অঞ্জলি দাশ
দূরত্ব
সরিয়ে এনেছি কিনা হাত, অন্যজন জানে।
আমি শুধু নিজেকে দেখছি শূন্য হাতে,
চারপাশ ঘিরে আছে ছাইরঙা মেঘ।
এই মেঘ ছায়াতরু, কল্পনাবিলাস...
একরোখা কলমের খোলা মুখে তুলে দেয় বৃষ্টিকণা।
যে কলম জলের ভাষাকে চেনে,
সে যদি বা নদী বয়ে আন
সরিয়ে এনেছি কিনা হাত, অন্যজন জানে।
আমি শুধু নিজেকে দেখছি শূন্য হাতে,
চারপাশ ঘিরে আছে ছাইরঙা মেঘ।
এই মেঘ ছায়াতরু, কল্পনাবিলাস...
একরোখা কলমের খোলা মুখে তুলে দেয় বৃষ্টিকণা।
যে কলম জলের ভাষাকে চেনে,
সে যদি বা নদী বয়ে আনে...তবু দু’চোখ ভেজে না।
দেখি শুকনো ঘাস, রোদ্দুরের বীজ আর পোড়ামাটি ঘর
এইসব পড়ে আছে, বন্ধনের সূত্র মুছে গেছে।
উপহার
অশ্রুপাতের বিকেলটুকু উহ্য রেখে
নিজের জন্যে উপহার সাজিয়েছ।
দুপুরের পর, একটা নীল বাক্সের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছ।
তাতে বিশ্রাম লেখা, তার মধ্যে সামান্য উৎসবরেখা,
দু’একটি বোবা মোম, জ্বালাতে শেখোনি।
হাওয়া ছুঁলে বুঝতে পারতে
তুমি সব অসঙ্গত স্বপ্ন আঁকড়ে ভেসে আছো।
নিচে এক অন্ধ কুয়োতলা, আসক্তিবিহীন শ্যাওলা,
তার ভেজা চাতালে তোমার বিরহব্যথা পড়ে আছে।
কুয়োর দড়ি বেয়ে একটু একটু করে উঠে আসছে রাত
যে রাত তোমার নয়, তবু আসতে দিয়েছ...
অশোভন এই রাতটুকু লেখা ছিল না কোথাও,
এমন কি তোমার উপহার সামগ্রীতে।
বৈকালিক
এত বেশি কুয়াশা মেখেছি, ডানা ভারী।
মাইল ফলকে, চেনা নাম লিখে লিখে এগিয়েছি,
ঋণগ্রস্ত হয়ে আছে কলমের ঠোঁট।
এত বেশি মিথ্যে অনুপান ঢেলেছি গলায়,
গন্তব্যে পৌঁছেছি চেতনাবিহীন।
আবছা মনে হলো, সামনে এক মরা নদী...
তার পাশে আমাদের স্নানবেলা পড়ে আছে।
জল চেয়ে, তুমি আজও মাটিকে আঘাত করে কাঁদাতে চাইছ,
আমি তার বুকে লিখছি রৌদ্রস্নান, লিখছি তৃষ্ণার কথা।
লিখতে চাইছি কিছু প্রশ্রয়ের শেষবেলা,
আঙুলের ডগা বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে...
পুনর্নির্মাণ
এ আরম্ভ অন্য কোনও দিকে। পথে নেমে দেখি, আজও কিছু কিছু ভাঙনের চিহ্ন লেগে আছে। শুকনো বন পেরোনোর পরই ইঙ্গিতে কামরাঙা বনের কথা বলে উড়ে গেল একঝাঁক পাখি। তাদের ডানায় সবুজ রঙ, বটফল ঠোঁটে। ওরা যুদ্ধ চেনে না। দু’চারটে খড়কুটো জড়ো হলে যৌন বাসনা জাগে।
সম্মোহনে ওদের ছেড়ে যাওয়া দু’একটি পালক গুঁজে নিয়েছি পিঠে। এবার আর মাটি নেই পায়ের তলায়। শূন্য থেকে দেখি বনের সামনে এসে ক্রমে সুরভিত হয়ে উঠছে ভাঙা পথ... বোঝা যায় ওই বন ফলবতী, তার মানে পুনর্জাগরণ। ধীরে ধীরে ঋতু পালটাতে থাকে। বসন্তের কুহু থেমে গেলে, গ্রীষ্মের খোলা দরজায় ঘাম থেকে জেগে ওঠা হাতপাখা, বসতে বলে। ভেতরে ছায়ার মানুষ, ঠান্ডা কুঁজো। মন বলছে আবার নির্মাণ।
কবি অঞ্জলি দাশের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: পরীর জীবন (১৯৯১), চিরহরিতের বিষ (১৯৯৯), এই মাস নিশ্চুপ তাঁতের (২০০১), শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০৯), মুগ্ধ হয়ে থাকি (২০১৭) পেয়েছেন বীরেন্দ্র পুরস্কার ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার।