শেষ আপডেট: 26th December 2023 17:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কাঁপুনি ধরেছে সূর্যে?
থরথর করে কাঁপছে আমাদের সৌরমণ্ডলের সম্রাট।
আগুনে শরীরে দেখা দিচ্ছে কালো কালো দাগ। অশান্তির আগুন জ্বলছে কি সৌর-সংসারে?
সূর্যে কম্পন হচ্ছে। পৃথিবীতে যেমন সুনামি আসে, সূর্যেও তেমনটাই নাকি হয়। সৌরপদার্থবিজ্ঞানীরা বলছেন, সৌরকলঙ্ক (সানস্পট) আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে। মনে হচ্চে যে কোনও সময়ে প্রলয়ঙ্কর ঝড় উঠবে সূর্যে। পৃথিবীর কম্পন ধরার জন্য যেমন সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা, তেমনি সূর্যে কম্পন ধরার পদ্ধতি হল হেলিওসিসমোলজি। এই প্রক্রিয়ায় সূর্যের অন্দরের ও পৃষ্ঠদেশের (সারফেস) কম্পন চিহ্নিত করা যায়।
সূর্যের পিঠে গজিয়ে ওঠা ওই সৌর কলঙ্কগুলির জন্ম, বাড়তে বাড়তে সংখ্যায় সর্বাধিক হয়ে ওঠা, তার পর ধীরে ধীরে তা কমতে কমতে নগণ্য হয়ে পড়ারও একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেটা ১১-১২ বছর ধরে চলে। এই সময়টাকে বলা হয় সৌরচক্র বা সোলার সাইকেল। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সোলার সাইকেল শুরু হয়েছে সূর্যে। তাই দেখা দিচ্ছে সৌরকলঙ্ক। কম্পন হচ্ছে সৌরসংসারে। এই সময়ে সূর্যের অন্দর উত্তাল থাকে। ভয়ঙ্কর সৌরঝড়ের জন্ম হতে পারে। সূর্য থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছিটকে আসা সৌররশ্মি মহাকাশে দাপিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এই সৌররশ্মিরা পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক।
কেন তৈরি হয় সৌরকলঙ্ক? কেন কম্পন হয় সৌরসংসারে?
সূর্যের পিঠের অনেক অনেক নীচে, একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে সুবিশাল একটি পরমাণু চুল্লি। সূর্যের এত তেজ তৈরিই হয় ওই চুল্লির কারণে। সেই চুল্লির উপরে সূর্যের পিঠের ২০ হাজার কিলোমিটার গভীরতায় একের পর এক চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি সাপের মতো এঁকেবেঁকে ঘুরে বেড়ায়। একবার উপরে ঠেলে ওঠে, আবার নীচে নেমে যায়। কিছুদিন আগেই সূর্যের গায়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে কিছু চলতে দেখা গিয়েছিল। সেটাও ছিল চৌম্বকক্ষেত্রই।
সেই চৌম্বক ক্ষেত্রগুলি যত শক্তিশালী হয়ে ওঠে, ততই তা সূর্যের অন্দর ফুঁড়ে উঠে আসে তার পিঠে। সূর্যের পিঠে তৈরি করে ছোট, বড় মাঝারি চেহারার কালো কালো দাগ। এইগুলিই সৌরকলঙ্ক বা সানস্পট। ওই কালো কালো দাগগুলি সূর্যের পিঠে তৈরি হওয়ার পর একটা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে হারিয়ে যায়। কখনও তা মিলিয়ে যায় সূর্যের পিঠে। বড় সানস্পটগুলির ব্যাস হতে পারে ২০ থেকে ৩০ মেগা মিটারের (মানে, ১০ হাজার মিটার) মধ্যে। তা ৫০ মেগা মিটারও হতে পারে। সেগুলি ‘জায়ান্ট সানস্পট’। এই সানস্পট বা সৌরকলঙ্ক থেকেই জন্ম হয় করোনাল মাস ইজেকশনের (সিএমই)। আর তাদের শক্তি পৃথিবীর যে কোনও চৌম্বক ক্ষেত্রের অন্তত ১০ হাজার গুণ।
সিএমই তৈরি হলে সূর্যে ঝড় ওঠে। লক্ষ লক্ষ আগুনে সৌরকণারা বেরিয়ে এসে আমাদের বায়ুমণ্ডলের পক্ষে হয়ে ওঠে অত্যন্ত বিপজ্জনক। অত্যন্ত ক্ষতিকারক হয় মহাকাশের আবহাওয়ার পক্ষেও। একের পর এক বিস্ফোরণ হয়ে চলে সূর্যে। থরথর করে কাঁপতে থাকে সূর্য।
এই সৌরকলঙ্ক বা সানস্পটের বাড়াকমা দেখেই বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন সৌর বিকিরণ (সোলার রেডিয়েশন)-এর পরিমাণ বাড়বে নাকি তা কমবে। সৌর বিকিরণ বাড়লে আরও বেশি সৌরবায়ু (সোলার উইন্ড) এসে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপর আছড়ে পড়বে। পৃথিবীর টেলি যোগাযোগ, জিপিএস সিস্টেম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে পৃথিবীর কক্ষে থাকা স্যাটেলাইটগুলোতে। সৌরবায়ু আছড়ে পড়ার জন্য আমাদের গ্রহের তাপমাত্রা বাড়বে। উষ্ণায়নের আশঙ্কা বাড়বে আরও বেশি। তাপমাত্রা বাড়বে মহাকাশের আবহাওয়ারও। আর সেই সৌর বিকিরণ হঠাৎ কমে গেলে, পৃথিবী ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাবে। আর সেই সৌর বিকিরণ কমে যাওয়ার ঘটনাটা যদি একনাগাড়ে অনেক বছর বা দশকের পর দশক ধরে চলে, তা হলে পৃথিবী এগিয়ে যাবে ‘তুষার যুগ’-এর দিকে।