
রূপাঞ্জন গোস্বামী
দিল্লি থেকে ২৬৮ কিলোমিটার দূরে আছে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর। ১৭২৭ সালে আরাবল্লী পর্বতের এক নয়নাভিরাম উপত্যকায় শহরটির পত্তন করেছিলেন অম্বরের মহারাজা দ্বিতীয় জয় সিংহ। এই জয়পুর শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে, আরাবল্লী পর্বতের ওপর আছে ইতিহাস প্রসিদ্ধ অম্বর দুর্গ।
সেই অম্বর দুর্গ থেকে কয়েকশো মিটার দূরে, পাঁচশো ফুট উঁচুতে মহারাজা দ্বিতীয় জয় সিংহ বানিয়েছিলেন আরও একটি দুর্গ। নাম জয়গড় দুর্গ (jaigarh fort)। যুগ যুগ ধরে যে দুর্গ লুকিয়ে রেখেছে এক অমীমাংসিত রহস্য। যে রহস্য ভেদ করার উদ্দেশ্যে আকস্মিকভাবে দুর্গে হানা দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই সময় দেশে চলছিল জরুরি অবস্থা। দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

রহস্যের সূত্রপাত মুঘল আমলে
তখন দিল্লির মসনদে ছিলেন, মুগল সাম্রাজ্যের অন্যতম পরাক্রমশালী শাহেনশা জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবর। সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য আকবর ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের স্থানীয় শাসকদের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন কৌশলগত মিত্রতা। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অম্বরের মহারাজা মান সিংহ।
মান সিংহ ছিলেন শাহেনশা আকবরের অন্যতম প্রধান সেনাধ্যক্ষ। যেখানে বাহুবল প্রয়োগের প্রয়োজন হত, সেখানে শাহেনশা আকবর পাঠিয়ে দিতেন মান সিংহকে। তাই আকবরের হয়ে মান সিংহকে লড়তে হয়েছিল প্রায় ৬৭ টি যুদ্ধ।
ষোড়শ শতাব্দীতে আফগানিস্তানের বুকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল উপজাতি বিদ্রোহ। ১৫৮৫ সালের জুলাই মাসে মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল আফ্রিদি, ঘোরি, রোশেনিয়া, ইউসুফজাই, মান্দার সহ আরও অনেক আফগান উপজাতি। বিদ্রোহ দমন করার জন্য আকবর একে একে পাঠিয়েছিলেন, জৈন খান, হাকিম আব্দুল ফতেহ, রাজা বীরবলও রাজা টোডরমলকে।

বিদ্রোহ দমনে রাজা টোডোরমল কিছুটা সফল হলেও, বাকিরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন দুর্ধর্ষ আফগান উপজাতিদের কাছে। বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে আকবর হারিয়েছিলেন প্রায় ৮০০০ সেনা। হারিয়েছিলেন নয়নমণি বীরবলকেও। ১৫৮৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, ইউসুফজাই উপজাতিদের হাতে, সোয়াট উপত্যকার কারাকার পাসে প্রাণ হারিয়েছিলেন বীরবল।
আফগান বিদ্রোহীদের কচুকাটা করার জন্য ক্রোধে উন্মত্ত আকবর পাঠিয়েছিলেন মহারাজা মান সিংহকে। ভাই মাধো সিংহ ও বিশাল মুঘল সেনাবাহিনী নিয়ে খাইবার পাস পেরিয়ে ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত আফগান বিদ্রোহীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মান সিংহ।
নির্মমভাবে দমন করেছিলেন বিদ্রোহ। বিদ্রোহীদের রক্তে লাল করে দিয়েছিলেন আফগানিস্তানের রুক্ষ প্রান্তর। একই সঙ্গে চালিয়েছিলেন অবাধ লুঠতরাজ। আফগান বিদ্রোহকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়াই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।

লোকগাথা থেকে জানা যায়, আফগানিস্তান থেকে লুঠ করা বিশাল সম্পদ মান সিংহ নিয়ে এসেছিলেন রাজস্থানের অম্বরে। কয়েক হাজার হাতির পিঠে চাপিয়ে। লুণ্ঠিত সম্পদের কিছুটা আকবরের কোষাগারে জমা দিয়ে বেশিরভাগ অংশ ছিলেন লুকিয়ে রেখেছিলেন অম্বর দুর্গের গোপন কোনও স্থানে।
অম্বর দুর্গের নিকটবর্তী ‘চিলা কা টিলা’ নামের পাহাড়টিতে ১৭২৬ সালে জয়গড় দুর্গ বানিয়েছিলেন মহারাজা দ্বিতীয় জয় সিংহ। অম্বর দুর্গ থেকে বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গপথ গিয়েছিল উঁচুতে থাকা জয়গড় দুর্গে। রাজপরিবারের সদস্যরা সেই সব গোপন সুড়ঙ্গপথে যাওয়া আসা করতেন।
স্থানীয় লোকগাথা থেকে জানা যায়, মহারাজা জয় সিংহ সেই সমস্ত সুড়ঙ্গ পথ দিয়েই মান সিংহের গুপ্তধন নিয়ে গিয়েছিলেন জয়গড় দুর্গে। কারণ অবস্থানগতভাবে জয়গড় দুর্গ ছিল অম্বর দুর্গের থেকেও সুরক্ষিত।

জয়গড় দুর্গের রহস্যময় জলাধার
রাজস্থানের অন্যান্য দুর্গের মত দৃষ্টিনন্দন নয় জয়গড় দুর্গ। কারণ তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও এক কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট দুর্গটি নির্মাণ করা হয়েছিল অম্বর দুর্গ ও জয়পুর শহরকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।
লাল বেলেপাথরে তৈরি দুর্গটির ভেতরে প্যালেস, মন্দির, অস্ত্রশালা, মিউজিয়াম, বাগিচা, নজর মিনার থাকলেও, জয়গড় দুর্গ মুঘল আমলে বিখ্যাত ছিল কামান তৈরির জন্য। সে যুগের পৃথিবীর অন্যতম সেরা কামান কারখানা ছিল এই জয়গড় দুর্গেই।
কথাটির সত্যতা প্রমাণ করে জয়গড় দুর্গে থাকা বিশাল এক কামান। যেটির নাম জয়বান। সেই যুগে জয়বানই ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম চাকা লাগানো কামান। ৫০ টন ওজনের জয়বান কামানের ব্যারেলটি ২০ ফুট লম্বা। ব্যারেলের ভেতরের ব্যাস ১১ ইঞ্চি।
তবে পরাক্রমশালী জয়বান কিন্তু লড়েনি একটি যুদ্ধও। একবারই গর্জন করে উঠেছিল। ১০০ কেজি বারুদের বিস্ফোরণে, ৫০ কেজির গোলা গিয়ে পড়েছিল ৩৫ কিলোমিটার দূরে।

জয়গড় দুর্গে আছে তিনটি সুবিশাল জলাধার। সবথেকে বড় জলাধারটিতে জল ধরত প্রায় তিন কোটি লিটার। বড় বড় জালা ভর্তি জল, হাতির পিঠে চাপিয়ে নিয়ে আসা হত জয়গড় দুর্গে। ঢালা হত জলাধারে। এই জলাধারগুলিই জন্ম দিয়েছিল এই অমীমাংসিত রহস্যের।
দিকে দিকে খবর ছড়িয়েছিল মহারাজা মান সিংহের গুপ্তধন লুকানো আছে জয়গড় দুর্গের জলাধারগুলিতে। কিন্তু প্রায় প্রায় দুই শতাব্দী কেটে গেলেও গুপ্তধনের ব্যাপারে একটি শব্দও খরচ করেনি জয়পুরের রাজপরিবার। কিন্তু সারা ভারত, এমনকি দেশের সীমানার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল মান সিংহের গুপ্তধনের কথা। যে গুপ্তধনের বর্তমান মূল্য কয়েক লক্ষ কোটি ডলার।

জয়পুরের রানীমা
অসামান্য সুন্দরী গায়ত্রী দেবী ছিলেন কোচবিহারের রাজকন্যা। বাবা ছিলেন মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ও মা বরোদার রাজকন্যা ইন্দিরা রাজে। ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করা গায়ত্রী পড়াশোনা করেছিলেন শান্তিনিকেতনের পাঠভবন ও ইউরোপের নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
১৯৪০ সালের ৯ মে, রাজকন্যা গায়ত্রীর বিয়ে হয়েছিল অম্বরের মহারাজ সওয়াই দ্বিতীয় মান সিংহের সঙ্গে। একুশ বছরের গায়ত্রী দেবী হয়েছিলেন অম্বরের তৃতীয় মহারানী। কারণ এর আগে আঠাশ বছর বয়সী মান সিংহের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল মহারানী মরুধর কানওয়ার ও মহারানী কিশোর কানওয়ারের।

মহারানী গায়ত্রী দেবীর সৌন্দর্য্যে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সারা পৃথিবীতে। বিশ্বের সেরা দশ সুন্দরীর তালিকায় তাঁর নাম রেখেছিল বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভোগ’ (Vogue)। শুধু রূপই নয়, ঈশ্বর গায়ত্রী দেবীর মধ্যে উজাড় করে দিয়েছিলেন নানাবিধ গুণও। গায়ত্রী দেবী ছিলেন অসামান্য ঘোড়সওয়ার, পোলো খেলোয়াড় ও শিকারি।
তাই অম্বরের বাকি দুই মহারানীর মত পর্দাপ্রথা মানেননি মহারানী গায়ত্রী। স্রোতের বিরুদ্ধে হেঁটে মহারানী গায়ত্রী যোগ দিয়েছিলেন রাজনীতিতে। ভারতীয় রাজনীতিতে তখন কংগ্রেসের সুবর্ণ যুগ চলছিল। কিন্তু কংগ্রেসে যোগ না দিয়ে গায়ত্রী দেবী যোগ দিয়েছিলেন রাজাগোপাল আচারি প্রতিষ্ঠিত সতন্ত্র পার্টিতে।
১৯৬২ সালে সতন্ত্র পার্টির প্রার্থী হিসেবে জয়পুর লোকসভা আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন গায়ত্রী দেবী। প্রায় ৭৮% ভোট পেয়ে পরাজিত করে ছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী শারদা দেবীকে। গায়ত্রী দেবীর এই জয়ে প্রমাদ গুণেছিলেন শান্তিনিকতনের পাঠভবনেরই এক ছাত্রী। গায়ত্রী দেবীর থেকে বয়সে তিনি দু’বছরের বড়। তাঁর নাম ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi)।

জয়পুরের মহারানী গায়ত্রী দেবী এরপর ১৯৬৭ ও ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনেও জয়ী হয়েছিলেন। অসামান্য রূপসী ও সর্বগুণসম্পন্না মহারাণী গায়ত্রী দেবী জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন।
অন্যদিকে মহারাণী গায়ত্রী দেবীর মধ্যে সম্ভবত নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দেখতে পেয়েছিলেন, ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা ইন্দিরা গান্ধী। গায়ত্রী দেবী যে তাঁর চক্ষুশূল তা বুঝিয়ে দিতেন হাবেভাবে। এ বিষয়ে বিশদে লিখে গিয়েছেন সাহিত্যিক সাংবাদিক খুশবন্ত সিং।

তিহার জেলে মহারানী
১৯৭১ সালে লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন রাজনারায়ন। নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগে তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলায় পরাজিত হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন ইন্দিরা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ২৪ জুন এলাবাদ হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।

তবে সাংসদ হিসেবে ইন্দিরার পাওয়া সব সুবিধা বন্ধ করার আদেশ দিলেও, ইন্দিরা গান্ধীর আবেদন মেনে অসমাপ্ত কাজগুলি সমাপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার একদিন পরে, অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন ইন্দিরা।
ভারতের প্রায় সব কাগজের অফিসের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তিন ঘণ্টার মধ্যে । দেশের তাবড় তাবড় বিরোধী নেতা ও সাংবাদিকদের জেলে পাঠানো হয়েছিল গিয়েছিলেন মিসা (Maintenance of Internal Security) আইনে।

যেদিন দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, চিকিৎসার কারণে সেদিন মুম্বইয়ে ছিলেন ছাপান্ন বছরের গায়ত্রী দেবী। শুনেছিলেন তাঁকেও যেকোনও মুহূর্তে গ্রেফতার করা হতে পারে। দ্রুত মুম্বই থেকে দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন গায়ত্রী দেবী। কিন্তু তাঁর দিল্লির প্রাসাদে হানা দিয়েছিল আয়কর দফতর।
বিপুল পরিমাণ সোনা ও সম্পদ গোপন করার জন্য ৩১ জুলাই কফেপোসা (Conservation of Foreign Exchange and Prevention of Smuggling Act) আইনে গ্রেফতার হয়েছিল জয়পুরের মহারানীকে। গ্রেফতারের পর গায়ত্রী দেবীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল তিহার জেলে।

প্রায় ছ’মাস তিহার জেলের নারকীয় পরিবেশে কাটাতে হয়েছিল জয়পুরের মহারানীকে। মানসিক চাপে হারিয়ে গিয়েছিল গায়ত্রী দেবীর স্বর্গীয় লাবন্য। দ্রুত ভেঙে গিয়েছিল শরীর। মুখে দেখা দিয়েছিল আলসার। গলব্লাডারের জমেছিল পাথর।
এই অবস্থাতেও জেলবন্দি মায়েদের সঙ্গে থাকা শিশুদের লেখাপড়া শেখাতেন গায়ত্রী দেবী। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন গায়ত্রী দেবী। চিরতরে বিদায় নিয়েছিলেন রাজনীতি থেকে। কিন্তু তারপরও পিছু ছাড়েনি আক্রোশের কালো মেঘ।

১৯৭৬ সালের ১০ জুন
ভোর হওয়ার আগেই অম্বর ও জয়গড় দুর্গ সংলগ্ন এলাকা ঘিরে ফেলেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সরকারের কাছে খবর ছিল মান সিংহের গুপ্তধন লুকিয়ে রাখা হয়েছে জয়গড় দুর্গের জলাধারে। সেই গুপ্তধনের মালিক আর কেউ নয়, জয়পুরের মহারানী গায়ত্রী দেবী। মান সিংহের গুপ্তধন উদ্ধার করার জন্য জয়গড় দুর্গে হানা দিয়েছিল সেনাবাহিনীর তিনটি ইউনিট।
স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কল্যানে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এই রোমহর্ষক তল্লাসি অভিযানের কথা। দুর্গের ভেতর থাকা প্রাসাদ, বাগিচা, অস্ত্রশালা, মিউজিয়াম, মন্দির, সুড়ঙ্গ, জলাধারগুলির ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে তল্লাসি চালিয়েছিল সেনারা। ব্যবহার করা হয়েছিল মেটাল ডিটেক্টর।

তল্লাসির খবর পেয়ে, ১৯৭৬ সালের ১১ আগস্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভূট্টো। কারণ তাঁকেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছিল জয়গড় দুর্গেই লুকনো আছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে লুঠ করে নিয়ে যাওয়া টন টন সোনা ও হিরে।
চিঠিতে পাকিস্তানের প্রাপ্য অংশ পাকিস্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন ভূট্টো। এই গুপ্তধন অবিভক্ত ভারতের সম্পদ। তাই পাকিস্তানও এই সম্পদের ন্যায্য ভাগীদার। ভুট্টোর চিঠির উত্তর কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দেননি ইন্দিরা গান্ধী।

টানা তিন মাস জয়গড় দুর্গে গুপ্তধনের সন্ধান চালিয়েছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু দুর্গের বাইরে আসেনি তল্লাসি সংক্রান্ত কোনও তথ্য। ১৯৭৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ভূট্টোকে ইন্দিরা গান্ধী চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন,”সম্পদ ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ জয়গড় দুর্গে কোনও গুপ্তধন খুঁজে পায়নি ভারতীয় সেনাবাহিনী।”
স্বভাবতই সে কথা বিশ্বাস করেনি পাকিস্তান। লোকসভাতেও উঠেছিল এই তল্লাসি অভিযানের প্রসঙ্গ। সেখানেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল একই কথা। কোনও কোনও পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সম্ভবত জয়গড় দুর্গ ও জয়পুর শহর তৈরি করার জন্য, এই গুপ্তধন ব্যয় করে ফেলেছিলেন সওয়াই দ্বিতীয় জয় সিংহ।

আজও মেলেনি দুটি প্রশ্নের উত্তর
সরকারের কথা বিশ্বাস সেদিন করেননি স্থানীয় মানুষও। কারণ তল্লাসি শেষ হওয়ার দু’দিন আগে পুরোপুরিভাবে সিল করে দেওয়া হয়েছিল জয়পুর-দিল্লি জাতীয় সড়ক। স্থানীয় মানুষেরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, রাতের অন্ধকারে এলাকা ছেড়েছিল সেনাবাহিনীর বেশ কিছু ট্রাক।
চাকার আওয়াজ বলে দিচ্ছিল, ট্রাকগুলি খালি ছিল না। তাই হয়ত স্থানীয় মানুষ করেছিলেন অমোঘ দু’টি প্রশ্ন। কেন দু’দিন ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল জয়পুর-দিল্লির (NH48) মত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক? কী নিয়ে রাতের অন্ধকারে জয়গড় দুর্গ ছেড়েছিল সেনাবাহিনীর ট্রাকগুলি?
আজও পাওয়া যায়নি এই দুটি প্রশ্নের উত্তর। তবে সম্ভবত প্রশ্ন দু’টির উত্তর জানতেন, জয়পুরের মহারানী গায়ত্রী দেবী। যিনি তিহার জেলের ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য, তল্লাসি অভিযানের দিনগুলিতে, নিজেকে সেচ্ছাবন্দি করে রেখেছিলেন অম্বর প্যালেসে। কোনও প্রশ্নের উত্তরই পরবর্তীকালে দেননি মহারানী। হয়ত তাঁর মনেও জেগেছিল একটি প্রশ্ন, “কারও থেকে বেশি সুন্দরী ও বিদূষী হওয়াই কি কাল হয়ে উঠল আমার জীবনে!”

আরও পড়ুন: শহিদের তালিকায় শতাধিক যুবক, তবুও এই গ্রামের ঘরে ঘরে ফৌজি