Latest News

সত্যজিতের ‘খগম’ গ্রাফিক নভেলে! নস্টালজিয়া ফেরাল ‘সিঙ্গল শট’

চৈতালি দত্ত

“সাপের ভাষা, সাপের শিস/ ফিস্ ফিস্ ফিস্ ফিস্” ফিরল। ছোটবেলার গায়ে কাঁটা দেওয়া, শিরদাঁড়া বেয়ে হিমেল স্রোত নেমে যাওয়ার অনুভূতি আবার ফিরে এল। আট থেকে আশি সব বয়সের পাঠকের প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। তাঁর ছোটগল্প ‘খগম’ (Khagam)-ও কারও অজানা নয়। সাধুর অভিশাপে কী ভাবে জলজ্যান্ত মানুষ সাপ হয়ে ওঠেন, রোমাঞ্চকর সেই গল্পই বলে সত্যজিতের ‘খগম’। নতুন প্রকাশনা সংস্থা সিঙ্গল শট-এর হাত ধরে ফিরে এল সেই ফেলে আসা কাহিনি।

সিঙ্গল শট-এর প্রথম নিবেদন ‘খগম’। গ্রাফিক নভেল (graphic novel) আকারে প্রকাশিত হয়েছে ছোটগল্পটি। গ্রাফিক ছবিতে ‘খগম’ ফুটিয়ে তোলার নেপথ্যে রয়েছেন শমীক চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বিজ্ঞাপন সংস্থা গ্রিনিং ট্রি।

বিজ্ঞাপন জগতের চার মূর্তি শমীক চট্টোপাধ্যায়, অন্তরা চৌধুরী, শুভময় বসু এবং প্রসেনজিৎ ঘোষের তৈরি প্রকাশনা সংস্থা সিঙ্গল শট-এর যাত্রা শুরু হল এই গ্রাফিক নভেলের হাত ধরেই। গত প্রায় দু’দশক ধরে বিজ্ঞাপন জগতে দাপিয়ে কাজ করেছেন শমীক, অন্তরারা। ‘অটোগ্রাফ’, ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’-র মতো ছবির পোস্টারে ইতিমধ্যেই মন কেড়েছে তাঁদের বিজ্ঞাপন সংস্থা গ্রিনিং ট্রি।

শুক্রবার সাউথ সিটি মলের স্টারমার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয় ‘খগম’-এর গ্রাফিক নভেল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সত্যজিৎপুত্র সন্দীপ রায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, রঙ্গন চক্রবর্তী, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

Satyajit Ray, Khagam, graphic novel

বইটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে সন্দীপ রায় বলেন, “বাবার লেখা অন্যতম সেরা একটি গল্প ‘খগম’। আমার বিশ্বাস ছিল, বাবার কাজ, তাঁর ভাবধারা, শিল্পরুচি অক্ষুণ্ন রেখেও শমীকরা নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে এই কাজ করতে পারবেন। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে বাংলা বই পড়ার চর্চা নেই বললেই চলে। এই গ্রাফিক নভেল পড়ে যদি পাঠকেরা আসল গল্পটি পড়েন এবং তাঁদের মধ্যে যদি বাংলায় বাবার লেখা আরও নানা গল্প পড়ার উৎসাহ জাগে, সেটাই হবে এই প্রচেষ্টার আসল সার্থকতা।”

Satyajit Ray, Khagam, graphic novel

শমীক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বহু বছর ধরে গ্রাফিক্সের কাজ করছি। দেড়শোর বেশি সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজে কাজ করেছি। ইংরেজি বা অন্য বিদেশি ভাষায় গ্রাফিক নভেলের অনেক কাজ হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার এত সমৃদ্ধ। এই প্রজন্মের শিশুরা বাংলা ভাষা থেকে দূরে থাকায় তাদের কাছে সেই গল্পগুলো পৌঁছয় না। সে কথা মাথায় রেখেই বাংলায় গ্রাফিক নভেল করার পরিকল্পনা। এ ক্ষেত্রে ‘খগম’-এর চেয়ে রোমাঞ্চকর গল্প আর কী-ই বা হতে পারত! বইটি ১০০ পৃষ্ঠার। এই ধরনের নভেল একটা করলে হবে না। পথ চলা সবে শুরু হল। এরপর আরও গল্পের বই গ্রাফিক নভেল আকারে ভবিষ্যতে আনার ইচ্ছে রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন,’খগম এর গল্পে একটা মানুষ সাপে পরিণত হচ্ছে, এটা কিন্তু আমি গ্রাফিকের মাধ্যমে বইতে তুলে ধরতে পেরেছি। যেভাবে গল্প বলা, সেটাকে গ্রাফিকে যখন তুলে ধরব, যেন সেই গা ছমছমে অনুভূতি থাকে। সত্যজিৎ রায় তাঁর গল্পের ইলাস্ট্রেশন নিজে করতেন। এক্ষেত্রে ইলাস্ট্রেশন এবং শিল্প নির্দেশনার দায়িত্বে শুভব্রত বসু।’

বিশিষ্ট পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “যে কোনও ভিজ্যুয়াল আর্ট মানুষ অনেক বেশি মনে রাখতে পারেন। লেখার সঙ্গে ছবি মানুষকে অনেক বেশি আকর্ষণ করে। সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যে গল্প নিয়ে গ্রাফিক নভেল হয়েছে তাতে যে কোনও বয়সের মানুষই আকৃষ্ট হবেন। কারণ যাঁর ছোটগল্পের উপর কাজ, তিনি সত্যজিৎ রায়। এই কাজটি করা কিন্তু খুব সহজ ছিল না। গ্রিনিং ট্রি অনেক বছর ধরেই নানা ধরনের বিজ্ঞাপন ও ভিজ্যুয়াল আর্টের কাজ করছে। ফলে শমীক, অন্তরা যখন গ্রাফিক নভেলের কাজ শুরু করেছিলেন, তখন আমি নিশ্চিত ছিলাম যে কাজটা ভাল হবে। বইটির ইলাস্ট্রেশন, কালার, কনট্রাস্ট অত্যন্ত মনোগ্রাহী।”

সিঙ্গল শট-এর এই বইটি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় পাওয়া যাবে।

দেশভাগের ৭৫ বছর, যন্ত্রণার স্মৃতিকথা এবার ইংরেজিতে, প্রকাশিত হল নতুন বই

You might also like