
দ্য ওয়াল ম্যাগাজিন ব্যুরো: ১৯৩৯ সাল। হাঙ্গেরিয়ার সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পিস্তল শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ চলছে। দেশের তাবড়-তাবড় পিস্তল শ্যুটার হাজির সেখানে। সবার লক্ষ্য একটাই। বিজয়ীয় সেরা সম্মান- স্বর্ণপদক। লোকজন হই হট্টগোল সংবাদমাধ্যমের ভিড় থেকে দূরে একা একা দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন। চুপচাপ স্থির দৃষ্টি, শক্ত চোয়াল, চোখেমুখে দৃঢ় প্রত্যয়। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তাঁর সমস্ত চিন্তাশক্তিকে যেন একটিই লক্ষে একাগ্র করার চেষ্টা করছেন। হঠাৎ তাঁকে দেখতে পেয়ে অংশগ্রহণ করতে আসা একদল প্রতিযোগী ছুটে গেল তাঁর কাছে। যাবে নাই বা কেন? তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন দেশের সেরা শ্যুটার। যিনি দেশের হয়ে একটাও শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় কখনও হননি। সেই প্রবাদপ্রতিম মানুষটা প্রায় দু বছর পর পা রেখেছেন প্রতিযোগিতার মাঠে। ভিড় তো হবেই। (Hungarian national shooting champion)

তাঁকে ঘিরে ধরা প্রতিযোগীদের মধ্যে একজন বলে উঠলেন, “ক্যারোলি তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাদের অনুপ্রাণিত করতে তুমি এত দূর এসেছো। আমরা জানতাম বেশিদিন তুমি প্রতিযোগিতার মাঠ ছেড়ে থাকতে পারবে না। আমাদের মত ইয়ংস্টারদের কাছে তুমি হচ্ছ সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তোমার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। আমাদের সমবেদনাও রইলো তোমার জন্য। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে তোমার মতো এক অসাধারণ প্রতিভা এভাবে নষ্ট হয়ে গেল, এ যে কত দুঃখের…”
সেই চিরাচরিত সান্ত্বনার কথা। শুনে একটু হাসলেন ক্যারোলি। তারপর খুব মৃদু স্বরে কেটে কেটে বললেন “আমি এখানে তোমাদের অনুপ্রাণিত করতে আসিনি। এসেছি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।”

পরিষ্কার আকাশে বাজ পড়লে এর থেকে কম চমকাতো মানুষ। বলে কি লোকটা? যে ডানহাতে একের পর এক শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম স্থান অধিকার করে এসেছেন, যে ডান হাত রাইফেল শ্যুটারদের কাছে প্রাণাধিক, সেই হাতটাই তো নেই লোকটার। বছর দুয়েক আগে বিস্ফোরণে উড়ে গেছে ক্যারোলির ডান হাত। দু বছর প্রায় শয্যাশায়ী ছিল সে। অঙ্গহানিই তো নয় শুধু, তার সঙ্গে মানসিক যন্ত্রণাও– পেড়ে ফেলেছিল তাঁকে। আর সেই মানুষ আজ এসেছে কি না শ্যুটিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে? এতকাল বন্দুক ধরত যে সোনার হাতে, সেই ডান হাতটাই তো নেই তাঁর?

অনেকেই ভেবে নিলেন শোকে দুঃখে মানসিক সমস্যা হয়েছে ক্যারোলির। হাসলেনও কেউ কেউ। কিন্তু সে সব পাত্তা দেবার সময় ক্যারোলির নেই। তাঁর লক্ষ্য স্থির, মুখের পেশি শক্ত, নজর শুধু পাখির চোখে স্থির। এই আশ্চর্য মানুষটার নাম ক্যারোলি তাকাস (Karoly Takacs)। বিশ্বের অন্যতম সেরা পিস্তল শ্যুটার, যাঁর ভয়ংকর লড়াইয়ের কাছে হার মেনেছিল নিয়তির মার, হার মেনেছিল সমস্ত প্রতিবন্ধকতা।
১৯১০ সাল, জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখ হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে জন্মেছিলেন ক্যারোলি। পুরো নাম ক্যারোলি তাকাস।
ক্যারোলির শৈশবকাল সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না, তাঁর শৈশবকাল তেমন বৈচিত্র্যময় ছিল না বলেই হয়ত। আসলে তার জীবন ছিল অনেকটা রোলার কোস্টার রাইডের মতো, যার শুরুটা হয়েছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর হাঙ্গেরিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ক্যারোলি। আর এখানেই তালিম চলাকালীন পিস্তল শ্যুটার হিসেবে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেন। এরপর যত দিন গেছে ততই পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। সেসময় যে প্রতিযোগিতাতেই অংশ নিতেন তাতেই প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হতেন না ক্যারোলি। নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া নেহাত মুখের কথা নয়। (Karoly Takacs)

ক্যারোলির সেই অসাধারণ পারদর্শিতা দেখে দেশের সমস্ত মানুষ ভেবে নিয়েছিল আসন্ন অলিম্পিকে দেশের হয়ে সোনা আনবেন তিনি। ১৯৩৬ সালে অলিম্পিকের আসর বসে জার্মানির বার্লিনে। কিন্তু বার্লিনগামী হাঙ্গেরির দলে জায়গা হল না ক্যারোলির। তখন এক অদ্ভুত নিয়ম ছিল। শুধুমাত্র কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরই পিস্তল শুটিংয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতেন, আর ক্যারোলি সেই সময় সেনাবাহিনীতে ছিলেন সার্জেন্ট। তাই ১৯৩৬ অলিম্পিকে জায়গা হল না তাঁর। তবে সেবছর অলিম্পিকের পরই এই বাজে নিয়মটা বাতিল করা হয়। তখন ক্যারোলির বয়স ২৬।
অলিম্পিক থেকে এমন অকারণে ছিটকে যাওয়ায় কিছুটা মনমরা হয়ে পরেছিলেন বটে, কিন্তু অচিরেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসেন ক্যারোলি। তাঁর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় চার বছর পরের অর্থাৎ ১৯৪০ সালের আগামী অলিম্পিক। শুরু হয় ভয়ংকর অনুশীলন। দিন রাত এক করে সে এক মরিয়া লড়াই। এর মধ্যে যতগুলো পিস্তল শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন সব কটাতেই যথারীতি আগের মতোই প্রথম স্থান অধিকার করেন ক্যারোলি।

সব কিছু একদম ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু দু বছর যেতে না যেতেই সব ওলোটপালোট হয়ে যায়। জীবন তার নিষ্ঠুর আর চরমতম আঘাত হানে ক্যারোলির উপর। ১৯৩৮ সালে সেনাবাহিনীতে ট্রেনিং চলাকালীন একটা খারাপ গ্রেনেড আচমকা ফেটে যায় তাঁর হাতে। ভয়ংকররকম জখম হন ক্যারোলি (Karoly Takacs)। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে তক্ষুনি ভর্তি করা হয় সেনাবাহিনীর হসপিটালে। গ্রেনেডের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ক্যারোলির ডান হাত। প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই জখম হাতটা শরীর থেকে বাদ দিতে বাধ্য হন ডাক্তারেরা
অপারেশন থিয়েটার থেকে অচৈতন্য ক্যারোলিকে নিয়ে যাওয়া হয় বেডে। জ্ঞান আসে, আর তার পরই তিনি অনুভব করেন তাঁর ডানহাতটি আর নেই। এই শক মেনে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। বেডে শুয়েই পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকেন ক্যারোলি। যে স্বপ্নকে তিনি তিলতিল করে গড়ে তুলছিলেন কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তা চুরমার হয়ে যেতে দেখে অবুঝের মতো কান্নায় ভেঙে পরেন। কিন্তু ততক্ষণে যা সর্বনাশ হবার হয়ে গেছে।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর চার দেওয়ালের মধ্যে নিজেকে বন্দি করে ফেলেন ক্যারোলি। দিন দশেক এভাবেই কেটে যায়। যে হাতকে তিনি পিস্তল শুটিং-এ বিশ্বের সেরা হাত বানাতে চেয়েছিলেন সেই হাত খোয়ানোর তীব্র যন্ত্রণা প্রতিদিন কুড়ে খাচ্ছিল তাঁকে। এসময় আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছেন অনেকবার। কিন্তু আপাদমস্তক লড়াকু একজন মানুষ কি আর এত সহজে ভাগ্যের কাছে হার মানে! অন্য ধাতুতে গড়া মানুষ ক্যারোলি। হার মানা তো দূর, উলটে আরও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি।
হাল ছেড়ে দেওয়া শব্দটাই বোধহয় ক্যারোলির অভিধানে ছিল না। তিনি ভাবলেন ডান হাত দিয়ে যদি পিস্তল শ্যুট করা যায়, তবে বাঁ হাত দিয়েই বা যাবে না কেন? এসব ভাবা বা বলা যতটা সহজ, কাজে করে দেখানোটা ততটাই কঠিন। ডানহাতি একজন মানুষ হঠাৎ করে বাঁহাতি মানুষে পরিণত হতে পারেন না। এতদিন অবধি বাঁ হাতে সেভাবে কোনও কাজই করেননি ক্যারোলি। কিন্তু তাতে কী! যে বাঁ হাতে তিনি পেন পর্যন্ত ভালোভাবে ধরতে পারেন না সেই হাতেই এবার পিস্তল তুলে নিলেন।

কিন্ত বন্দুক তুলে নিলেই তো আর হল না, চাই কঠোরতম অধ্যবসায়। সবার অলক্ষ্যে শুরু হল সেই অনুশীলন। কেউ জানতেও পারল না, কি দুঃসাহসী পরিকল্পনা তিনি আঁটছেন। টানা চার মাসের কঠোর পরিশ্রম, অখণ্ড মনঃসংযোগ, আর অদম্য অধ্যবসায়ের ফলে বাঁ হাতেও শ্যুটিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠলেন ক্যারোলি। দুর্ঘটনার ৬ মাস পর প্রথম অংশগ্রহণ করলেন জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। সালটা ১৯৩৯।যার কথা এ গল্পের শুরুতেই বলা হয়েছিল। সেই প্রতিযোগিতায় সবাইকে পেছনে ফেলে অবাক করে দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন যে মানুষটা, হ্যাঁ তাঁর নাম ক্যারোলি তাকাস (Karoly Takacs)।

জাতীয় পর্যায়ে ওই জয়ের পর তাঁর মনোবল অনেকখানি বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে মনকে বোঝাতে শুরু করেন সামনের লড়াই ভয়ংকর শক্ত হলেও তিনি তা পারবেন। স্বপ্নপূরণের জন্য নিজেকে নিংড়ে নিলেন রোজ।কঠিন, আরও কঠোর অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে দিলেন। লক্ষ্য ১৯৪০ এর অলিম্পিক। কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেক সময় বাধ্য করে পিছু হটতে। ক্যারোলির ক্ষেত্রেও তাই হল। জাতীয় পর্যায়ের সাফল্যের পর যখন তিনি পরের বছরের অলিম্পিকের স্বপ্নে বিভোর, তখনই নেমে এল পরের আঘাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
বিশ্বব্যাপী সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা আর কী দেব! যেখানে মানুষ নিজের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া। সেখানে বিনোদনের সময় কোথায়? বাতিল হয়ে গেল ১৯৪০ সালের অলিম্পিক। হল না তার চার বছর পর, মানে ১৯৪৪ এও। এই উপর্যুপরি স্বপ্নভঙ্গের পর অন্য কেউ হলে হাল ছেড়ে দিত। কিন্তু দমলেন না ক্যারোলি। অনুশীলন করে গেলেন নিয়মিত। তাঁর সুদীর্ঘ অপেক্ষার পালা ফুরোলো ১৯৪৮ সালে, লন্ডন অলিম্পিকে। সেবার হাঙ্গেরির লন্ডনগামী অলিম্পিক দলে জায়গা হল তাঁর। সেই ১৯৩৬ সাল থেকে যে স্বপ্নকে বুকের ভিতর লালন করে আসছেন, তা পূর্ণ হল ১৯৪৮ সালে, লন্ডন অলিম্পিকে। ২৬ বছরের তরুণ ততদিনে পরিণত হয়েছেন ৩৮ বছরের যুবকে।
অলিম্পিকে তাকে অংশ নিতে দেখে অধিকাংশ লোকই ধরে নিয়েছিলেন এই অলিম্পিক জেতা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। একে তো ডান হাত নেই, তার ওপর বয়স হয়ে গেছে অনেকটাই। লন্ডন অলিম্পিকের সময়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিলেন আর্জেন্টিনার কার্লোস এনরিকে ভ্যালিয়েন্তে। শ্যুটিং স্পটে ক্যারোলিকে দেখে চমকে গেলেন তিনি। ক্যারোলির দুর্ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকে কানাঘুষো শুনেছিলেন বটে, কিন্তু বিশ্বাস করেননি। স্বচক্ষে দেখে চমকে গেলেন প্রায়। অবাক হয়ে জানতে চাইলেন কী করছেন ক্যারোলি এই চ্যাম্পিয়নশিপে।
ক্যারোলের একবার মনে হয়েছিল মুখের উপর ভ্যালিয়েন্তেকে বলে দেন ‘স্বর্ণ পদক জিততে এসেছি’, কিন্তু লোভ সম্বরণ করেন। নিজেকে সংযত রেখে বলেন, তিনি শুধুমাত্র শিখতে এসেছেন অলিম্পিকে। ক্যারোলি খুব ভালো করেই জানতেন শুধুমাত্র মুখে বলে কিছু হবে না, কাজে করে দেখাতে হবে। না হলে সেই শূন্য বাক্য পরে নিজেরই অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
অলিম্পিকে একে একে প্রতিযোগীদের ফায়ারিং-এর পর একসময় ক্যারোলির পালা এল। ২৫ মিটার র্যাপিড ফায়ার পিস্তল শ্যুটিংয়ে টার্গেটের সামনে দাঁড়ালেন তিনি। বাঁ হাতে তুলে নিলেন পিস্তল। লক্ষ্য একটাই সামনের টার্গেট বক্সের সবথেকে ছোট গোল অংশটুকু। দৃঢ় করলেন হাত। চোয়াল শক্ত। চোখ একদম সেই ছোট্ট গোল অংশটার দিকে। চাপ দিলেন ট্রিগারে। গুলি বেরিয়ে সোজা আঘাত করলো বুলস আই-য়ে। উত্তেজনায় আনন্দে হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে বসে পড়লেন ক্যারোলি। মুখে অদ্ভুত এক দ্যুতি। শেষমেশ পেরেছেন, হ্যাঁ পেরেছেন তিনি।
প্রথম রাউন্ডে শেষ আটজনের মধ্যে অনায়াসে জায়গা করে নিলেন ক্যারোলি। দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষে দেখা গেল অন্তিম প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন বিশ্বজয়ী ভ্যালিয়েন্তে আর এক হাত খোয়ানো ভাগ্যবিড়ম্বিত ক্যারোলি তাকাস। এবার তাঁদের পালা। পরপর দশ রাউন্ড। প্রথম ন রাউন্ড ড্র হল। ততক্ষণে হাত কাঁপছে ক্যালোরির। তবে কি তীরে এসে তরী ডুববে এবারও!
না, এবার আর ভাগ্য খালি হাতে ফেরালো না। অন্তিম রাউন্ডে বিশ্বজয়ী ভ্যালিয়েন্তেকে ছিটকে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন একহাতি সব্যসাচী। ২৫ মিটার র্যাপিড ফায়ার পিস্তল শ্যুটিং অলিম্পিকের সোনা জিতে নিলেন ক্যারোলি তাকাস।ডানহাতি হয়েও বাঁ হাতে স্বর্ণ জয়! তাও আবার অলিম্পিকে! অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর অনুশীলনের যে কোনও বিকল্প নেই, সেদিন সে কথা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন ক্যারোলি তাকাস। জানেন কি, ক্যারোলির কাছে সেদিনের হারের পর কী বলেছিলেন ভ্যালিয়েন্তে? বলেছিলেন… ‘আপনি যথেষ্ট শিখে ফেলেছেন। আপনার বোধহয় আর শেখার প্রয়োজন নেই।’
এখানেই শেষ নয়। অলিম্পিকের পরের আসর বসল ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে। ১৯৫২ সালে। নতুন করে ক্যারোলির আর প্রমাণ করার কিছু ছিল না, আগেই আসরেই যা করার করে দিয়েছিলেন। কিন্তু হেলসিংকিতে আরও একবার জ্বলে উঠলেন তিনি। আরও একবার দেশের হয়ে নিয়ে এলেন স্বর্ণপদক।
১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছিলেন ক্যারোলি। তখন তার বয়স ৪৬ বছর। এবার আর শরীর সায় দেয়নি। আগের দুইবারের স্বর্ণজয়ী এবার শেষ করেন অষ্টম স্থানে থেকে।
তাতে ক্যারোলির নিশ্চয়ই কিছু এসে যায়নি। যে মানুষটার শ্যুটিংই ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল, অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়াই ছিল অসম্ভব ব্যাপার, সেই মানুষটিই ক্যারিয়ার শেষ করলেন টানা দুই অলিম্পিকের সোনাজয়ী হিসেবে।
১৯৭৬ সালে, ৬৬ বছর বয়সে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ক্যারোলি তাকাস। থেমে যায় তার বর্ণাঢ্য জীবন। আমরা জীবনে খুব সহজেই হার মেনে নিই। নানা প্রতিবন্ধকতা এসে হারিয়ে দেয় আমাদের। এই মধ্যমেধার ভিড়ে ক্যারোলি তাকাসের মতো ব্যক্তিত্বরা আসেন, দেখেন, জয় করেন। প্রমাণ করে যান এই জীবনের অনেক প্রতিবন্ধকতাই জয় করা যায় ইচ্ছাশক্তির জোরে। ভালোবাসার জোরে।