Latest News

সহকর্মী, না যৌন পুতুল! সেনাবাহিনীতে আজও মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোথায়?

দ্য ওয়াল ম্যাগাজিন ব্যুরো: অনেকদিন আগে কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত একটি কবিতায় কার্ল মার্ক্সের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন একটি শাশ্বত জিজ্ঞাসা :
‘কখনো বিপ্লব হলে
পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হবে
শ্রেণিহীন রাষ্ট্রহীন আলোপৃথিবীর
সেই দেশে
আপনি বলুন মার্কস,
মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী
হবে ?’

দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিশ্বের সমস্ত দেশের সেনাবাহিনীতে মেয়েদের রাখা হয়েছিল নার্স বা অসুস্থ সৈনিকদের সেবিকা হিসেবে। মনে করা হত, মেয়েদের শারীরিক গঠন ও বাহুবল সম্মুখযুদ্ধের উপযোগী নয়। কিন্তু ক্রমশ দিন বদলায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কমব্যাট ফোর্সে মেয়েদের নিয়োগ করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী বলেছিলেন, তিনি মেয়েদের সম্মুখ যুদ্ধে বা সীমান্তযুদ্ধে পাঠানোর পক্ষপাতী নন। তার কারণ যুদ্ধে কোনও মহিলা অফিসার আহত বা নিহত হলে, সেটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু শত্রুপক্ষের হাতে বিশেষত জিহাদিদের হাতে কোনও মহিলা অফিসার বন্দি হলে তার ওপর যে ধরনের অত্যাচার এবং নির্যাতন করা হতে পারে, তা থেকে মহিলাদের রক্ষা করাটা আমাদের দায়িত্ব বলেই আমি মনে করি। এটাকে জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন হিসেবে না দেখে ‘জেন্ডার প্রিজারভেশন’ হিসেবেই দেখা উচিত। (Female Soldier)

অথচ সেই কবে ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে সুভাষচন্দ্র বসু তৈরি করেছিলেন ঝাঁসির রানি বাহিনী, যার নেতৃত্বে ছিলেন সদ্য ডাক্তারি পাশ করা তরুণী লক্ষ্মী স্বামীনাথন। সেদিন সুভাষচন্দ্র এক জ্বালাময়ী উদ্দীপক ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন সিপাহি বিদ্রোহের কথা, ঝাঁসির রানির আত্মত্যাগের কথা। বলেছিলেন ফ্রান্সের সেই বীরাঙ্গনা জোন অব আর্কের কথা। সেই বক্তৃতা শুনে রাতারাতি হাজার খানেক তরুণী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। কেউ কমব্যাট ফোর্সে, কেউ আহত সৈনিকদের সেবার কাজে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল নারীরা আত্মনিয়োগ করেছিলেন রান্না ও পরিচ্ছন্নতার কাজে।

Image - সহকর্মী, না যৌন পুতুল! সেনাবাহিনীতে আজও মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোথায়?
লক্ষ্মী স্বামীনাথন ও সুভাষচন্দ্র, রানি ঝাঁসি বাহিনীতে

বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় সুভাষচন্দ্র দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভারত ললনা’ কবিতাটি আবৃত্তি করতেন :

‘না জাগিলে সব ভারত-ললনা,
এ ভারত আর জাগে না জাগে না।
অতএব জাগো জাগো ভগিনী,
হও বীরজায়া, বীর-প্রসবিনী।
শুনাও সন্তানে, শুনাও তখনি,
বীর-গুণগাথা বিক্রম- কাহিনী ।
স্তন্য দুগ্ধ যবে পিয়াও জননী।
বীর গর্বে তার নাচুক ধমনী।
তোরা না করিলে এ মহা সাধনা,
এ ভারত আর জাগে না জাগেনা।‘

সরোজিনী নাইডু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাশ, মাতঙ্গিনী হাজরার মত অসংখ্য নারীর আত্মত্যাগের কথা মনে রেখেও তিনি চাইতেন আরও বেশি সংখ্যক নারী সম্মুখযুদ্ধে এগিয়ে আসুক। শুধুমাত্র গোপনে সংবাদ পাচার করা, বিপ্লবীদের আশ্রয় দেওয়া, অস্ত্র লুকিয়ে রাখা ইত্যাদি কাজেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে নারীর ভূমিকা।
তিনি বলেছিলেন: ‘ I also want a unit of brave Indian women who will wield the sword which the brave Rani of Jhansi wielded in India’s First war of Independence.’ ( সিঙ্গাপুরে প্রদত্ত ভাষণ ৯ জুলাই ১৯৪৩)।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

কিন্তু নেতাজির নারী-বাহিনীর ভাবনা শুনে জাপানিরা প্রথমে তাঁকে সমর্থন করেনি। মেয়েদের প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র শস্ত্র জোগান দিতেও অস্বীকার করেছিল তারা। ভেবেছিল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে সুভাষচন্দ্র বসু ও লক্ষ্মী স্বামীনাথনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় মালয় ও মায়ানমারের প্রায় হাজার খানেক তরুণী যোগ দিয়েছিল এই বাহিনীতে। দু’শো জন যোগ দিয়েছিল সেবিকার কাজে। সেদিনের সেই ঝাঁসির রানি বাহিনী ছিল সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত সৈন্যবাহিনী।

Image - সহকর্মী, না যৌন পুতুল! সেনাবাহিনীতে আজও মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোথায়?
হাজার খানেক তরুণী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক বছর আগেই বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নারী সৈনিক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী। নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ সাফল্য সম্ভব নয়। (Female Soldier)

বাংলাদেশের নারী সৈনিক

কিছুকাল আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের ‘অধিনায়কত্বের পদে’ বিবেচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাহিনীর যুদ্ধ বিভাগগুলিতে তারা এখনই ঢুকতে পারছেন না। কারণ প্রথমত মেয়েদের শারীরিক বা ফিজিওলজিক্যাল সীমাবদ্ধতা। দ্বিতীয়ত গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন অল্পশিক্ষিত জওয়ান একজন নারী কমান্ডারের নেতৃত্ব মেনে নিতে চাইবে না। বিচারপতিরা এই দুটি যুক্তিকে অগ্রাহ্য করলেও কমব্যাট ফোর্সে মেয়েদের নিয়োগ আজও তর্কাতীত হয়ে ওঠেনি।

Image - সহকর্মী, না যৌন পুতুল! সেনাবাহিনীতে আজও মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোথায়?

রুমানিয়াতে ১০০ বছর আগে নারীরা আহত সৈনিকদের চিকিৎসা অথবা সেবার কাজ করত। তার বহু পরে স্বল্পসংখ্যক নারী সামরিক পোশাক পরে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।

বলিভিয়ায় ১৯১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কয়েক হাজার নারীকে আহত সৈনিকদের সেবাকর্মে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই সময় রাশিয়া বহু সংখ্যক নারীকে কমব্যাট ফোর্সে নিয়োগ করেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে একজন নারী কর্নেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আলজেরিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বহু সংখ্যক নারী সামরিক পোশাক পরে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিল। প্রায় ৫ লাখ নারী সৈনিককে ব্রিটেনে, জার্মানিতে শত্রু-বিমান আক্রমণ প্রতিরোধের কাজে এবং রাশিয়ার ফ্রন্ট লাইন ইউনিটে দেখা গিয়েছিল।

১৯৮৫ সালে বিশ্বে প্রথম নরওয়ের ডুবোজাহাজে নারী সৈনিক নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে সে দেশের সাবমেরিনে একজন নারী ক্যাপ্টেন নিযুক্ত হন। ডেনমার্ক, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং স্পেনেও সাবমেরিনে নারী সৈনিক নিয়োগ করা হয়।

এই মুহূর্তে ব্রিটেন, জার্মানি, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন ও রাশিয়া সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশের নারী সৈনিকরা সম্মুখযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে। তারা যুদ্ধবিমান চালিয়ে শত্রুপক্ষের ওপর আক্রমণ শানাচ্ছে।
ব্রিটেনে সামরিক বাহিনীর প্রায় ৯ শতাংশ নারী।

Image - সহকর্মী, না যৌন পুতুল! সেনাবাহিনীতে আজও মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোথায়?
যুদ্ধবিমান চালিয়ে শত্রুপক্ষের ওপর আক্রমণ শানাচ্ছে নারীরা

ইসরাইল পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে নারীদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর নারীদের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ৩১ শতাংশই নারী। এই সংখ্যা ব্রিটেনের তিন গুণ।

জার্মানিতে ১৯৪৪-১৯৪৫ সালে পাঁচ লক্ষাধিক সাদা পোশাকের জার্মান নারী-সৈনিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল। ২০১৩ সালে জার্মান সেনাবাহিনীতে ১৮ হাজার নারী সৈনিক ছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীর সব পদই নারীর জন্য উন্মুক্ত। ২০১২ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ১৪ শতাংশ নারী। চিনে ২২ লাখ ৮৫ হাজার সৈন্যের মধ্যে প্রায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হলো নারী। পাকিস্তানেও নারীদের সামরিক বাহিনীর উচ্চপদে নিয়োগ করা হয়। তারা আকাশপথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিতে পারে।

চিনের সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা

রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ১ লক্ষ ৬০ হাজার নারী সদস্য রয়েছে। তুরস্কের সামরিক বাহিনীতে নারীদের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তবে পদাতিক এবং সাবমেরিন ও দু একটি ইউনিট ছাড়া।

তবে বিপদ কি আর নেই? নারী হয়ে জন্মালে তো ঘরে বাইরে সেই এক বিপদ। সেনাবাহিনীতেও তার ব্যতিক্রম হবে কেন?

উত্তর কোরিয়ায়, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম সেনাবাহিনীতে একজন নারী সৈনিকের জীবন এতটাই কঠিন যে খুব তাড়াতাড়িই তাদের অধিকাংশেরই মাসিক ঋতুস্রাব পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।
যুদ্ধফেরত এক নারী সৈনিক জানিয়েছেন : তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই ধর্ষণ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক এক ঘটনা!

Image - সহকর্মী, না যৌন পুতুল! সেনাবাহিনীতে আজও মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোথায়?

প্রায় দশ বছর ধরে লি সো ইয়নকে শুতে হয়েছিল একটা বাঙ্ক-বেডের নীচের তলায়। সেখানে আরও ২৫ জন মহিলা সৈনিক শুতেন। তিনি জানিয়েছেন :

“আমরা খুব ঘামতাম। যে গদির ওপর আমরা শুতাম, সেটা ছিল ধানের তুষের তৈরি। ফলে আমাদের গায়ের সব গন্ধ সেই গদিতে আটকে থাকত। সেখানে স্নান করা বা কাপড়চোপড় পরিষ্কার করার ব্যবস্থা ছিল না। আমরা ঠিকঠাক স্নান করতে পারতাম না। গরম জল পেতাম না। পাহাড়ের একটা ঝর্নার সঙ্গেই হোসপাইপ জুড়ে দেওয়া হত, সেই হোস পাইপ দিয়েই আমাদের স্নানের জল আসত। জলের সঙ্গে সেই হোস দিয়ে বেরোত সাপ, ব্যাং ইত্যাদি অনেক কিছু!”

১৯৯০র দশকে যখন উত্তর কোরিয়া ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে, তখন সো ইয়ন দু মুঠো খাবার জন্য স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। সে দেশের আরও অনেক মেয়ে একই কারণে সেই সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।

কিন্তু কঠোর শারীরিক অনুশীলন ও পরিশ্রম আর খাবারের রেশনে অপ্রতুলতা ইত্যাদি নানা কারণে লি সো ইয়ন ও তার সতীর্থ নারী সেনাদের শরীরে প্রভাব পড়তে শুরু করে অল্প দিনের মধ্যেই। ইয়ন জানিয়েছেন :

“বাহিনীতে ঢোকার ছমাস থেকে এক বছরের মধ্যে আমাদের আর ঋতুস্রাব হত না। চরম অপুষ্টি আর ভীষণ একটা মানসিক চাপের পরিবেশে থাকতাম বলেই সেরকমটা হয়েছিল। নারী সৈনিকরা অবশ্য বলত তাদের মাসিক হচ্ছে না বলে তারা খুশি। কারণ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে তার ওপর আবার মাসিক হলে তাদের আরও শোচনীয় অবস্থার ভেতর পড়তে হত। মাসিক ঋতুস্রাবের দিনগুলো নারী সেনারা কীভাবে পার করবে, তার কোনও ব্যবস্থাই বাহিনীতে ছিল না। অনেক সময় নারী সহকর্মীরা বাধ্য হয়ে একজনের ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড অন্য একজন ব্যবহার করত।

২০১৫ সালে উত্তর কোরিয়া নিয়ম করেছে যে ১৮ বছর বয়সের পর সে দেশে সব মেয়েকেই বাধ্যতামূলকভাবে সাত বছর সামরিক বাহিনীতে কাজ করতে হবে।
কয়েকজন নারী সৈনিক জানিয়েছেন, অনেক সময় পুরুষ সহকর্মীদের সামনেই তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হতো। এর ফলে তাদের ওপর যৌন হামলার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেত, কিন্তু তারা অসহায়।

উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীতে যৌন নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটে ব্যাপক মাত্রায়।
লি সো ইয়ন জানিয়েছেন, ১৯৯২ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে তিনি যখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন তখন তাকে ধর্ষিতা হতে হয়নি ঠিকই, কিন্তু তার অনেক নারী সহকর্মীকেই ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে।
কাজের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কমান্ডার নিজের ঘরে বসে থাকতেন ও নিজের অধীনস্থ নারী সেনাদের মধ্যে কাউকে ডেকে নিয়ে সেখানে ধর্ষণ করতেন। এই জিনিস অবিরামভাবে চলত দিনের পর দিন।
সাক্ষী প্রমাণের অভাবে ধর্ষণকারী পুরুষদেরও কোনও সাজা হত না।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর সেনাবাহিনী বলা হয় মার্কিন সেনাবাহিনীকে। অথচ যৌনতা নিয়ে এই বাহিনীর নারী সদস্যরাও থাকেন অত্যন্ত আতঙ্কে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় প্রতি তিনজন নারীর একজন ধর্ষণের শিকার হন।
একজন মার্কিন মেরিন অফিসার জানিয়েছেন, ‘আমার ওপর চালানো যৌন নিপীড়নের ঘটনার অভিযোগ করায় তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সদস্যরাই এ ধরনের ঘটনার বিচারক ও সাক্ষী। তাদের নিজস্ব আইন আছে। বাহিনীর সুনাম রক্ষার্থে তারা প্রয়োজনে যৌন নির্যাতনের অভিযোগকারীর মুখ বন্ধ করে দেয়।’

মার্কিন সামরিক বাহিনীতে এই মুহূর্তে ২ লক্ষের বেশি নারী সৈনিক রয়েছে, যা সে দেশের মোট সৈন্যসংখ্যার ১৫ শতাংশ। নির্ভরযোগ্য এক গবেষণায় জানা গেছে, মার্কিন সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সময়ে প্রতি তিনজনের একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী সেনা কোন না কোন যৌন নিপীড়নমূলক আচরণের শিকার হন। এর প্রতিকারে ২০০৫ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী ‘সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট প্রিভেনশন এ্যান্ড রেসপন্স অফিস’ বা যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকার কার্যালয় (স্যাপ্রো) চালু করে। স্যাপ্রোর প্রধান কাজ হচ্ছে সেনাবাহিনীতে সংঘটিত যৌন নির্যাতনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। এর ফলে অনাচার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

Image - সহকর্মী, না যৌন পুতুল! সেনাবাহিনীতে আজও মেয়েদের অবস্থান ঠিক কোথায়?

ভারতের প্রাক্তন জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী আশঙ্কা করেছিলেন, নারী সৈনিক যুদ্ধে বন্দি হলে শত্রুপক্ষের হাতে নির্যাতিত ও গণধর্ষিত হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নিজের দেশের সৈন্যশিবিরেই সহযোদ্ধাদের হাতে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত ও ধর্ষিত হচ্ছে সৈনিক নারীরা। সাধারণ নিরস্ত্র গ্রামীণ কিংবা নাগরিক নারীদের সঙ্গে এক্ষেত্রে সামরিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত সশস্ত্র সৈনিক মেয়েদের কার্যত কোনও পার্থক্যই নেই। এটাই আপাতত নির্মম ও বাস্তব সত্য।

You might also like