শেষ আপডেট: 13th November 2024 15:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সমস্যা, আরব দুনিয়া সহ চিন সাগরে অশান্তির আবহে বিশ্ব ফের একবার ঠান্ডাযুদ্ধের মুখোমুখি। এরসঙ্গে আমেরিকায় সরকার বদলে পরিস্থিতি আরও ঘোরাল মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। দুই বৃহৎ শক্তিধর দেশ কমিউনিস্ট চিন ও রাশিয়া যখন একদিকে দাঁড়িয়ে, তখন আমেরিকা ও তার মোসাহেবের দল কিছু ইউরোপীয় বিশেষত খ্রিস্টান দেশ অন্যদিকে।
এই দুই শক্তির মাঝখানে অবস্থান করছে 'বিশ্বগুরু' ভারত। কারণ, ধারে ও ভারে এখন ভারত একটি বৃহত্তর শক্তির কেন্দ্র বলে আস্থার জায়গা নিয়েছে। যেখানে ভারত কোনদিকে যাবে, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে যখন আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বন্ধুত্বের ঋণ মেটাতে তোড়জোড় করছেন, তখন রাশিয়াও তার প্রযুক্তি ও কৌশলগত উন্নতির পরমাণু বোমারু বিমান সরবরাহে সবুজ সংকেত দিয়েছে। যা নয়াদিল্লির তরফে চিন ও পাকিস্তানের সমর বহরের প্রতি বিপদঘণ্টির সমতুল।
ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া ভারতকে পরমাণু বোমা মারতে সক্ষম যুদ্ধবিমান তুপোলেভ টিইউ ১৬০এম বা চলতি কথায় শ্বেত রাজহংস সরবরাহের চুক্তি পুনর্নবীকরণে সম্মত হয়েছে। ডিফেন্স ডট ইন প্রতিরক্ষা সাংবাদিক সন্দীপ উন্নিনাথনকে উদ্ধৃত করে এই সংবাদ জানিয়েছে। প্রায় দুদশক আগে রাশিয়া এই টিইউ সিরিজের বিমান ভারতকে বেচতে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তখন দামের কথা ভেবে নয়াদিল্লি নৌবাহিনীর জন্য এই বিমান কিনতে পারেনি।
বর্তমানে আরও উন্নত এই বিমান হাতে পেলে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী আরও মজবুত হয়ে উঠবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শত্রু দমন ও নজরদারিতে চিন-পাকিস্তানকে বাগে রাখতে পারবে। ভূমি ও সমুদ্রের উপর পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম এই যুদ্ধবিমান শব্দের চেয়ে গতিশীল একবার তেল ভরে ১২ হাজার কিমি উড়তে সক্ষম। একসঙ্গে ১২টি দূরপাল্লার ক্রুজ অথবা স্বল্পপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র চালাতে পারে শ্বেত রাজহংস।
এছাড়াও রাশিয়া ভারতকে সুখোই-৩০এমকেআই যুদ্ধবিমানের অত্যাবশ্যকীয় ধাতু সরবরাহে রাজি হয়েছে। এর ফলে সুখোইকে এদেশে বসেই আরও অত্যাধুনিক ও সমরকৌশলী করা সম্ভব হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বদলের পর থেকে আমেরিকার সঙ্গে চিন ও রাশিয়ার নতুন করে মেরুকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়া মন্ত্রিসভায় যাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসছেন, তাতে একটা বিষয় সাফ যে তিনি চিনের বিরুদ্ধে অস্তিত্বের যুদ্ধ ঘোষণা করতে চলেছেন। বিশেষ করে ফ্লোরিডার সেনেটর মার্কো রুবিওকে, যিনি ভারত ও ইজরায়েলপন্থী এবং চিন বিরোধী বলে জনপ্রিয়, তাঁকে বিদেশ সচিব করছেন। একইভাবে ফ্লোরিডা থেকেই জনপ্রতিনিধিসভায় নির্বাচিত মাইক ওয়াল্টজকে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করতে চলেছেন। মাইক ওয়াল্টজ শুধু চিন বিরোধী বলেই খ্যাত নন, তিনি আমেরিকা কংগ্রেসে ভারতবন্ধু গোষ্ঠীর প্রধানও।
এদিকে, হাত গুটিয়ে বসে নেই চিন। গত মাসে তাইওয়ানকে ঘিরে সমুদ্র ও আকাশপথে চিনের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় চিন বেশকিছু নয়া আমদানি করা জেট বিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি হাজির করে। তারমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বোমারু বিমানের অত্যাধুনিক নমুনা প্রকাশ্যে আনা যা ঠান্ডাযুদ্ধের সময় আকাশে উড়েছিল।
ঠান্ডাযুদ্ধের সেই বি-৫২কে সেসময় এই একই জায়গা থেকে উড়তে দেখা গিয়েছিল, যেখান থেকে এবার তারই অত্যাধুনিক নমুনা এইচ-৬কে একবিংশ শতকের আকাশে দেখা গেল। এই বিমানকে দেখিয়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী মানুষকে ভয় দেখিয়েছে চিন। উল্লেখ্য, তাইওয়ানে চিনা আগ্রাসনের ঘোরতর বিরোধী আমেরিকা। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে, ১৫৩টি চিনা যুদ্ধবিমান, ১৪টি নৌবাহিনীর জাহাজ এবং ১২টি অন্য জাহাজ তারা দ্বীপের আশপাশে চিহ্নিত করেছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ফের একবার শীতল থেকে শীতলতর রূপ নিতে চলেছে। এই পরিবেশে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলি আতঙ্কের প্রহর গুনে চলেছে। কারণ, ঠান্ডাযুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ না হলেও বাণিজ্য নীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে। ফলে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায় দশা হতে পারে পিছিয়ে থাকা ও মধ্যপন্থা নেওয়া দেশগুলির কপালে।