শেষ আপডেট: 2nd October 2024 12:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জায়গায় অনুপম খেরের মুখের ছবি দিয়ে জাল নোট ছাপার কীর্তি কয়েকদিন আগেই ফাঁস হয়েছে। ভারতের সব নোটে রয়েছে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ছবি। তাই দিয়েই যায় ভারতীয় নোট চেনা। প্রতিটি দেশেরই নোটে ফুটে থাকে সেদেশের সাংস্কৃতিক, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। বহু দেশের নোটে থাকে সেদেশের জাতীয় নায়ক বা প্রতিষ্ঠাতা অর্থাৎ জাতির জনকের প্রতিকৃতি। যেমন আমেরিকার নোটে থাকে জর্জ ওয়াশিংটন, পাকিস্তানে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এবং চিনে মাও জেদংয়ের ছবি। তেমনই আমাদের দেশের নোটে থাকে মহাত্মা গান্ধীর ছবি।
কিন্তু, অনেকেরই বোধহয় জানা নেই, ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মহাত্মা গান্ধীর ছবি ছিল না নোটে। তবে কার ছবি ছিল? কী করেই বা এলেন মহাত্মা গান্ধী? এমনকী প্রথমে মহাত্মা গান্ধীর ছবির প্রস্তাবই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। ছাপা হয়েছিল দেশের বিভিন্ন স্থাপত্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সাফল্য, পশু-পাখির ছবি। তখনও কারও মনেই হয়নি, মহাত্মা গান্ধী এভাবে দেশের সব নোটে এঁটে বসে থাকবেন!
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম সমস্যা দেখা দেয় দেশের মুদ্রা বিনিময় নীতি। কত টাকার নোট হবে, কত পরিমাণে ছাপা হবে, কী নকশার হবে ইত্যাদি। সে সময় গান্ধীর ছবি ছাপার প্রস্তাব একবাক্যে বাতিল হয়ে যায়। অনেকেই হয়তো ভাবেন, প্রথম থেকেই গান্ধীর মুখ ছিল নোটে। কিন্তু তা নয়, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ভারতীয় মুদ্রায় প্রবেশ ঘটল মহাত্মা জমানার!
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, কীভাবে জন্ম হল ভারতীয় ঘরানার নিজস্ব নোটের। আরবিআইয়ের ওয়েবসাইটে বলা আছে, ঔপনিবেশিক থেকে স্বাধীন ভারতের মুদ্রা বিনিময় একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্টের মধ্যরাতে ঔপনিবেশিক শাসন ছেড়ে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে। যা সাধারণতন্ত্র হিসেবে জন্ম নেয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি।
এই মধ্যবর্তী সময়ে আরবিআই বেশ কিছু নোট ছেপেছিল। ভারত সরকার ১৯৪৯ সালে একটি নতুন নকশার ১ টাকার নোট ছাপে। প্রথমে প্রস্তাব ওঠে ব্রিটেনের রাজার জায়গায় গান্ধীর মুখ ছাপা হবে। কিন্তু, চূড়ান্ত আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে স্থির হয় যে, সারনাথের সিংহ প্রতীক ছাপা হবে ১ টাকার নোটে।
স্বাধীনতার পর অনেক বছর ধরে ব্যাঙ্ক নোটগুলি দেশের ঐতিহ্য ও প্রগতির ধারাকে তুলে ধরে ছাপা হয়েছিল। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় নোটে বিভিন্ন সময়ে ছাপা হয়েছে বাঘ, হরিণের ছবি। কিংবা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও শিল্পের অগ্রগতির প্রতীক। যেমন হিরাকুদ বাঁধ অথবা আর্যভট্ট উপগ্রহ এবং বৃহদেশ্বর মন্দির।
১৯৬৯ সাল ছিল গান্ধীর জন্ম শতবর্ষ। সেবারই প্রথম নোটে স্থান পেলেন মহাত্মা বাপু। সেই নোটে বাপুর নির্দিষ্ট বসার ভঙ্গিতে ছবি ছাপা হয় যার পিছনে ছিল সেবাগ্রাম আশ্রমের ছবি। ১৯৮৭ সালে রাজীব গান্ধী সরকার যখন ফের নতুন করে ৫০০ টাকার নোট চালু করে, তখন গান্ধীর মুখের ছবি সেই নতুন ৫০০ টাকার নোটে ছাপা হয়। কারণ, ৯ বছর আগে জনতা পার্টির সরকার উচ্চমূল্যের নোট ছাপা বন্ধ করে দিয়েছিল। রাজীব গান্ধী আবার ৫০০ টাকার নোট বাজারে আনেন।
নয়ের দশকের মাঝামাঝি আরবিআই মহাত্মা গান্ধীর ছবির সিরিজ শুরু করে। ১৯৯৬ সালে জাল নোট ঠেকাতে নোটে জলছবি এবং নিরাপত্তার আরও কিছু ফিচার যোগ করে। আর সেই থেকেই গান্ধীজি চিরতরের জন্য নোটে স্থান পেয়ে গেলেন।
তবুও কেবলমাত্র গান্ধীর মুখাবয়বই থাকবে কেন নোটে? এই প্রশ্নও উঠেছে বারবার। অনেকেই প্রস্তাব তুলেছেন জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এমনকী লক্ষ্মী-গণেশের ছবি দিয়ে নোট ছাপার কথা। কিন্তু, বহু আলোচনা ও বিতর্কের পরেও মহাত্মা গান্ধীর স্থান তাঁর জায়গাতেই আছে, কেউ কেড়ে নিতে পারেননি।