
রূপাঞ্জন গোস্বামী
গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর। প্রাচীন এই শহরের অলিগলিতে লুকিয়ে আছে কত শত জানা অজানা ইতিহাস। প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার মানুষদের কাছে পরিচিত ছিল এই জৌনপুর শহর। আরব ও পার্সিদের নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল এই শহরে। শোনা যায় এই জৌনপুরেই শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন শের শাহ সুরি। সুফি মতবাদেরও প্রসার ঘটেছিল এই জৌনপুর থেকেই।
হিন্দুস্থানী ধ্রুপদী সঙ্গীত জগতে জৌনপুরী ঘরানার সুত্রপাত করেন, জৌনপুরের ‘শার্কি’ রাজত্বের শেষ সুলতান হুসেইন শাহ। সঙ্গীতানুরাগী ও প্রবাদপ্রতিম খেয়াল গায়ক সুলতানের সুললিত কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছিল রাগ জৌনপুরী-আশাবরী (জৌনপুরী) ,জৌনপুরী-বসন্ত, মালহার-শ্যাম, গৌড়-শ্যাম, ভোপাল -শ্যাম সহ আরও অনেক কালজয়ী রাগ রাগিনী ।

বহু ইতিহাস সৃষ্টিকারী জৌনপুর জেলা আজও গড়ে চলেছে ইতিহাস। এক অবিশ্বাস্য ইতিহাস। এবং ইতিহাসটি গড়েছে একটি গ্রাম। জৌনপুর সদর থেকে মাত্র থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে আছে সবুজে ঘেরা ‘মাধোপট্টি'(Madhopatti)। এই গ্রামের পঁচাত্তরটি বাড়িতে বাস করেন প্রায় সাতশো মানুষ। বেশিরভাগ লোকই রাজপুত সম্প্রদায়ের।
‘অফসর গাঁও’ মাধোপট্টি (Madhopatti)
গদ্দিপুর এলাকার মাধোপট্টি গ্রামকে সারা ভারত চেনে ‘অফসর গাঁও’ হিসেবে। কারণ গ্রামের ঘরে ঘরে সরকারি অফিসার। তবে কেউই সাধারণ অফিসার নন। তাই মাধোপট্টির নাম ভেসে বেড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অলিন্দে অলিন্দে।
ভেসে বেড়ায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। কারণ ঘন সবুজ গাছপালার আড়ালে লুকিয়ে থাকা গ্রামটি ভারতকে আজ পর্যন্ত উপহার দিয়েছে সাতচল্লিশ জন ‘আইএএস’ অফিসার।

শুধু তাই নয় মাধোপট্টি গ্রামের পঞ্চাত্তরটি বাড়িতে আইএএস (Indian Administrative Service) অফিসার ছাড়াও পাওয়া যাবে আইপিএস (Indian police service), আইএফএস (Indian foreign service), আইআরএস (Indian revenue service) অফিসারদের খোঁজ।
এছাড়াও মাধোপট্টি গ্রামের ছেলেমেয়েরা ছড়িয়ে আছেন ভাবা পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র (BARC), ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO), বিশ্বব্যাঙ্কের সদর দফতরে।
বিস্ময়ের সুত্রপাত ১৯১৪ সালে
মাধোপট্টি গ্রামের অভাবী পরিবারের মেধাবী ছেলে সইদ মহম্মদ মুস্তাফা পাশ করেছিলেন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা। মাধোপট্টি গ্রাম সেই প্রথম দেশকে উপহার দিয়েছিল উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার। প্রথম পা রেখেছিল ভারতের শাসন ক্ষমতার অলিন্দে। বিখ্যাত উর্দু কবি ও সাহিত্যিক বামিক জৌনপুরীর পিতা মহম্মদ মুস্তাফা হয়েছিলেন ডেপুটি কালেক্টর। খান বাহাদুর উপাধিও পেয়েছিলেন।
এরপর মাধোপট্টি গ্রাম, ১৯৫২ সালে ভারতকে উপহার দিয়েছিল দ্বিতীয় ‘আইএএস’ অফিসার। গ্রামের ছেলে ইন্দুপ্রকাশ সিং হয়েছিলেন ‘আইএএস’ অফিসার। পরবর্তীকালে এই ইন্দুপ্রকাশ সিং, ফ্রান্স সহ বিভিন্ন দেশে ভারতের রাষ্ট্রদুত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৫৩ সালে, মাধোপট্টি গ্রামের ছেলে বিদ্যা প্রকাশ সিং হয়েছিলেন ‘আইএএস’।

এরপর ঘটেছিল বিস্ময়কর এক ঘটনা
১৯৫৫ সালে মাধোপট্টি গ্রামের সুরজভান সিংয়ের বড় ছেলে বিনয় কুমার সিং ‘আইএএস’ পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে বিহারের মুখ্য সচিবও হয়েছিলেন। তাঁর দুই ভাই ছত্রপাল সিং ও অজয় কুমার সিং, ১৯৬৪ সালে একই সঙ্গে ‘আইএএস’ পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ছত্রপাল সিং হয়েছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্য সচিব।
পরিবারের ছোটছেলে শশীকান্ত সিংও ১৯৬৮ সালে সফল হয়েছিলেন ‘আইএএস’ পরীক্ষায়। বিস্ময়কর কাহিনিটি এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। শশীকান্তের ছেলে যশস্বী সিংও ২০০২ সালে ‘আইএএস’ পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন।
সোনালি হরফে লেখা আরও কিছু নাম
গ্রামের চার ভাই ‘আইএএস’ হওয়ার পর আর পিছন দিকে তাকায়নি মাধোপট্টি গ্রাম। মাধোপট্টি গ্রামের শিবানী সিং, বেদপ্রকাশ সিং, মিথিলেশ সিং, অমিতাভ সিং, বিশাল বিক্রম সিং, রামমূর্তি সিং, বিদ্যাপ্রকাশ সিং, প্রেমচন্দ্র সিং, মহেন্দ্র প্রতাপ সিং, জয় সিং, প্রবীণ সিং, ঋতু সিং, অশোক কুমার প্রজাপতি, প্রকাশ সিং, সঞ্জীব সিং, আনন্দ সিং, বিশাল সিং, বিকাশ সিং, বেদপ্রকাশ সিং, নীরজ সিং সহ আরও বহু ছেলেমেয়ে উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা হয়ে ছড়িয়ে আছেন সারা ভারতে।

গ্রামের ছেলে অমিতাভ সিং আজ ভারতীয় ডাক বিভাগের ডেপুটি ডাইরেক্টর জেনারেল। ডিপার্টমেন্ট অফ টেলি কমিউনিকেশনের ডেপুটি ডাইরেক্টর পদে আছেন গ্রামের মেয়ে কল্পনা সিং। বিশ্বব্যাঙ্কের সদর দফতর ম্যানিলায় আছেন জন্মেঞ্জয় সিং।
বৈজ্ঞানিক লোলেন্দ্র প্রতাপ সিং আছেন ভাবা ইন্সটিটিউটে। বৈজ্ঞানিক রানু মিশ্র আছেন ইসরোতে। এছাড়াও মাধোপট্টি দিয়েছে নীরু সিংয়ের মত বিখ্যাত চিকিৎসককে। শুধু গ্রামের ছেলে মেয়েরাই নয়, গ্রামের অনেক পরিবারের জামাই ও বউমারাও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার।
আরও পড়ুন: দোকান আছে দোকানি নেই, বিশ্বাসের ওপর চলে ব্যবসা, এই ভারতেই
রহস্যটা কী!
মধ্যপ্রদেশের চম্বল এলাকার বিখ্যাত প্রবাদ, “চম্বল নদীর জল যে একবার পান করে সে বাগী হয়ে যায়।” উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর জেলার মাধোপট্টিকে নিয়ে ছড়িয়ে আছে ঠিক সেরকমই কিছু প্রবাদ।
উত্তরপ্রদেশের মানুষেরা বলেন,” মাধোপট্টি গ্রাম কেবলমাত্র উচ্চপদস্থ অফিসারদেরই জন্ম দেয়।” কেউ ছাতি ফুলিয়ে বলেন,”সারা দেশ চালানোর ক্ষমতা আছে ভারতের একটি মাত্র গ্রামের। নাম মাধোপট্টি।”
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর, দেশের অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী ব্যস্ত থাকেন বৃত্তিমূলক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, ইন্টারনেট ও মোবাইল নিয়ে। মাধোপট্টি গ্রামের ছেলে মেয়েরা সেই সময় ভিড় জমায় জৌনপুর শহরের বুকস্টলগুলিতে। ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক বই খুঁজে বেড়ায়।

বই কিনে ফেলার পর, জগত থেকে নিজেদেরকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে মাধোপট্টি গ্রামের ছেলেমেয়েরা। আদাজল খেয়ে লেগে পড়ে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC) পরীক্ষার প্রস্তুতির কাজে। পাশাপাশি একই গতিতে চালিয়ে যায় কলেজের সিলেবাস শেষ করার কাজ।
গ্রামের ছেলেমেয়েরা প্রথমেই সর্বশক্তি নিয়োগ করে ইংরেজির ওপর। কারণ গদ্দিপুর এলাকার স্কুলে তারা পড়াশোনা করেছে হিন্দি মাধ্যমে। দু’তিন বছরের নিরলস চেষ্টায় মাধোপট্টি গ্রামের ছেলেমেয়েরা রপ্ত করে ফেলে ঝরঝরে ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখার অভ্যাস।

একইসঙ্গে বিষয় ধরে ধরে চালিয়ে যায় ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিপর্ব। ছাত্রছাত্রীদের বাবা মায়েরা এই সময় বাড়ির ও মাঠের কাজে ডাকেন না ছেলেমেয়েদের। দিনের মধ্যে পনেরো ষোল ঘণ্টাই বইয়ে ডুবে থাকে মাধোপট্টি গ্রামের ছেলে মেয়েরা।
প্রত্যেক বছর ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (IAS) পরীক্ষায় পাশ করেন মাত্র ০.০০৪ শতাংশ আবেদনকারী। এর মধ্যে মাধোপট্টি গ্রামের কোনও যুবক বা যুবতীর নাম সফলদের তালিকায় থাকবেই।
অথচ মাধোপট্টি গ্রামে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করার জন্য কোনও কোচিং সেন্টার নেই। মেধা, একাগ্রতা, ইচ্ছা ও পরিশ্রমকে একত্রিত করলে যে আকাশ ছোঁয়া যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছে মাধোপট্টি গ্রাম। যে গ্রাম আজ সারা দেশের কাছে রোল মডেল।

প্রদীপের নীচে অন্ধকার
সাতচল্লিশ জন আইএএস ও আরও জনা পঁচিশেক উচ্চপদস্থ অফিসারের জন্মভূমি হলেও, বর্তমানে ভাল নেই মাধোপট্টি। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ আজও কৃষি নির্ভর। উর্বর জমিতে গ্রামবাসীরা ফলান গম, ডাল, দানাশস্য, সরষে, আলু, ভুট্টা ও আখ। বড় রাস্তা থেকে গ্রামে ঢোকার রাস্তার মুখে আছে সুদৃশ্য তোরণ। কিন্তু তোরণ দেখে মাধোপট্টি গ্রামের হাল-হকিকৎ অনুমান করলে ঠকতে হবে।

বড় রাস্তা থেকে শুরু হওয়া গ্রামের রাস্তাটি আজও কাঁচা। রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ, গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের রাস্তা ছেড়ে মাঠ ধরতে হয়। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে কোলে করে সড়ক অবধি নিয়ে যেতে হয়। কারণ গ্রামের রাস্তাটি অ্যাম্বুলেন্স আসার পক্ষে উপযুক্ত নয়।
বর্ষার সময় বেহাল রাস্তাটির কারণেই মাধোপট্টি গ্রামের সঙ্গে সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের অবস্থাও শোচনীয়ত। গ্রামে নেই কোনও স্বাস্থকেন্দ্র। তাই গ্রামবাসীরা ভোট বয়কট করেন। ভোট এলেই শোনা যায় “রোড নেহি তো ভোট নেহি” স্লোগান। কিন্তু তাতেও ফেরেনি হাল।

স্থানীয় মানুষেরা অভিমান নিয়ে বলেন, গ্রামের ভূমিপুত্র অফিসারেরা হয়ত গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু তারপর ফিরেও তাকাননি গ্রামের দিকে। আগে গ্রামের উৎসবগুলিতে, বড় রাস্তায় এসে দাঁড়াত, সারি সারি লাল-নীল বাতি লাগানো গাড়ি।
লাল-নীল আলোয় উধাও হয়ে যেত রাতের আঁধার। গাড়ি থেকে নামতেন স্যুট-বুট পরা অফিসারেরা। আজ আর আসে না গাড়িগুলি। লজ্জায় তাই মুখ লুকায় মাধোপট্টি গ্রাম।

জ্বলবে নতুন প্রদীপ!
মাধোপট্টি গ্রামের ভূমিপুত্র ঠাকুর ভগবতী দিন সিং ছিলেন আইনজীবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। শিক্ষাকে নারীর প্রাথমিক অধিকার বলে ভাবতেন তিনি। তাঁর স্ত্রী শ্যামরতি সিং টানা গ্রামের মেয়েদের বিনা পয়সায় পড়িয়েছিলেন টানা বাইশ বছর। অবগুন্ঠনে থাকা নারীদের মধ্যে জ্বালিয়েছিলেন শিক্ষার প্রদীপ।
পরবর্তীকালে এর সুফল পেয়েছে মাধোপট্টি। তাই আইএসএস হওয়ার লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই মাধোপট্টি গ্রামের মেয়েরাও। ১৯৮০ সালে আশা সিং, ১৯৮২ সালে উষা সিং, ১৯৮৩ সালে ইন্দু সিং, ১৯৯৪ সালে সরিতা সিং ‘আইএএস’ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
ঠাকুর ভগবতী দিন সিংয়ের পুত্রবধু সুমিত্রা সিংয়ের বয়স এখন আশি। একসময় সুমিত্রা দেবী ছিলেন ভারতীয় দূতাবাসের লাইব্রেরিয়ান। তাঁর পরিবার ভারতকে দিয়েছে সাত জন ‘আইএএস’ অফিসার। সুমিত্রা দেবী জানেন, গ্রামের ঋণ শোধ করার মত ক্ষমতা তাঁর নেই। তবুও তিনি হাত লাগিয়েছেন গ্রামের উন্নয়নে।

প্রথমেই গ্রামের প্রাথমিক স্কুলটিকে সংস্কার করেছেন। কারণ এই স্কুল ভারতকে দিয়েছে সত্তরেরও বেশি উচ্চপদস্থ আমলা ও অফিসার। তাঁর শাশুড়ির নামে স্কুলটির নতুন নাম রেখেছেন, শ্রীমতি শ্যামরতি সিং প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সুমিত্রা দেবী এখন নজর দিয়েছেন গ্রামের রাস্তার দিকে। কিন্তু পদে পদে বাধা দিচ্ছে আইনী জটিলতা। সুমিত্রা দেবী প্রাথমিক স্কুলের এক চিলতে বারান্দায় বসে ভাবেন, আর যেকটি দিন বাঁচবেন, তার মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ হবে তো!

রাস্তা ও গ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। বন্ধ করে দেন সড়ক। কিন্তু সেদিকে মনোযোগ দেন না, গ্রামের কিছু যুবক যুবতী। কাঁচা রাস্তা, টিম টিম করে জ্বলা বিজলি বাতি, মশার ঝাঁক, শিয়ালের ডাকও বিঘ্ন ঘটাতে পারে না তাঁদের একাগ্রতায়। বই খাতায় হারিয়ে যেতে ভালবাসেন তাঁরা।
কারণ তাঁদের রাতের স্বপ্নে দেখা দেয়, দিল্লির সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং। নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক ও সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুধসাদা অ্যাম্বাসাডর, ফোর্ড ফিয়েস্তা, টয়োটা করোলা বা ক্যামরি।
