শেষ আপডেট: 26th February 2025 16:45
শিবচতুর্দশী পালন নিয়ে নানা ব্যাখ্যা আছে। আজকের তিথিতে সমুদ্র মন্থনে ওঠা বিষ কণ্ঠে ধারণ করে নীলকণ্ঠ হয়েছিলেন মহাদেব (Mahadev)। রক্ষা পেয়েছিল ত্রিলোক। আবার এটাও বলা হয় দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল আজকের দিনে। স্কন্দ পুরাণ শিবরাত্রির অন্য ব্যাখ্যাও দিয়েছে। মূলত পরিবারের সুখ শান্তি ও মঙ্গল কামনাতেই এই বিশেষ তিথিতে পুরুষ,মহিলা নির্বিশেষে শিবরাত্রির ব্রত (2025 Shivratri) পালন করেন। সারাদিন উপোস থেকে শিবের মাথায় ফুল,বেলপাতা দেন ভক্তরা। দই-দুধ-মধু আর গঙ্গার জল ঢালেন শিবলিঙ্গে (Shivling)।
ভক্তদের এই কর্মকাণ্ডকে ঘিরেই শুরু শিবলিঙ্গ নিয়ে নানা বিপরীতমুখী ভাবনার। কেন শিবশক্তির আরাধনা (2025 Shivratri) সম্পূর্ণ হয় লিঙ্গ পুজোয়? এর সঠিক কারণ হয়তো অনেকেরই অজানা। তাই অশালীনতা দোষেও মাঝেমধ্যেই দুষ্ট হয়। মুখে শিবের মাথায় জল ঢালার কথা বললেও বাস্তবে পুরো পুজো পদ্ধতিই শিবলিঙ্গকে ঘিরে। কেন এমনটা? ২০২৫ এর জেন-বিটা যুগে এ প্রশ্ন বোধহয় খুব একটা অপ্রাসঙ্গিকও নয়। আবার সেই মহেঞ্জোদরো যুগ থেকে এ পর্যন্ত কোন টানে লিঙ্গ পুজোর এমন ধারা বহমান, সেটাও ভাবায় বইকি!
পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী শোনালেন লিঙ্গ পুরাণের আখ্যান। জানালেন, এই পুরাণের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আকাশ হচ্ছে লিঙ্গ। পৃথিবী তাকে ধারণ করে রাখে। সেটা যেমন সমস্ত দেবতার আবাসস্থল, তেমনই সেখানেই আবার সমস্ত বিশ্ব লীন হয়। যেখানে গোটা বিশ্ব লীন হয় বা লয় হয়, সেটাই লিঙ্গ। শিবলিঙ্গ (Shivling) প্রথিত রয়েছে গৌরীপট্টে। যেটা আসলে গোটা সৃষ্টির আধার।
তাঁর কথায়, "লিঙ্গ এখানে একটা প্রতীক। শিবলিঙ্গকে (Shivling) স্নান করানোর পর ধ্যান মন্ত্র উচ্চারিত হয়। ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং। 'রজতগিরিনিভং' অর্থাৎ রুপোর পাহাড় যেন, হিমালয়ের সঙ্গে তাঁকে একাত্ম করে দেওয়ার চেষ্টা। প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। এখানে কিন্তু শুধু লিঙ্গ নয়, ভগবান দেবাদিদেবের প্রসারিত উপস্থিতি। সৃষ্টি আর প্রকৃতি এখানে মিলেমিশে একাকার।"
একবার বিষ্ণু ও ব্রহ্মার মধ্যে বেঁধেছিল ঘোরতর লড়াই। কে বড়? তাই নিয়ে। তখন জাজ্জ্বল্যমান শিবলিঙ্গ এসে দাঁড়াল তাঁদের মধ্যে। দুজনকেই বলা হল লিঙ্গে প্রবেশ করো, অন্ত পাও কিনা দেখো। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর কথায়,"বিষ্ণু গেলেন পাতালের দিকে। ব্রহ্মা গেলেন উপরের দিকে। বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর বিষ্ণুর পথ আটকাল কালাগ্নি রূদ্র। তাঁকে এড়িয়েই এগোনোর চেষ্টা করলেন বিষ্ণু। সফল হননি। কালাগ্নি রূদ্রের তেজে মূর্ছা গেলেন তিনি। জ্ঞান যখন ফিরল তিনি তখন কৃষ্ণবর্ণ অর্থাৎ সেটাই তাঁর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রূপ। মহাদেবের আরাধনা করলেন বিষ্ণু। দেবাদিদেব বর দিলেন তাঁকে।"
ব্রহ্মার যাত্রা কিন্তু তেমন হল না। অতি চালাকির খেসারত দিতে হল তাঁকে। খানিকটা যাওয়ার পর যাত্রাপথে পেয়েছিলেন কেতকী ফুলকে। তাঁর বুদ্ধিতে মহাদেবের কাছে এসে জানিয়েছিলেন অন্ত দেখেছেন তিনি। সেখানে জটায় বাঁধা কেতকী ফুল। রুষ্ট হয়েছিলেন মহাদেব। অভিশাপ দিয়েছিলেন পুজোয় লাগবে না কেতকী ফুল। ব্রহ্মার পুজোও হবে না কোথাও। মহাশক্তিধর সৃষ্টি-স্থিতির ধারক মহাদেব। এখানে লিঙ্গ সৃষ্টির প্রতীক, স্থিতিরও। মহেঞ্জোদরোর সভ্যতা থেকে বহমান আধুনিক ভারতের চিন্তা চেতনাকে সঙ্গে নিয়েই এই বিশ্বাসের সমান্তরাল পথ হাঁটা।