Latest News

হিন্দি ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক, নেপথ্যে ছিলেন ৩২ বছরের এই বাঙালি যুবক

দ্য ওয়াল ম্যাগাজিন ব্যুরো: সালটা ১৯৩৫, একটা অজানা বিস্ফোরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে হিন্দি ছবির জগত। নিতিন বোসের পরিচালনায় ধূপছাঁও’ ছবির শুটিং শুরু হয়েছে নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওয়। স্টারকাস্টও দেখার মতো। নামভূমিকায় রয়েছেন পাহাড়ী সান্যাল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, উমা দেবীর মতো ডাকসাইটে অভিনেতা অভিনেত্রীরা। সব কিছু স্বাভাবিকই ছিল, হঠাৎ এক অদ্ভুত আইডিয়া খেলে গেল পরিচালকের মাথায়। প্রস্তাব দিলেন ছবিতে নায়িকার মুখে গান বসালে কেমন হয়! তখন নিউ থিয়েটার্স-এ সুরের মধ্যমণি আরেক বাঙালি। এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি লুফে নিলেন সেই প্রস্তাব। তাঁর সঙ্গে যোগ দিল আরও দুজন, কে এল সায়গল আর কানন দেবী। সেদিন ভারতীয় ছবির জগতে এক নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল সুপ্রভা সরকার, পারুল ঘোষের গাওয়া কোরাস ‘ম্যায় খুশ হোনা চাহুঁ……’। আর এই সমস্ত বিপ্লবের নেপথ্যে ছিলেন এক বাঙালি সুরকার, তিনি, সুরের জগতের অদ্বিতীয় নাম রাইচাঁদ বড়াল (Raichand Boral)।

কলেজ স্ট্রিট, মদন গোপাল লেন, গোবিন্দ সেন লেনের সরু সরু অলিগলি ছাড়িয়ে প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট। উত্তর কলকাত্তাইয়া গলি। গলির মুখেই বড়ালদের সুপ্রাচীন বাড়ি। বাড়ি তো নয়, যেন জ্যান্ত ইতিহাস। পূর্বপুরুষ প্রেমচাঁদ বড়াল ছিলেন বর্ধমান মহারাজার দেওয়ান। রাইচাঁদের বাবা লালচাঁদ বড়াল ছিলেন সেকালের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী। তাঁদের ১/১, প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের বাড়ি সেসময় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আখড়া হয়ে উঠেছিল। বিশ্বনাথ রাও, রাধিকা গোস্বামী, মিয়া রমজান খাঁ-এর মতো নামী দামি শিল্পীদের আসাযাওয়া লেগেই থাকত। লালচাঁদের তিন ছেলের মধ্যে কনিষ্ঠতম রাইচাঁদের (Raichand Boral) জন্ম হয়েছিল ১৯০৩ সালে, ব্রিটিশ ভারতে। বাড়িতে গানবাজনার পরিবেশ তো ছিলই। তার পাশাপাশি ছেলের প্রাথমিক তালিমের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বাবা লালচাঁদ স্বয়ং। একটু বড় হতেই রামপুর ঘরানার উস্তাদ মুস্তাদ হুসেন খান সাহেবের কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। ধ্রুপদ শিখতেন পণ্ডিত বিশ্বনাথ রায়ের কাছে। শিখতেন তবলা আর সরোদও। ভজন, ঠুমরি, গজল গানে অবিশ্বাস্য দখল ছিল রাইচাঁদের।

Image - হিন্দি ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক, নেপথ্যে ছিলেন ৩২ বছরের এই বাঙালি যুবক

ভারতে রেডিও সম্প্রচার শুরু হয় ১৯২৭ সাল নাগাদ। তৎকালীন বোম্বে আর কলকাতায় মাত্র দুটি ব্যক্তিগত ট্রান্সমিটারের ভরসায় গড়ে ওঠে প্রথম বেতারকেন্দ্র। রেডিও স্টেশনের রাশভারী কর্তা তখন নৃপেন মজুমদার। তাঁর ডাকেই ভারতীয় সংগীত বিভাগের প্রযোজক হিসাবে বেতারে যোগ দিলেন রাইচাঁদ বড়াল (Raichand Boral)।

বম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তখন বাঙালিদের রমরমা। সিনেমার ভাষাই যে শিল্পের আধুনিকতর প্রকাশ-মাধ্যম হতে চলেছে তা নিয়ে সংশয় নেই আর। ১৯৩০ সালে প্রথম ছবির জগতে পা রাখলেন রাইচাঁদ বড়াল। নির্বাক ছবি ‘চাষার মেয়ে’তে প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা করলেও তাঁর উত্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সবাক ছবির ইতিহাস। ১৯৩৫ সালে নিউ থিয়েটার্সের শব্দযন্ত্রী মুকুল বসুর সাহায্যে নতুন পদ্ধতিতে নাচ-গানের রেকর্ডিং শুরু করলেন তিনি। তাঁর সুরে সেসময় গান গাননি এমন শিল্পী খুঁজে পাওয়া ভার। পঙ্কজকুমার মল্লিক, কুন্দনলাল সায়গল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, কানন দেবী, চন্দ্রাবতী দেবী, উমাশশী, পাহাড়ী সান্যাল সহ সে যুগের বাংলা গানের সমস্ত মহীরুহের সঙ্গেই কাজ করেছেন রাইচাঁদ বড়াল। নিউ থিয়েটার্সেই কে এল সাইগলের সঙ্গে আলাপ আর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে রাইচাঁদের। তারপর বাকিটা ইতিহাস।

You might also like