Latest News

মিঠি পাকিস্তানের একমাত্র হিন্দুপ্রধান শহর, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেরা নিদর্শন

রূপাঞ্জন গোস্বামী

বিশ্বের কাছে পাকিস্তান মানেই অস্থির, অসহিষ্ণু এক ভূখণ্ড। যেখানে মন্দির ও চার্চে বিস্ফোরণ, নিরীহ অমুসলিমদের শোভাযাত্রায় ভয়ঙ্কর আক্রমণ, শয়ে শয়ে মানুষের মৃত্যু নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পাকিস্তান মানে, জোর করে হিন্দু নাবালিকাদের অপহরণ করে বিয়ে ও ধর্মান্তরিত করা।

পাকিস্তান মানেই, আইএসআইয়ের ছাতার তলায় মৌলানা হাফিজ মহম্মদ সায়িদ, জাকিউর রহমান লাকভী, সৈয়দ সালাউদ্দীন বা মৌলানা মাসুদ আজহারদের মতো নৃশংস মৌলবাদীদের বাড়বাড়ন্ত। পাকিস্তান মানেই মৌলবাদের আগুনে বিশ্বজোড়া উসকানি। পাকিস্তান মানেই, দাউদ ইব্রাহিম, ছোটা শাকিলের করাচির ক্লিফটনে বসে বিশ্বজুড়ে ড্রাগ, জুয়া ও নারী ব্যবসা পরিচালনা করা। পাকিস্তান আর সন্ত্রাসবাদ এখন বিশ্বের মিডিয়ার কাছে, প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে।

সুন্দরী মিঠি

কিন্তু জানেন কি , সেই পাকিস্তানেরই পূর্বপ্রান্তের এক ছোট্ট মরুভূমি শহরের ঘুম ভাঙ্গে মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি দিয়ে? শহরটির নাম মিঠি। মিঠি পাকিস্তানের একমাত্র শহর যেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু। হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এই মরু-শহরে হিন্দু মুসলিমরা শান্তিতে বসবাস করে আসছে। হিন্দু মুসলিম জনগণ একসাথে জঙ্গি পাকিস্তানকে প্রতিরোধ করে আসছে যুগের পর যুগ। মিঠিতে জঙ্গি পাকিস্তানের প্রভাব পড়তে দেননি বাসিন্দারা ।

দিনের দাবদাহ এড়াতে,রাতেই বাজার করেন মিঠির বাসিন্দারা

মিঠির মুসলিম বাসিন্দা মারুফ হায়দরের কথায় , “আমাদের শহরে হিন্দু মুসলিম যুগের পর যুগ ধরে শান্তিতে একসাথে বাস করছে। একদিনের জন্যও হিন্দু মুসলিমের মধ্যে ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা হয়নি। মন্দিরে পূজার সময় আমরা মসজিদের লাউডস্পিকার বন্ধ রাখি। নামাজের সময় মন্দিরে কোনও ঘন্টা বাজে না। রমজানের সময় কোনও হিন্দু ভাই বাইরে খায় না। অপর দিকের হোলির দিন মুসলিমরা সব হিন্দুদের বাড়িতে বাড়িতে মিঠাই পাঠায়। হোলি খেলে।”

হোলিতে মাতোয়ারা মিঠি

হিন্দু বাসিন্দা চাঁদরামের একই মত, “মহরম দুঃখের মাস। মিঠির হিন্দুরা সেই মাসে বিয়ে শাদি বা কোনও আনন্দ অনুষ্ঠান করেন না। মিঠিতে মুসলিমরা ঈদে গরু কুরবানি করেন না। এটা পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই হয়ে আসছে। গরুকে এখানে মুসলিমরাও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আমরা এক  সঙ্গে মহরম , ঈদ দীপাবলী পালন করি। ”

দীপাবলির রাতে ,সুন্দরী মিঠি

অবিশ্বাস্য লাগবে শুনতে, মিঠিতে অপরাধের হার পাকিস্তানের যেকোনও জায়গার চেয়ে কম। মাত্র ০.২%। এর অর্থ, পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে কম অপরাধ হয় এই শহরে। তাই বলা যেতে পারে, হিন্দুপ্রধান মিঠিই পাকিস্তানের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ শহর।

এখানে ধর্মীয় দাঙ্গা হয়নি কোনও দিন। জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ঘটেনি কোনও দিন। চেষ্টা করে কোনও পাকিস্তানি মৌলবাদী সংগঠন মিঠিতে জাল বিছাতে পারেনি। হিন্দু মুসলিমরা যৌথভাবে সেই জাল কেটে দিয়েছেন।

মিঠির মিঠাই,। দোকানের ক্যালেন্ডারে মা সরস্বতী

পাকিস্তানের কোল মাইনিং অথরিটি থর-পার্কার জেলার ৯৬০০ স্কোয়ার কিলোমিটার জুড়ে ১২ ব্লকের কয়লা খনি আবিষ্কার করেছে। যার মধ্যে ৭৫০ বিলিয়ন টন কয়লা আছে বলে অনুমান করছে সরকার। চিন থেকে এক্সপার্ট আসছে। প্রায় ৩০০০ এর মতো টেকনিশিয়ান আসবে এই জেলায়। প্রস্তাবিত কয়লা খনিগুলির কয়েকটা ব্লকের অবস্থান মিঠির অনতিদূরে। পাকিস্তান সরকার বাড়াতে চায় মিঠি শহরের পরিধি। তৈরী করতে চায় রাস্তাঘাট, পরিকাঠামো।

মিঠির শিবমন্দির

কিন্তু মিঠির বাসিন্দারা এককাট্টা। সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভাঙতে পারে ,এমন কিছুই করা চলবে না। বাইরের লোকের এখানে থাকা চলবে না। দিনে দিনে আসুন, কাজ করুন, দিনে দিনেই শহরে ছাড়ুন। তাঁরাও চান এলাকার উন্নতি হোক। কিন্তু উন্নয়নের নামে মিষ্টি মিঠিতে মৌলবাদের আমদানি চলবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির  অস্ত্রেই মৌলবাদকে ঘায়েল করে আসছে মিঠি, মৌলবাদের আঁতুড় ঘরে বসে। 

You might also like