শেষ আপডেট: 26th October 2024 12:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভূস্বর্গের উপর পাকিস্তানের নজর আজও শেষ হয়নি। ভারতভাগের আগে থেকে কাশ্মীরকে ধর্মের ভিত্তিতে দাবি করেছিলেন পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্নাহ। কিন্তু, তৎকালীন কাশ্মীরের শেষ ডোগরা রাজা হরি সিং স্বাধীন-নিরপেক্ষ থাকার কথা ঘোষণা করায় মাঝখানে কাশ্মীরকে সার্বভৌম রাজত্ব হিসেবে রেখে দুটুকরো হয় দেশ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কাশ্মীর দখল করার খেলাযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের সেই কখনও লুকোচাপা, কখনও খোলামেলা হামলায় ৭৭ বছর ধরে দুর্বিষহ জীবনযাত্রার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন কাশ্মীরিরা। গুলি, বোমা, গ্রেনেড, রকেট হানা তাঁদের কাছে ডালরুটির মতো অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তার থেকেও বড় শত্রু হচ্ছে জেহাদের নামে কাশ্মীরি যুবসমাজকে ভারত-বিরোধী করে তোলা। বিভ্রান্ত করে জঙ্গি শিবিরের খাতায় নাম লিখিয়ে সীমান্তপার করে দেওয়া।
গত কয়েক মাস ধরে কাশ্মীরে ফের উৎপাত শুরু করেছে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলি। তাদের একটাই লক্ষ্য ভারত থেকে কাশ্মীরকে টুকরো করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সঙ্গে জুড়ে পৃথক কাশ্মীর রাষ্ট্র গঠন করা। আর সেই কুনজর যা শুরু হয়েছিল ৭৭ বছর আগে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরপরই। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর, এইদিনটিতেই তা ভেস্তে দিয়েছিল ভারত সরকার। আক্রান্ত কাশ্মীরকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করে হিন্দু রাজা হরি সিংয়ের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে আজকের জম্মু-কাশ্মীরকে 'বাঁচিয়েছিল' সদ্যোজাত স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত। তারপর থেকে প্রতিবছর ২৬ অক্টোবরের এই দিনটি পালিত হয় কাশ্মীর অন্তর্ভুক্তি দিবস হিসেবে। ২০২০ সাল থেকে ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
ইতিহাসে কী বলে?
ভারতে স্বাধীনতার সময় ৫৮০ জন রাজা সার্বভৌম থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা পাকিস্তান কিংবা ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিতে রাজি ছিলেন না। কারণটা অবশ্যই ব্যক্তিগত বিষয়সম্পত্তিগত। কেননা, কোনও রাষ্ট্রে যোগদান করলেই তাঁদের ব্যক্তিগত প্রভুত্ব চলে যেত এবং রাজকীয় ভাণ্ডারের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ চলে আসত। শুধু তাই নয়, নিজস্ব রাজ্যবাসীর কাছে যে আনুগত্য-দাসত্ব ও প্রতাপ, প্রতিপত্তি ছিল তা ক্ষুণ্ণ হয়ে যেত।
গোড়ার দিকে মহারাজা হরি সিং জম্মু-কাশ্মীরকে নিরপেক্ষ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। ভারত কিংবা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তিতে রাজি হননি। কিন্তু, স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওয়াজিরিস্তানের লস্কর পাঠান আদিবাসীদের ভড়কে আক্রমণ করে হরি সিংয়ের রাজ্যকে। পাকিস্তানের বিশ্বাস ছিল, হরি সিং তৎকালীন 'লৌহমানব' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং তাঁর সচিব ভিপি মেননের কৌশলগত চাপে ভারতের দিকে ঢলে পড়তে পারেন।
হরি সিংও পুঞ্চ এলাকার মুসলিমদের বিদ্রোহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন। অবশেষে ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাশতুন আদিবাসী জঙ্গিদের সামনে রেখে সীমান্ত ডিঙিয়ে ঢোকে পাক হানাদাররা। তাদের লক্ষ্য শ্রীনগর দখল। কিন্তু বারামুল্লা পর্যন্ত এসে তারা থেমে যায়। এই অবস্থায় রাজ্য যায় যায় দেখে মহারাজা হরি সিং ভারতে কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।
এই অনুরোধের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন সর্দার, মেনন এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান সাম মানেকশ-রা। জওহরলাল নেহরুর অনুমোদনক্রমে রাতারাতি চুক্তি সম্পাদিত হয় অন্তর্ভুক্তির। এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী যোগ দেয় হরি সিংয়ের বাহিনীর সঙ্গে। প্রায় একবছর ১০ সপ্তাহ ধরে চলা প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু ততদিনেও যুদ্ধ চলা পর্যন্ত পাকিস্তানের দখল করে নেওয়া গিলগিট-বালটিস্তান ভারত পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে, ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন বেশিরভাগ অংশই দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছিল, তখন আচমকাই জওহরলাল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হন। যার ফলে কাশ্মীরের মধ্যে আজও এক কাঁটাতারের বেড়া দাঁড়িয়ে রয়েছে। যার ওপারে রয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং এপারে ভারত।