
রূপাঞ্জন গোস্বামী
পৃথিবীতে মানবসভ্যতার শেষদিনটি ভয়ঙ্কর হবে জানাই কথা। সে আমি, আপনি থাকি আর নাই থাকি। তবে সে দিন আসতে আসতে এখনও কয়েক কোটি বছর। অবাস্তব, তবুও মনে করুন পৃথিবীতে রাখা সব অ্যাটম বোমা একসঙ্গে ফেটে গেল। ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে পৃথিবীর সব বাড়ি ধূলিসাৎ হল। যদি এসব হয়, তাহলে আপনার কি মনে হয় পৃথিবীতে কেউ বাঁচবেন? হ্যাঁ, বাঁচবেন কিছু মানুষ। পাঁচ বছরের জন্য।
তাঁরা কেউ আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষ নন। পৃথিবীর মুষ্টিমেয় কিছু ধনকুবেরের মধ্যেও মুষ্টিমেয় কিছু ভাগ্যবান ধনকুবের। হ্যাঁ ডুমস ডে’তেও পৃথিবীতে সুপার-রিচদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য পাতালে বিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল বাঙ্কার বানানো হয়েছে। পাতালপুরীর এই ১৫ তলা সুপার শেল্টার, পৃথিবীর যে কোনও বোমা আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে আবাসিকদের সুরক্ষিত রাখবে। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে কোনও জীব না বাঁচলেও তাঁরা বাঁচবেন, অন্তত পাঁচ বছর।
পৃথিবীর শেষদিনে, বিত্তশালীদের জন্য তৈরি লাক্সারি বাঙ্কারটির পোশাকি নাম সারভাইভাল কনডো(Survival Condo)। আমেরিকার অতিকায় অ্যাটলাস মিসাইলের খোলের ভেতর তৈরি করা হয়েছে এই অত্যাধুনিক ও পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বাঙ্কার। এখানে প্রাসাদের বৈভব নিয়ে থাকবেন পৃথিবীর সেরা সেরা ধনীরা ও তাঁদের পরিবার ।
এখন অবশ্য সত্তর জনের জন্য তৈরি হয়েছে এই পাতালপুরী। সাইলো-এফ হল পৃথিবীর প্রথম সারভাইভাল কনডো। বাঙ্কারটির দেওয়ালে গরম, ঠান্ডা, জল ও বাতাস দাঁত ফোটাতে পারবে না। অ্যাটম বোমার সরাসরি আঘাতকেও হেলায় রুখে দেবে শক্তিশালী বাঙ্কার। বহুতল এই সারভাইভাল কনডোর বাসিন্দারা প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি করা যে কোনও বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাবেন।
সাইলো-এফ’এর ডেভলপাররা যে কোনও বিপর্যয় সামলাতে সক্ষম দুই বেডরুমের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট দিচ্ছেন। ফ্যাটে থাকছে প্লাজমা টিভি, ক্লোজ সার্কিট টিভি, সাজানো আধুনিক মডিউলার কিচেন, ডাইনিং হল। প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটে আলাদা অত্যাধুনিক বাথরুম আছে। বাথরুম তৈরি করা হয়েছে মহাকাশযানের বাথরুমের অনুকরণে। প্রত্যেক ফ্ল্যাটে আছে সৌরশক্তি চালিত পাওয়ার হাউস।
একটি ফ্লোরের অর্ধেক অংশের দাম ১৫ লক্ষ ডলার। পুরো ফ্লোর নিলে ৩০ লক্ষ ডলার। পৃথিবীর সেরা বিত্তশালীদের এই আশ্চর্য্যজনক কলোনির সদস্যদের জন্য বাঙ্কারের ভেতরে আছে ঝর্ণা লাগোয়া সুইমিংপুল, একটি ঝাঁ চকচকে বার, ক্লাস রুম এবং বড়সড় সব দোকান, ক্লোজ সার্কিট টিভি।
আবাসিকদের ফিট রাখার জন্য যার ভেতর আছে একটা দারুণ জিমনাশিয়াম। মাটির উপরে যখন তুলকালাম বিপর্যয় চলবে, মাটির তলায় আবাসিকরা তখন নরম গদিতে নিশ্চিন্তে ঘুম দেবেন। সাইলো-এফ এর মধ্যে আছে সিনেমা হল থেকে কনফারেন্স রুম।
সাইলো-এফের ডেভেলপাররা বলছেন বাঙ্কারের সব ইউনিট এর মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। এর পাশেই অবস্থিত আরেকটি কনডোর মধ্যে মাত্র কয়েকটা ফ্ল্যাট বা ইউনিট বিক্রি হতে বাকি। কিন্তু আবেদনকারীর সংখ্যা প্রচুর। আরেকটি আশ্চর্য্যজনক তথ্য হল, কোনও ভাবেই আপনি এই সুপার শেল্টারটির বিষয়ে বিশদে জানতে পারবেন না। এতক্ষণ যা জানলেন তা কেবল মাত্র হিমশৈলের চূড়া।
কারণ বাকিটা জানার অধিকার আমাদের নেই। জানতে গেলে ১৫ লক্ষ ডলার দিয়ে সাইলো-এফ ইউনিট কিনতে হবে। কারা কিনলেন তা জানা যাবে না, ডেভলপার কোম্পানি এক্ষেত্রে কঠোরভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করছে। যেমন জানা যাচ্ছে না জলের তলায় ডুবে গেলে পাতালপুরীর সাইলো-এফে সৌরশক্তি এবং অক্সিজেন কী ভাবে পাঠানো হবে? তাও আবার পাঁচ বছর ধরে।
তবে একটা জিনিস খুব মজার। পৃথিবীর শেষের দিন সাইলো-এফ’এ যে সমস্ত তাবড় তাবড় বিলিয়নেয়াররা ঢুকবেন, যদি তাঁরা বাঁচেন, তাহলে বেরোবেন কপর্দকহীন চাষী হয়ে। কারণ মাটির ওপরে তাঁদের ব্যবসা আর রাজ্যপাট তো গায়েব হয়ে যাবে।
সে কথা ভেবেই সাইলো-এফ’ এর ভেতরে সংরক্ষণ করা হয়েছে পৃথিবীর সব ধরনের খাদ্যশস্য ও সব্জির বীজ। তাই নতুন সভ্যতার ঊষালগ্নে মাটির ওপরে উঠেই পৃথিবীর সেরা বড়লোকরা নেমে পড়বেন চাষ করতে। তবে সাইলো-এফ’ এ লাঙল আর কোদাল মজুত করা হয়েছে কিনা সেটা এখনও জানা যায়নি।