শেষ আপডেট: 24th January 2024 15:45
“সেকালের অযোধ্যা নগর আটচল্লিশ ক্রোশ লম্বা, আর বার ক্রোশ চওড়া ছিল। তাহার চারিদিকে প্রকাণ্ড দেওয়ালের উপরে লোহার কাঁটা দেওয়া ভয়ঙ্কর অস্ত্রসকল সাজানো থাকিত। সে অস্ত্রের নাম শতঘ্নী, কেন না তাহা ছুঁড়িয়া মারিলে একেবারে এক শত লোক মারা পড়ে।… তখনকার অযোধ্যা দেখিতে খুব সুন্দরও ছিল। ছায়ায় ঢাকা পরিষ্কৃত পথ, ফুলে ভরা সুন্দর বাগান, আর দামী পাথরের সাততলা আটতলা জমকালো বাড়িতে নগরটি ঝলমল করিত।…”
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘ছেলেদের রামায়ণ’ বইয়ের ‘আদিকাণ্ড’ অংশের শুরু হয় এইভাবে। আমরা পড়েছি সেসব, যারা পড়িনি, তারা শুনেছি। রামায়ণের গল্প কে না জানে! পৃথিবীর সম্ভবত প্রাচীনতম মহাকাব্যটি সারা ভারতের আত্মার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এস ওয়াজেদ আলির লেখা মনে পড়ে যায়। এক গ্রামে গিয়ে দেখলেন, সন্ধ্যেয় রাস্তার ধারে মুদির দোকানে বৃদ্ধ মুদি প্রদীপের আলোয় রামায়ণ পাঠ করছেন, শ্রোতা তার নাতি। অনেকদিন পরে, সেই একই গ্রামে, একই মুদির দোকানে এসে দেখেন, সন্ধ্যেয় একইভাবে রামায়ণ পড়া চলছে, শুধু এবারে পাঠক সেদিনের সেই মুদির পুত্র, শ্রোতা তার নাতি।
সরযূর তীরে অবস্থিত অযোধ্যা নগরের ঐশ্বর্যের সঙ্গে অতএব আমাদের ভালই জানাশোনা আছে। আমরা চোখে দেখিনি, তবু সচিত্র বইয়ের পাতায়, ঠাকুমা-দাদুর ঘুমপাড়ানি গল্পে অযোধ্যা আমাদের ঘোরা হয়ে যায়। কিন্তু অযোধ্যাকে কি ইতিহাসে পাওয়া যায়? আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে অন্তত সাড়ে তিন হাজার বছর। পশ্চিম ভারতে সিন্ধু নদীর ধারে তখন একের পর এক সমৃদ্ধ শহর ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। ঠিক কী কারণে, আজও জানা যায় না। কিন্তু একই সময়ে, পুবে গঙ্গার তীর ধরে দুই পাশে জেগে উঠছে নতুন কিছু শহর। ঠিক শহর তো নয়। একটা শহরকে ঘিরেই যেন গজিয়ে উঠেছে আস্ত এক-একটা রাজ্য। এরকম ষোলোটা ছোট ছোট রাজ্য গড়ে উঠেছিল পশ্চিমে তক্ষশিলা থেকে পুবে দক্ষিণ বিহার অবধি। বৌদ্ধ ও জৈন পুরাণে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ষোড়শ মহাজনপদ’।
এসব খ্রিস্টের জন্মেরও ছয়শো বছর আগেকার কথা। ততদিনে নির্বাণ লাভ করেছেন বুদ্ধদেব। ‘অঙ্গুত্তর নিকায়’ গ্রন্থে এই ষোলোটি মহাজনপদের নাম পাওয়া যায় (পালিতে যাদের বলা হত ‘ষোলসমহাজনপদ’)। যেমনঃ কাশী, কোশল, বৈজি, মগধ, অশ্মক, মল্ল, চেদী, কুরু, পাঞ্চাল, অবন্তী, গান্ধার, কম্বোজ প্রভৃতি। এদের মধ্যে কোশল রাজ্য ছিল অন্যতম শক্তিশালী। আজকের উত্তরপ্রদেশের উত্তর পশ্চিম ভাগ জুড়ে ছিল এই মহাজনপদ। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বিস্তীর্ণ এই রাজ্যের পূর্বে গণ্ডক নদী, পশ্চিমে গোমতী, মাঝবরাবর চলে গিয়েছে সরযূ। এই রাজ্যের রাজধানী ছিল দুটো। উত্তরে শ্রাবস্তী, দক্ষিণে কুশবতী।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, সম্ভবত এই দুই নগরের সঙ্গে আরও বেশ কিছু নগর এই রাজ্যে ছিল, যাদের অন্যতম ছিল অযোধ্যা।
অযোধ্যার উল্লেখ তেমন জোরালোভাবে না হলেও রামায়ণ কাব্যে কিন্তু কোশল রাজ্যের একাধিক উল্লেখ আছে। কৃত্তিবাসী রামায়ণের শুরুতেই রয়েছেঃ
‘কোশল রাজ্যের রাজা কুশল নাম ধরে।
ধার্ম্মিক রাজা সে ধর্ম্মেতে রাজ্য করে।।
কৌশল্যা নামে কন্যা তার পরম সুন্দরী।
কারে বিভা দিবে রাজা অনুমান করি।।‘
এদিকে ইতিহাসে কোশল রাজ্যের এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজার নাম পাওয়া যায়। পালি পুঁথিতে তাঁর নাম রয়েছে ‘পসেন্দি’—অর্থাৎ প্রসেনজিৎ। ইনি বুদ্ধদেবের সমসাময়িক এবং সম্ভবত সুগতর পরম সুহৃদ ছিলেন। বৌদ্ধ পুঁথি থেকে প্রসেনজিতের বৌদ্ধধর্মে দীক্ষাগ্রহণের তেমন খাঁটি খবর পাওয়া যায় না, কিন্তু বুদ্ধদেব ও প্রসেনজিতের একাধিক দীর্ঘ কথোপকথনের উল্লেখ রয়েছে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘মূল্যপ্রাপ্তি’, ‘নগরলক্ষ্মী’ একাধিক কবিতায় বুদ্ধদেব, শ্রাবস্তী ও প্রসেনজিতের উল্লেখ করেছেন। এই প্রসেনজিতের নেতৃত্বেই কোশল পড়শি কাশী রাজ্যকে দখল করে।
তারপরেই কোশলের সঙ্গে সরাসরি টক্কর শুরু হয় সেই সময়ের সবচেয়ে মহাপরাক্রমশালী রাজ্য মগধের। প্রথমে বৈবাহিক সম্পর্ক দিয়ে কূটনীতির পথে শান্তি টিকে ছিল। মগধরাজ বিম্বিসার প্রসেনজিতের ভগ্নী কোশলদেবীর পাণিগ্রহণ করেছিলেন। তখনও মগধের রাজধানী পাটলিপুত্রে আসেনি। রাজগিরে পাঁচটি পাহাড়ের মাঝে অত্যন্ত মজবুত রাজধানী ছিল গিরিব্রজ, বানিয়েছিলেন সেকালের বিখ্যাত স্থপতি মহাগোবিন্দ। কিন্তু বিনয়পিটক বা দিগনিকায়ের মত বৌদ্ধ সূত্রগ্রন্থ মতে, বিম্বিসারের সুপুত্র অজাতশত্রু বাপকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেছিলেন। অতএব প্রসেনজিতের সঙ্গেও তাঁর শত্রুতা শুরু হয়, কিন্তু অজাতশত্রুর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পারায় কোশলও মগধের অধিকারে আসে।
প্রায় এরকম সময়েই কি অযোধ্যায় রাজত্ব করতেন রাজা দশরথ? চট করে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মুশকিল। মহর্ষি বাল্মীকির রামায়ণে কিন্তু কোশল রাজ্যের উল্লেখ আছে। সেই রাজ্যের অযোধ্যা শহর ইক্ষ্বাকুবংশের রাজধানী। শত্রুরা কেউই যুদ্ধ করে এই শহরকে পরাস্ত করতে পারেনি, তাই এর নাম ‘অযোধ্যা’। রাজা দশরথ অতুলনীয়। বাল্মীকির শ্লোকে রয়েছেঃ
‘মহর্ষিকল্পো রাজর্ষিস্ত্রিসু লোকেষু বিশ্রুতঃ।
বলবান্নিহতামিত্রোঃ মিত্রবান বিজিতেন্দ্রিয়ঃ।।‘
—অর্থাৎ, মহর্ষি ও রাজর্ষি বলে তিনি লোকেমুখে পরিচিত ছিলেন। তাঁর বলবীর্য ও সখা-সুহৃদের সংখ্যা প্রভূত, কিন্তু শত্রু ছিল না।
দশরথের মন্ত্রীপরিষদে ছিলেন আটজন অমাত্য। ধৃষ্টি, জয়ন্ত, বিজয়, সুরাষ্ট্র, রাষ্ট্রবর্ধন, অকোপ, ধর্মপাল ও সুমন্ত্র। বশিষ্ঠমুনি ও বামদেব ছিলেন তাঁর পুরোহিত। ছোটবেলা থেকে রামায়ণে আমরা তাঁর তিন পত্নীর কথাই শুনে আসছি বটে, তবে বাল্মীকিকৃত রামায়ণের পুঁথির একটি শ্লোকের হিসেব অনুসারে, তাঁর মহিষীর সংখ্যা সম্ভবত তিনশো বাহান্ন। তবে কৌশল্যা, সুমিত্রা ও কৈকেয়ীই যে প্রধান ছিলেন, এ’কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রামায়ণের এই আখ্যানের ঐতিহাসিকতা কতটা, সেই নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। অযোধ্যায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চলেছে, তাতে নানা পর্বে নানা সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তার অনেকক’টাই ‘পেইন্টেড গ্রে ওয়্যার’ বা রঞ্জিত ধূসর তৈজস পর্বের। এটি বিভিন্ন প্রাপ্ত উপাদানের ভিত্তিতে লৌহযুগের সমসাময়িক এক কালপর্বকে চিহ্নিত করে। কেউ কেউ কিছু উপাদানকে পরবর্তী ‘নর্দার্ন ব্ল্যাক পালিশ ওয়্যার’ গোত্রেও ফেলেছেন। সব মিলিয়ে খ্রিস্টজন্মের প্রায় ৭০০ বছরা আগেকার কথা। কিন্তু ইতিহাসবিদ উপিন্দর সিংহ বা ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখদের মতে, অযোধ্যায় বসতিস্থাপনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত থাকলেও রামায়ণে বর্ণিত কাহিনীকে একেবারে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে, এমন উপাদান এখনও বেশি পাওয়া যায়নি।
এই তর্কে গেলেই রামায়ণ না মহাভারত, কে বেশি পুরনো, সেই বিতর্ক শুরু হয়। আমরা জানি, দুই মহাকাব্য যথাক্রমে বাল্মীকি ও ব্যাস—দুই প্রাচীন মুনির রচনা। ঘটনা হচ্ছে, দুই কাহিনীরই প্রচলন এত সুপ্রাচীন যে—সুদীর্ঘকাল ধরে বহু আখ্যান, বহু ঘটনা প্রক্ষেপের মত জুড়ে গিয়ে দুই মহাকাব্যকেই দীর্ঘ করেছে। ফলে আসল বা খাঁটি পুরনো কাব্য কোনটা—আজ আর জানার উপায় নেই।
আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির মিশ্রণকে মানদণ্ড ধরে ম্যাক্স মুলারের মত ঔপনিবেশিক যুগের ইন্দোলজিস্ট বা ভারততাত্ত্বিকরা অনেকেই ভাবতেন, মহাভারত রামায়ণের পরবর্তী। আর্যদের আগমনের প্রথমদিকে আর্য সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য অনেক বেশি ছিল। পরে অনার্যদের সঙ্গে আদানপ্রদান শুরু হয়। ফলে মহাভারতের আর্য নায়কদের আচারে বহু অনার্য রীতিনীতি ঢুকে পড়ায় মহাভারতকে রামায়ণের বিশুদ্ধ আর্য সংস্কৃতির নিরিখে পরের দিকের রচনা বলে অনেকে রায় দিয়েছেন। কিন্তু আধুনিক ইতিহাসবিদরা বলছেন অন্য কথা। মহাভারতের ঘটনাপ্রবাহ বেশিরভাগটাই উত্তর ভারতে, গঙ্গার উচ্চ অববাহিকায়। বৈদিক ও পরবর্তী যুগের বিস্তারের শুরুটা ছিল উত্তর ভারত থেকেই। পরে মহাজনপদের যুগে তা ক্রমশ পুবদিকে সরে যায়, পাটলিপুত্র হয়ে ওঠে রাজনীতি ও অর্থনীতির স্নায়ুকেন্দ্র। রামায়ণের কাহিনী অনেক বেশি গঙ্গার মধ্য ও নিম্ন অববাহিকায়, অর্থাৎ পূর্ব ভারতে। ফলে রামায়ণ সম্ভবত পরের দিকের রচনা। রামায়ণের অত্যন্ত দৃঢ়সংবদ্ধ ও পরিশীলিত আখ্যানেও এই পরের দিকের ছাপ পাওয়া যায়।
তবে মহর্ষি বাল্মীকির লেখা এই পরিশীলিত কাব্য আসলে পণ্ডিতজনের কথা ভেবে লেখা। সংস্কৃত অধ্যয়নের চল সুপ্রাচীনকালের বটে, তবে যুগ যুগ ধরেই গুণীজনদের সারস্বতচর্চার ভাষা সংস্কৃতের পাশাপাশি আমজনতার কথ্যভাষা হিসেবে প্রাকৃত, পরে তার অপভ্রংশ-অবহঠট রূপের প্রচলন ছিল। ফলে বাল্মীকির রামায়ণের অনুবাদ সুপ্রাচীনকাল থেকে বহু ভাষায় পাওয়া যায়। যার অন্যতম, অবধী হিন্দিতে গোঁসাই তুলসীদাসের ‘রামচরিতমানস’ ও বাংলায় কৃত্তিবাসের শ্রীরাম পাঁচালি।
কথাটা প্রথমে শুনলে বেশ কাকতালীয় শোনাবে। তবে সমরখন্দ থেকে ঠিক যেরকম সময়ে ফরঘনার শাসনকর্তা জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর সসৈন্যে এগিয়ে আসছেন হিন্দুস্তানের দিকে, প্রায় একই সময়ে বর্তমান উত্তরপ্রদেশের কাশগঞ্জের কাছে এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রামকথা আখ্যানের সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ কবি গোসাঁই তুলসীদাস।" অচিরেই সেকালের বিখ্যাত শহর বেনারস হয়ে ওঠে তাঁর কর্মস্থল। সেখানেই তিনি বেদ-পুরাণ-রামকথা ও সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হ’ন। মনে করা হয়, আনুমানিক ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর মাতৃভাষা অবধিতে ‘রামচরিতমানস’ রচনা শুরু করেন।
টানা আড়াই বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল এই লেখা শেষ হতে। অথচ ফল হয়েছিল অভাবনীয়। সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যে এমন জনপ্রিয়তা ‘রামচরিতমানস’ বাদে আর দ্বিতীয় কোন কাব্য পেয়েছে কিনা, সন্দেহ আছে। শান্তিনিকেতনের হিন্দি সাহিত্যের অধ্যাপক রামবহাল তেওয়ারীর কথায়, ‘রামচরিত সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে—‘এক শব্দকে ইককীশ অর্থ’, অর্থাৎ, এক একটি শব্দের একুশ রকমের অর্থ পাওয়া সম্ভব। সমগ্র গাঙ্গেয় অববাহিকায়, আমজনতার ঘরে ঘরে কার্যত জীবনযাত্রার সমার্থক হয়ে ওঠে রামচরিতমানস—আজও যার পাঠের আসরে লোকের ভিড় উপচে পড়ে।
মোট বারোটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তুলসীদাস গোস্বামী। যার মধ্যে পাঁচটি বড় ও বাকি সাতটি ছোট। রামচরিতমানস ছাড়াও তুলসীদাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা ‘বিনয় পত্রিকা’, দোহাবলী ও গীতাবলি। আচার্য সুনীতিকুমার চাটুজ্জ্যের মতে, ‘বিনয় পত্রিকা’-ই তুলসীদাসের শ্রেষ্ঠ রচনা।
পুরাকালের সেই অযোধ্যা নগরীকে ঘিরে গল্পকথা যা-ই থাকুক, আজ এই ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি যেন অযোধ্যায় সেসব গল্প বাস্তবে উপস্থিত হয়েছে। গোটা শহর জুড়ে সাজো সাজো রব। উদ্বোধন হবে রামমন্দিরের, আসবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী, থাকবেন তাবড় ভিআইপি ও ভিভিআইপিরা। সাক্ষী থাকবে সারা পৃথিবীর সংবাদমাধ্যম। হয়ত রাজনীতির জাঁকজমকে ঝলমল করবে সায়াহ্নের সরযূ, আকাশ প্রোজ্জ্বলিত হয়ে উঠবে আতসবাজিতে। সাড়ে তিন হাজার বছরের এক দীর্ঘ ট্র্যাডিশন আজ সুস্পষ্টভাবে জানান দেবে, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের সংখ্যাগুরু কারা।
কিন্তু তার সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই বেঁচে থাকবে রামায়ণ ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্য এই জাঁকজমক থেকে দূরে, যার স্রোত বয়ে চলেছে ফল্গুধারার মত জাতীয় মানসে। যে ঐতিহ্যকে সাড়ে তিন বছর ধরে সযত্নে রক্ষা করেছেন যে রামকথা জাগরূক হয়ে রয়েছে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রে। যে রামকথা উপনিবেশের যুগে কুলি ও শ্রমিকদের সঙ্গে পৌঁছে গিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়, ওশিয়ানিয়ায়, প্রশান্ত মহাসাগরের নানা দ্বীপে। ১৯৮৭ সালের কথা। দূরদর্শনে শুরু হল রামানন্দ সাগরের পরিচালনায় ধারাবাহিক ‘রামায়ণ’। রামের ভূমিকায় অরুণ গোভিল, সীতা দীপিকা চিখলিয়া। রামানন্দ গল্পকে সাজিয়েছিলেন তুলসীদাসের ‘রামচরিতমানস’, কন্নড়ে রামচন্দ্রচরিত, বাংলায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ ইত্যাদি একাধিক অনুবাদের ওপর। সেই ধারাবাহিক রীতিমত সমস্ত রেকর্ড তছনছ করে দেয়। জনপ্রিয়তা এমন আকাশছোঁয়া জায়গায় যায় যে, শোনা যায়, প্রতি রবিবার সকালে ধারাবাহিকের সময় হলেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যেত, দোকানের ঝাঁপ পড়ে যেত, সবাই দল বেঁধে টিভির সামনে বসে পড়ত।
হয়ত আজকের পরে এরকম কোনও ঘটনা আবার দেখতে পাবো। নতুন করে, অন্য কোনও মাধ্যমে।