Date : 24th May, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
ইউনুস সরবেন, নাকি ওয়াকারের অপমান হজম করে থেকে যাবেন, স্পষ্ট হবে শনিবারমক্কেলকে 'কুপরামর্শ'! এজলাস থেকেই আইনজীবীকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানোর নির্দেশ বিচারপতিরদিল্লি, কেরলে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা, সতর্কতা জারি করল স্বাস্থ্য দফতরঅগ্নিবীরকে বাঁচাতে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ, সিকিমে মৃত্যু ৬ মাস আগে সেনায় যোগ দেওয়া অফিসারেরHarvard University: বিদেশি পড়ুয়া ভর্তিতে বাধা নয়! ট্রাম্প সরকারের নির্দেশে স্থগিতাদেশ 'সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রিক হয়ে গেছে,' অবসরের দিন মন্তব্য বিচারপতি এএস ওকার মমতার পাল্টা শুভেন্দু! মুর্শিদাবাদ নিয়ে বিশেষ অধিবেশনের দাবি বিরোধী দলনেতারলোকের ভাব-ভঙ্গি দেখে বুঝতাম আমার পত্রিকা কেউ কিনবে নাকলকাতাকে জঞ্জাল মুক্ত করতে পুরসভার বড় উদ্যোগ! চালু হচ্ছে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরপূর্ণমের ঘরে ফেরা কেক কেটে উদযাপন করবে পরিবার
Ayodhya Ram Mandir Arun Yogiraj

কষ্টিপাথর ছিটকে অন্ধ হয়ে যাচ্ছিল চোখ, কীভাবে রামলালার হাসিমুখের দিব্যমূর্তি গড়লেন যোগীরাজ

টানা ৬ মাস। দিনরাত ভুলে পাথর খোদাই করে একটু একটু করে রামলালার মূর্তি গড়েছেন যোগীরাজ। পাথর কুঁদে কুঁদে ফুটিয়ে তুলেছেন পাঁচ বছর বয়সি ফুটফুটে এক শিশুকে।

কষ্টিপাথর ছিটকে অন্ধ হয়ে যাচ্ছিল চোখ, কীভাবে রামলালার হাসিমুখের দিব্যমূর্তি গড়লেন যোগীরাজ

শেষ আপডেট: 22 January 2024 17:43

দ্য ওয়াল ব্যুরো: সাত্ত্বিক আহার করেছেন দিনের পর দিন। কষ্টিপাথর কাটতে গিয়ে পাথরকুচি ছিটকে চোখটাই অন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হার মানেননি। চোখে ক্ষত নিয়েও মূর্তি গড়েছেন দিনের পরদিন। পদ্মফুলের উপর ফুটফুটে রামলালার হাসি মুখের দিব্যমূর্তি তৈরি করেছেন ভারতের অন্যতম সেরা স্থপতি অরুণ যোগীরাজ। তাঁর হাতে তৈরি মূর্তিতেই প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে আজ। অরুণ জানিয়েছেন, এক কঠিন পথে যেতে হয়েছে তাঁকে। বাধা এসেছে অনেক। পাঁচ বছরের বালকের মতো নিষ্পাপ, সরল, হাসিমুখের বিগ্রহ গড়া সহজ ছিল না।

রামমন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ড চেয়েছিল, রামলালার তিনটি মূর্তি তৈরি হোক। তার মধ্যে থেকে একটা বেছে নেওয়া হবে। ডাক পড়েছিল তিন ভাস্করের। বেঙ্গালুরুর ভাস্কর গণেশ ভাট এবং তাঁর ছাত্র বিপিন ভাদোরিয়া, মাইসুরের অরুণ যোগীরাজ এবং জয়পুরের সত্যনারায়ণ পান্ডে। শেষপর্যন্ত রামলালার বিগ্রহ তৈরির জন্য বেছে নেওয়া হয় স্থপতি অরুণ যোগীরাজকেই। আর তাঁর শিল্পকর্মই নতুন ইতিহাস রচনা করেছে ভারতে।

টানা ৬ মাস। দিনরাত ভুলে পাথর খোদাই করে একটু একটু করে রামলালার মূর্তি গড়েছেন যোগীরাজ। পাথর কুঁদে কুঁদে ফুটিয়ে তুলেছেন পাঁচ বছর বয়সি ফুটফুটে এক শিশুকে, যার দুই চোখ বড়ই মায়াবী। নিষ্পাপ, সরল দৃষ্টি, ভাবগম্ভীর মুখ কিন্তু তাতে মৃদু হাসি। রামলালার মুখ, চোখ এবং অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা সহজ ছিল না, এমনটাই বলেছেন যোগীরাজ।

ট্রাস্টি বোর্ড কেমন বিগ্রহ চায় তার একটা আভাস দিয়েছিল। এরপর ২ হাজারের বেশি ফটোগ্রাফ নিয়ে গবেষণা করেন অরুণ। বলেছেন, পাথর কুঁদতে কুঁদতে একটি কষ্টিপাথরের ছোট টুকরো ছিটকে লাগে বাঁ চোখে। পাথরকুচি ঢুকে গিয়েছিল চোখে। চোখ ফুলে ওঠে। ডাক্তার বলেন, কোনওরকমে রেটিনা বেঁচে গেছে। চোখে ব্যান্ডেজ বেঁধেও কাজ চালিয়ে যান অরুণ যোগীরাজ। একদিনের জন্যও থামেননি।

স্বামীর কাজ রোজই দেখতেন স্ত্রী বিজেতা। বলেছেন, “চোখে ক্ষত নিয়েও কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন অরুণ। হয়ত ভগবানেরই পরীক্ষা ছিল। নিষ্ঠা ও ভক্তিতে কোনও খামতি ছিল না অরুণের। নিজেকে কঠোর নিয়মে বেঁধে ফেলেন। সাত্ত্বিক খাবার খেতেন। সপরিবারে অযোধ্যায় দিনে দু’বার রামের ধ্যান করতেন। মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিয়েছেন, নিয়মিত প্রার্থনা করেছেন।”

যোগীরাজের কৃষ্ণশিলাতেই তৈরি হয়েছে রামলালার শিশু মূর্তি। রামমন্দিরের গর্ভগৃহে রাম সাপালক নন। এই রামলালার বয়স মাত্র ৫ বছর। অর্থাৎ তিনি নাবালক, বালক রাম। চোদ্দ বছর বনবাসের পর সীতা ও লক্ষ্ণণকে নিয়ে অযোধ্যা নগরীতে ফিরে আসা রাম তিনি নন। গর্ভগৃহে তিনি একাই বিরাজমান। মূল বিগ্রহের পাশে লক্ষ্মণ, সীতা নেই। মন্দির ট্রাস্টের তরফে বলেই দেওয়া হয়েছিল শিশু রামের মুখ যেন বালকোচিতই হয়। নিষ্পাপ, সরল হাসি মুখের বিগ্রহ তৈরি করতে হত যোগীরাজকে। এতদিন রামের যে মুখ আমরা বইয়ের পাতায় বা স্থাপত্যে দেখে এসেছি, এই রামলালার বিগ্রহ তেমন হবে না মোটেই। তাই পাঁচ বছরের বালক রামের মুখ কেমন হবে তা নিয়ে গভীর ভাবনাচিন্তা করতে হয় দেশের প্রখ্যাত শিল্পীকে।

অরুণ নিজেই জানিয়েছেন, দিনের পর দিন বিভিন্ন শিশুকে দেখে মনে মনে রামের ছবি আঁকতেন। বাড়ির পাশে যে বাচ্চারা খেলতে আসে তাদের হাসি মুখ, চোখ, অভিব্যক্তি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন। পাঁচ বছরের ছেলে হাসলে তাকে কেমন লাগবে সেই মুখের আদল আনতে নিজের ভাবনায়। তবে রাম এখানে পাঁচ বছরের বালক হলেও তাঁর মধ্যে ঐশ্বরিক ছাপ ফুটিয়ে তুলতে হবে। নিছকই শিশুর মুখ বিগ্রহে বসানো যাবে না। রামলালার দিব্যমূর্তিতে শিশুসুলভ মুখেও থাকবে এমন এক ভাবগম্ভীর ছাপ যার আদিঅন্ত পাওয়া যাবে না। স্বচ্ছ, নিষ্পাপ দুটি চোখ দেখলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হবে। মুখের স্মিত হাসি অভয় প্রদান করবে। অরুণ বলেছেন, “এটা ঈশ্বরের কাজ, তাই ঈশ্বরই করিয়ে নিয়েছেন।”

কর্নাটক থেকে কৃষ্ণশিলা এনে বিগ্রহ নির্মাের কাজ শুরু হয়। ম্যাঙ্গালুরু থেকে ৬০ কিমি দূরে কারকালা। এই শহরেই পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট মানের কৃষ্ণশিলা। ১০ টন ওজনের, ৬ ফুট চওড়া, ৪ ফুট পুরু এবং প্রায় এক ফুট লম্বা পাথরটি কারকালার নেল্লিকারু গ্রাম থেকে নিয়ে আসেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই বলেছেন, নেপাল দুটি দেবশিলা উপহার দিয়েছিল--ক্যালসাইট এবং কোয়ার্টজাইট। কিন্তু পরে সাধুসন্ত, পুরোহিত ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নেপালের দেবশিলা ব্যবহার করা হয়নি। দেশের কৃষ্ণশিলাতেই মূর্তি নির্মাণ হয়েছে।

১৯৮৩ সালে কর্নাটকের মাইসোরে জন্ম অরুণের। তাঁর বাবা ও দাদুও ছিলেন প্রখ্যাত স্থপতি। পাঁচ প্রজন্ম ধরে তাঁর পরিবার ভাস্কর্য শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।অরুণও খুব অল্প বয়সেই ভাস্কর হিসাবে কাজ শুরু করেন।পড়াশোনাতেও তিনি খুব ভাল ছিলেন। এমবিএ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও করতেন। তবে বেশিদিন সেই কাজ ভাল লাগেনি। ভাস্কর্যের প্রতি তাঁর সহজাত টানের কারণেই বোধহয় ২০০৮ সালে চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে ভাস্কর হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে পথ চলা শুরু হয় তাঁর। ভারতের বহু জায়গায় তাঁর তৈরি ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যাবে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্ডিয়া গেটের কাছে অমর জওয়ান জ্যোতির পিছনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ৩০ ফুটের মূর্তি।কেদারনাথের আদি শঙ্করাচার্যের ১২ ফুট মূর্তিও অরুণ যোগীরাজের তৈরি। এই মূর্তি গোটা বিশ্বে বিখ্যাত। বি আর অম্বেডকরের ১৫ ফুট লম্বা মূর্তি, স্বামী রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাদা অমৃতশীল মূর্তি, নন্দীর ছয় ফুট লম্বা একশিলা মূর্তি, চুঞ্চনাকাট্টে হনুমানজীর ২১ ফুটের লম্বা মূর্তি-সহ নানা বিখ্যাত স্থাপত্যকাজ অরুণেরই। আর এর জন্য বহুবার পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। তবে রামলালার মূর্তি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বলেই জানিয়েছেন অরুণ। তিনি বলেছেন, “আমরা থাকব না, কিন্তু আমার কাজ ইতিহাস হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে।”


ভিডিও স্টোরি