
দ্য ওয়াল ম্যাগাজিন ব্যুরো: পৌরাণিক গল্পের ড্রাগনের কথা কে না জানে? সে এক ভয়ংকর সরীসৃপ! যাদের নিশ্বাস প্রশ্বাসে আগুনের হলকা ছুটে আসে। কিন্তু ড্রাগন কি নিছকই এক কাল্পনিক চরিত্র? বাস্তব পৃথিবীর বুকে আজও লুকিয়ে নেই তো তাদের উত্তরসূরীরা?
ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ আছে যার মধ্যে অন্যতম হল আগ্নেয়গিরিবেষ্টিত রুক্ষ আর ঊষর দ্বীপ কমোডো। আর এই কমোডো দ্বীপেই দেখা মেলে এক বিশেষ ধরণের রাক্ষুসে প্রাণীর। পৌরাণিক ড্রাগনের মতো দেখতে সরীসৃপ জগতের অন্যতম বৃহদাকার এই প্রাণীর নাম কমোডো ড্রাগন (Komodo Dragon)। ইন্দোনেশিয়া ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না এদের। তবে শুধু কমোডো দ্বীপে নয়, প্রতিবেশি রিনকা, গিলি মটাং, নুসা কুড়ে ও পদার দ্বীপেও বেশি কিছু কমোডো ড্রাগনের দেখা মেলে।

পরিসংখ্যান মতে, কমোডো দ্বীপে প্রায় ১ হাজার ৭২১টি ড্রাগন রয়েছে। বাদামি রংয়ের উপর কালচে ছোপ মেশানো এই কমোডো ড্রাগনদের চেহারা অতিকায়। এদের দাঁত ধারালো, লম্বা লেজ। কামড়ে ভালোরকম বিষও রয়েছে। প্রায় তিন মিটার লম্বা এবং আশি থেকে নব্বই কেজি ওজন হয়ে থাকে কমোডো ড্রাগনদের (Komodo Dragon)। একশ পঞ্চাশ কেজি ওজনের ড্রাগনের দেখাও মিলেছে। এরা নিজেদের লম্বা, কমলা, চেরা জিভটাকে ব্যবহার করে শিকারের গন্ধ শোঁকার কাজে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ৪ কোটি বছর আগে বিবর্তনের ধারায় এশিয়া মহাদেশের বুকে জন্ম হয়েছিল এই কমোডো ড্রাগনদের। তারপর তারা পাড়ি জমিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।
আজ থেকে প্রায় দেড় কোটি বছর আগে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝের ভূ-তাত্ত্বিক সংঘর্ষের সময় কমোডো ড্রাগনদের একটি বড় অংশ চলে আসে ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি দ্বীপে। পরবর্তীতে বরফ যুগ শেষ হওয়ার পর সমুদ্রের জল প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। ফলে কমোডো ড্রাগনেরা (Komodo Dragon) বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাইরের জগত থেকে। দ্বীপের ছোট্ট ব্যাঙ থেকে শুরু করে হরিণ, ছাগল, শূকর, কুকুর, মহিষ এমনকি পরিস্থিতিবিশেষে মানুষও হজম করে ফেলতে পারে তারা। এদের লালা বিষের চেয়েও ভয়ঙ্কর। কোনও পশুকে কামড় দিলে সেই স্থানে খুব তাড়াতাড়ি জীবাণু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যার ফল অবধারিত মৃত্যু।
খাবার আর যৌনতা নিয়ে প্রায়ই মারপিট লেগে যায় কমোডো ড্রাগনদের (Komodo Dragon)। মেয়ে ড্রাগনরা বছরে মাত্র একবার সঙ্গম করতে রাজি থাকে এবং পুরুষ ড্রাগনদের কেউই এই সুযোগ হারাতে চায় না। ফলে এক নারীকে পেতে অনেক পুরুষ ড্রাগন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। শুধু বিজয়ী পুরুষ ড্রাগনটিকেই সঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করে নারী ড্রাগন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, কোমোডো ড্রাগন এই মুহূর্তে রয়েছে বিপন্নতার তালিকার সব চেয়ে ওপরে। যে কোনও দিন জলবায়ুর পরিবর্তনের শিকার হবে এই প্রজাতিটিও।