙ্কাদ্বীপের নাম বদলে দিলেন বিজয়। সিংহরাজবংশের নতুন রাজধানীর নাম হল সিংহল।
সিঙ্গুরের ডাকাত কালীমন্দির সুপ্রাচীন, সন্দেহ নেই। ডাকাতদের প্রতিষ্ঠিত পুজো বলেই মায়ের নাম ডাকাত কালী। কালের সম্মার্জনীতে মুছে গেছে অনেক ইতিহাস, ফলে কে, কত সনে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সে কথা বলা মুশকিল। তবে এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডাকাত সনাতন বাগদির নাম। এই মন্দিরে তিনি কালী পুজো করতেন। মনে করা হয় প্রাচীন ডাকাতকালী মন্দিরের তিনিই ছিলেন শেষ সেবক। তাঁর মৃত্যুর পরে পরেই এই মন্দিরের নিত্যপুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে রঘু ও গগন ডাকাত ঘট স্থাপন করে আবার সেই মন্দির চত্তরে মা কালীর পুজো শুরু করেছিলেন। (Singur Dakat Kali)
ডাকাত-কালীর এই পুজোকে কেন্দ্র করে প্রচলিত আছে নানা কাহিনি। সিঙ্গুর তখন একেবারে গণ্ডগ্রাম। চারপাশে ঘন জঙ্গল, তার বহু অংশে সূর্যের আলো পর্যন্ত পৌঁছয় না। পথেঘাটে হিংস্র পশুর ভয়। পাশেই সরস্বতী নদীর অববাহিকা। সেখানে বহু ডাকাতের বসবাস ছিল। তেমনই এক দুঃসাহসী ডাকাত সর্দার ছিলেন সনাতন বাগদী। নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে দেবী কালীর উপাসনা করতেন তিনি। একদিন সনাতন বাগদী ডাকাতি করতে বের হবেন। ঘোর অমা নিশীথে মায়ের পূজা দিয়ে তবেই কাজে বেরোবে তারা। সেইমতো নানা পূজার উপাচারে সেজে উঠেছে মন্দির। এদিকে সেদিকে ছড়িয়ে বসে আছে ডাকাত দল। সবাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত এবং সুরাপনে মত্ত। হঠাৎ সনাতন উচ্চকণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বলি কোথায়?’
যেমন তেমন বলি নয়, একেবারে নরবলি। কিন্তু সেবার মায়ের চরণে উৎসর্গ করার জন্য হতভাগ্য কাউকে ধরে আনা হয়নি। দলের বাকি ডাকাতেরা জানালো সে কথা, 'একে চৈত্র মাস! ঝড় বৃষ্টি লেগেই আছে! সব ওলট-পালট করে দিচ্ছে। ঘর থেকে বের হতে পারেনি কেউ। কোথায় জুটবে শিকার? কোথায় মিলবে বলি?’ গর্জে উঠলেন সনাতন, ‘সে কী! চৈত্র মাস, তাই অনাহারে থাকবেন? রক্ত পাবেন না? সে হবে না! শ্যামা মা অভুক্ত থাকবেন– তাও কি হয়! যে ভাবে পারিস বলি ধরে আন।’ ডাকাতির ভাগবখরা নিয়ে আগে থেকেই দলে অসন্তোষ ছিল। তাই সর্দারের কথায় কর্ণপাত করল না বাকি ডাকাতেরা। নিজের সাঙ্গপাঙ্গদের এই অবহেলায় ক্ষেপে উঠলেন সনাতন বাগদী। তাঁর রাগের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ল যেন। রাগে কাঁপতে কাঁপতে তিনি বললেন, "আমার আদেশ অমান্য করা! এত বড় স্পর্ধা! তোদের সবকটাকে আজ মায়ের পায়ে বলি দেব।" রাগে আক্রোশে উন্মুক্ত তরবারি হাতে, মুখে বিকট শব্দ করে নিজের দলের লোকেদের ওপরেই চড়াও হলেন ডাকাত-সর্দার সনাতন।
সেদিন ছিল তুমুল ঝড়-জলের রাত। অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল। এদিকে মতপার্থক্য চরমে ওঠায় ততক্ষণে দুভাগ হয়ে গেছে বিভ্রান্ত ডাকাতদল৷ একদল সটান আক্রমণ করে বসল সর্দারকে। আর একদল, যারা সনাতন বাগদীর অনুগত ছিল তারা সর্দারের পক্ষ নিয়ে বিদ্রোহী ডাকাতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিল। ডাকাতদের নিজেদের মধ্যেই শুরু হল ঘোরতর মারামারি কাটাকাটি।
সেই সময় একদল তীর্থযাত্রী ঐ জঙ্গলের পথ ধরেই তারকেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল পুজো দিতে। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও তাঁরা মশাল জ্বালিয়ে চলছিল। ওই দলে কেবলমাত্র সাধারণ দীন-দরিদ্র মানুষ ছিল না, ছিল চন্দননগর-ভদ্রেশ্বর-শেওড়াফুলি এলাকার বেশ কিছু অবস্থাসম্পন্ন যাত্রীও। তাঁদের সাথে ছিল বেশ কিছু তাগড়াই জোয়ান লোকজন, লাঠিয়াল ও সর্দার। তাঁরা মন্দিরের কাছাকাছি এসে দেখতে পেল সনাতন ডাকাতেরা স্যাঙাতেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। ডাকাতদেরও নজর পড়েছিল তীর্থযাত্রীদের ওপরে। সেদিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে সনাতন তাঁর দলের বাকিদের ডেকে বললেন, ‘ওই দেখ মায়ের পুজোর বলি মা নিজেই নিয়ে এসেছেন। জয় মা! চল চল, আজ মায়ের গলায় নরশিরের মালা দোলাব।" সর্দারের কথা শুনে দলের বাকিরা হা-রে-রে রে চিৎকার করে দশ দিক কাঁপিয়ে তেড়ে গেল যাত্রীদলের দিকে।
ডাকাতদের মারমুখী দেখে পাল্টা আক্রমণ করে বসল যাত্রীদলের সঙ্গে থাকা লাঠিয়াল-সর্দারেরা। শুরু হয়ে গেল ভীষণ লড়াই। অন্ধকার ঝড়-জলের রাত্রে যাত্রীদলের সাথে ডাকাত দলের এই ভীষণ লড়াইয়ে পরাজয় ঘটল ডাকাতদের। সংঘর্ষে বেঘোরে প্রাণ হারাল নিরীহ তীর্থযাত্রী সহ অনেক ডাকাত। অনেকে আহত হল, পালিয়ে প্রাণে বাঁচল বাকিরা। মন্দিরের সামনেই মারা পড়লেন কুখ্যাত ডাকাত সনাতন বাগদী। মন্দিরের দরজার সামনেই পড়ে ছিল তাঁর প্রাণহীন দেহ। পরের দিন সকালে খবর পেয়ে আশেপাশের পল্লীর লোকেরা এসে দেখে, মন্দির চত্বর আর তার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে অসংখ্য মৃতদেহ। কালীবাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত। নির্মমভাবে ভাঙা হয়েছে মা কালীর মূর্তিও। এই ভয়ানক ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন সিঙ্গুরের ডাকাত কালীবাড়ি পরিত্যক্ত ছিল। ভীষণ অরণ্যের মধ্যে লোকচক্ষুর আড়ালে এক পুকুরের ধারে নিকটবর্তী শ্মশানের কাছে দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে ছিল এই কালীমন্দির– ভগ্ন, জীর্ণ ও উপেক্ষিত।
তবে সনাতন বাগদীর পরেও যে এই অঞ্চলে ডাকাতের উপদ্রব ছিল তার উল্লেখ ইতিহাসের পাতায় রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দির গোড়ার দিকে এই অঞ্চলে ডাকাত গগন সর্দারের দাপট ছিল। ওই সময় ওই অঞ্চলে ত্রাস তৈরি করেছিলেন তিনি। শোনা যায়, হঠাৎ করেই জঙ্গলের ভিতর ওই জরাজীর্ণ মন্দির চত্তর আবিষ্কার করেন গগন। সেখানে মায়ের ভগ্ন মূর্তি পড়ে থাকতে দেখে নতুন করে ঘটস্থাপনা করেন। আবার শুরু হয় মা ডাকাত-কালীর পুজো। কোথাও ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে গগন ঐ ঘটে ফুল চড়িয়ে মা কালীর পুজো করতেন। যদি ঘট থেকে ফুল গড়িয়ে পড়ত, তাহলে সে রাত্রে ডাকাতি করতে যেতেন। ফুল না পড়লে যেতেন না। তাঁরা মনে করতেন, ঘট থেকে ফুল পড়া মানে মায়ের আশীর্বাদ পাওয়া।
এই ডাকাত কালী মন্দিরকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানারকম জনশ্রুতি। গগন ডাকাত নিয়মিত মা ডাকাত কালীর পুজো করলেও সেভাবে মন্দির স্থাপনা করেননি। সিঙ্গুরের ডাকাতে কালী মন্দির পরবর্তীতে আবার প্রতিষ্ঠা হয় মায়ের স্বপ্নাদেশে। কোনও এক সময় পাশের গ্রামের এক অবস্থাপন্ন গৃহস্থ চাষের সামগ্রী নিয়ে বেচাকেনার জন্য শেওড়াফুলি হাটে যাচ্ছিলেন। গরুর পিঠে শস্য বোঝাই করে সিঙ্গুরের ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে গাছের ছায়ায় বসে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ঘুমের মধ্যেই মা ডাকাত কালী তাঁকে স্বপ্ন দেন বাড়ি ফিরে যেতে এবং ওই স্থানে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে। মোড়ল বাড়ি ফিরে গিয়ে গ্রামের সবাইকে ডেকে ঘটনাটি বলেন। যে শস্যের বস্তা বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল মোড়ল, সেই বস্তায় সোনার মোহর পাওয়া যায়। তা দিয়েই দেবীর ইচ্ছানুসারে তৈরি করা হয় একচালার ছোট মন্দির। এর কিছুকাল পরে বর্ধমানের রাজাকে মা স্বপ্ন দেন বড় মন্দির গড়ে পুজোর ব্যবস্থা করতে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে কালবিলম্ব না করে তক্ষুনি মায়ের পুজোর জন্য জমি দান করেন বর্ধমানের রাজা। সেবাইত রেখে দেবীর নিত্যপূজার ব্যবস্থা করা হয়। সেই সেবাইতের বংশধরেরা এখনও পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মা সারদার জীবনকাহিনি। দেবীর পুজো হয়য় কারণবারি দিয়ে। এছাড়া পুজোর ভোগে দেওয়া হয় চাল-কলাই ভাজা।
পুরুষোত্তমপুর গ্রামে এই ডাকাতকালীর মন্দির থাকায় মল্লিকপুর, জামিনবেড়িয়া ও পুরষোত্তমপুর– এই তিন গ্রামে কোনো বাড়িতে বা বারোয়ারিতে কোনও কালীপুজো হয় না। মা এখানে এতটাই জাগ্রত যে, এই প্রতিমার পুজো ছাড়া অন্য কালী প্রতিমার পুজো করতে সাহস পায় না এলাকার মানুষজন। বছরে একবার কালীপুজোর দিন শূদ্রদের আনা গঙ্গা জলে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে ঘটের জল পাল্টানো হয়। সেই সময় মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারে না কোনও মহিলা। বলি প্রথা আজও আছে মন্দিরে। চার প্রহরে চারবার পুজো ও ছাগবলি হয়। মাতৃ মূর্তি দুই ডাকাত সর্দার প্রতিষ্ঠা করলেও কালির মন্দির প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় চালকেবাটি গ্রামের মোড়ল পরিবার। উচুঁ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি চালা মন্দির। প্রাচীনকালে টেরাকোটার কাজ থাকলেও আজ তা বিলুপ্তপ্রায়। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির। তবে এই মন্দিরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় গর্ভগৃহের কাঁঠাল কাঠের তৈরি দরজাটি। কারুশিল্পের সুন্দর নিদর্শন এই প্রাচীন দরজা।