
রূপাঞ্জন গোস্বামী
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক সবে শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা হতে না হতেই অবিভক্ত ভারতের বেশির ভাগ অংশ ডুবে যেত নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে। কারণ সে সময় ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থা আজকের মত উন্নত ছিল না। মশাল, তেলের প্রদীপ, কেরোসিন কুপি, কেরোসিন লন্ঠন ও হ্যারিকেন দিয়ে নৈশকালীন আলোর প্রয়োজন মেটাতেন বেশিরভাগ ভারতবাসী। ঠিক তখনই ভারতে নিশীথ সূর্য হয়ে প্রবেশ করেছিল বিস্ময়কর এক বাতি। দেখতে বড়সড় হ্যারিকেনের মত হলেও, হ্যারিকেনের থেকে শতগুণ জোরালো আলো ছড়িয়ে দেওয়া লণ্ঠনটির পোশাকি নাম ছিল ‘পেট্রোম্যাক্স‘। যা পরবর্তীকালে বাংলায় বিখ্যাত হয়েছিল ‘হ্যাজাক’ নামে।
লণ্ঠনটির নিচে থাকা ট্যাঙ্কে কেরোসিন বা প্যারাফিন ভরে দেওয়া হত। ট্যাঙ্কের সঙ্গে লাগানো থাকত পাম্প। ট্যাঙ্কটির ওপরে থাকা পাতলা কাচের ঘেরাটোপে ঝুলত রেশমের সুতো দিয়ে বোনা বেলুন আকৃতির একটি ম্যান্টেল। তেলের ট্যাঙ্কে পাম্প দিলে কেরোসিন উঠে এসে ভিজিয়ে দিত হ্যাজাকের ম্যান্টেল। হ্যাজাকের বিশেষ জায়গায় জ্বলন্ত দেশলাই ধরলে দাউ দাউ করে জলে উঠত ম্যান্টেল। পুড়ে লাল হয়ে যেত কিন্তু ছাই হয়ে যেত না। এরপর তেলের ট্যাঙ্কে আবার পাম্প করা হত। ম্যান্টেলের রঙ প্রথমে লাল, তারপর নীল, সব শেষে উজ্বল হলুদ হয়ে উঠত। তখন অন্ধকারের স্পর্ধা থাকত না হ্যাজাকের ত্রিসীমানায় দাঁড়ানোর। তেলের ট্যাঙ্কের ভেতর বায়ুচাপ কমে গেলে হ্যাজাকের আলোর উজ্বলতা কমে যেত। পাম্প দিলেই আবার আগের উজ্বলতায় ফিরে আসত হ্যাজাক।
ভারত দাপিয়েছিল প্রায় সত্তর বছর
পূজা-পার্বণ, ধর্মসভা, মেলা, পুতুল নাচ, যাত্রা-নাটক-থিয়েটার, রাজনৈতিক সমাবেশ, রেললাইন পাতা, রাস্তার কাজে বাঁধা ছিল হ্যাজাকের ব্যবহার। এছাড়াও বিয়ে থেকে শ্রাদ্ধ, শোভাযাত্রা থেকে শ্মশানযাত্রা, রাতের গঙ্গায় বাবুদের ‘বজরা ভ্রমণ’ থেকে শুরু করে বাইজি নাচের আসর, যেখানে বেশি আলোর প্রয়োজন সেখানেই ‘মুস্কিল আসান’ হয়ে দেখা দিত হ্যাজাক। তবে দাম ছিল সাধারণ মানুষের আয়ত্বের বাইরে। তাই নিজেদের প্রয়োজনে তাঁরা ভাড়া নিতেন। তবে উচ্চবিত্তরা হ্যাজাক কিনে রাখতেন এবং বাড়ির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করতেন।
জ্বলন্ত হ্যাজাকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিত। কখনও নাড়া খেয়ে হ্যাজাকের ম্যান্টেল খসে পড়ে মুহুর্তের মধ্যে এলাকা ডুবিয়ে দিত ঘন অন্ধকারে। এই বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য প্রতি গ্রামে বা পাড়ায় একজন ‘হ্যাজাক বিশারদ’ থাকতেন। তিনি হ্যাজাকের নাড়ি নক্ষত্র, সমস্ত রোগের উপসর্গ ও প্রতিকার জানতেন। তাঁকে বাড়ি থেকে প্রায় তুলে আনা হত ঘটনাস্থলে। সেই মুহূর্তে ওই ব্যক্তি চিত্রতারকার থেকেও বড় সেলিব্রেটির স্ট্যাটাস উপভোগ করতেন।
সচরাচর হ্যাজাক বা পেট্রোম্যাক্স বলতে যে ছবি আমাদের চোখে সামনে ভেসে ওঠে, সেটা ছাড়াও হ্যাজাকের আর একটি মডেল ছিল। এই মডেলটির দাম ছিল অনেক বেশি। তখনকার মানুষরা এই মডেলটিকে বলতেন ডে-লাইট। শূন্যে ঝোলানোর উপযোগী এই হ্যাজাকটি দেখতে অনেকটা এলিয়েনদের মহাকাশযানের মত ছিল। পুতুলনাচ, যাত্রা, নাটক, থিয়েটার ও সার্কাসে এই মডেলটি ব্যবহার করা হত। তবে দড়ি ছিঁড়ে মাটিতে আছাড় খেয়ে কম অনুষ্ঠান পণ্ড করেনি এই ডে-লাইট।
সুখের সময় হয়েছিল শেষ
ভারতের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও বাতি শিল্পের ব্যাপক উন্নতি শুরু হয়েছিল আশির দশক থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতের বাজারেও বিক্রি হচ্ছিল বিভিন্ন ওয়াটের বালব, টিউব লাইট, সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প। যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেখানে পৌঁছে গেছিল ব্যাটারি লাইট ও জেনারেটার। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ক্রমশ পিছিয়ে যেতে শুরু করেছিল হ্যাজাক। আজ ভারতের খুব কম গ্রামেই কর্মক্ষম হ্যাজাক খুঁজে পাওয়া যাবে। কারণ যে কোম্পানিগুলি এ দেশে হ্যাজাক তৈরি বা আমদানি করত, তারা চলে গেছে অন্য ব্যবসায়।
আজও হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী হ্যাজাক ভাড়া দেন। কিন্তু কমতে শুরু করেছে তাঁদের হাতে থাকা সক্রিয় হ্যাজাকের সংখ্যা। কারণ যন্ত্রাংশ ও সারাইয়ের মিস্ত্রির আকাল। তাই একে একে চিরবিশ্রামে যেতে শুরু করেছে অবশিষ্ট হ্যাজাকগুলিও। এ পর্যন্ত লেখাটি পড়ে, হয়ত আপনারা ভাসতে পারেন স্মৃতিমেদুরতায়। বিষণ্নতা ঘিরে ফেলতে পারে আপনার মনকে। তবে আপনাকে বলি, হারিয়ে যায়নি হ্যাজাক। মৃত্যুঘুম থেকে জেগে উঠে আবার দাপিয়ে ফিরে এসেছে। কীভাবে, তা বলব কয়েক মিনিটের মধ্যে। তার আগে চিনে নিন হ্যাজাকের স্রষ্টাকে।
‘পেট্রল-ম্যাক্স’
জার্মানির ম্যাক্স গ্র্যাটজ ১৯১০ সালে ইউরোপের বাজারে এনেছিলেন বিস্ময় সৃষ্টিকারী এক লণ্ঠন, নাম ছিল ‘গ্র্যাটজিন-লিচট’। দুটি মডেলে লণ্ঠনটি পাওয়া যেত। একটি ২০০ মোমবাতির সমান আলো দিত, অপরটি ১০০০ মোমবাতির সমান। কিছুদিনের মধ্যেই ম্যাক্স গ্র্যাটজ ‘গ্র্যাটজিন-লিচট’ লন্ঠনের নাম পালটে রেখেছিলেন ‘পেট্রোম্যাক্স’। কারণ পেট্রোলিয়ামজাত বিভিন্ন তেল ও লবণ নিয়ে সারাদিন গবেষণা চালাতেন বলে, ম্যাক্স গ্র্যাটজকে তাঁর বন্ধুরা ডাকতেন ‘পেট্রল-ম্যাক্স’ নামে।
বিদ্যুৎ তখনও বিশ্বে সহজলভ্য ছিল না। ফলে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেয়নি পেট্রোম্যাক্স। বিভিন্ন দেশে কারখানাও বানিয়ে ফেলেছিলেন ম্যাক্স গ্র্যাটজ। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের ফলে বিদেশের কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছিল। হাল ছাড়েননি ম্যাক্স। জার্মানিতেই বাড়িয়ে নিয়েছিলেন কারখানার সংখ্যা। বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকে, বিশ্বের আশি শতাংশ বাজার ছিল ম্যাক্স গ্র্যাটজের দখলে।
১৯৩৭ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন ম্যাক্স গ্র্যাটজ। তাঁর দুই ছেলে এরিখ ও ফ্রিজের হাতে এসেছিল কোম্পানি। কিন্তু এবার হ্যাজাক উৎপাদনে আঘাত করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। রাশিয়া প্রবেশ করেছিল জার্মানিতে। বিশ্বযুদ্ধের ফলে গ্র্যাটজদের বেশিরভাগ কারখানাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। অবাক করার মত বিষয়, উভয়পক্ষের সেনারা দুটি বিশ্বযুদ্ধেই ব্যবহার করেছিল ম্যাক্সেরই আবিষ্কার করা পেট্রোম্যাক্স। ১৯৬১ সালে ম্যাক্স গ্র্যাটজের কোম্পানিটি কয়েক হাত ঘুরে চলে গিয়েছিল ফিনল্যান্ডের নোকিয়া কোম্পানির কাছে। জার্মানির আল্টেনার কারখানায় সত্তরের দশক পর্যন্ত বানানো হয়েছিল হ্যাজাক। তারপর প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছিল উৎপাদন।
হারায়নি, ফিনিক্স পাখির মতোই ফিরে এসেছে হ্যাজাক
জার্মানির হ্যানোভারের যুবক জোনাস টরেকের ছিল অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। ১৯৬৩ সালের একটা ম্যাগিরাস-ডজ ট্রাককে সারিয়ে, সেটি চালিয়েই হ্যানোভার থেকে পৌঁছে গেছিলেন আফ্রিকায়। ২০০১ সালের এই অভিযানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক বন্ধু। দু’জনে মিলে মাসের পর মাস ধরে চষে বেড়িয়েছিলেন আফ্রিকার জঙ্গল ও মরুভূমি।
নাইজারের মরভূমি পেরোবার সময় ট্রাকটি আটকে গেছিল বালিতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেলচা দিয়ে বালি খুঁড়েও দুই বন্ধু এক ইঞ্চি নড়াতে পারেননি ট্রাকটিকে। ফুরিয়ে গেছিল গাড়ির ব্যাটারি। বিপদে পড়েছিলেন তাঁরা। ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে আসা বালিতে ঢেকে যেতে শুরু করেছিল তাঁদের ট্রাক। কনকনে ঠান্ডা মরুভূমির রাত দু’জনকে কাটাতে হয়েছিল গাড়ির মধ্যে। পরদিন সকালে ম্যাপ হাতে হাঁটা শুরু করে, সন্ধ্যাবেলা দু’জনে পৌঁছে ছিলেন কুড়ি কিলোমিটার দূরে থাকা একটি গ্রামে। মরুভূমির কিনারায় উজ্বল আলো ছড়িয়ে জেগে ছিল গ্রামটি।
দু’জন মানুষকে হেড লাইট জ্বালিয়ে গ্রামের দিকে আসতে দেখে দেশি বন্দুক নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন গ্রামবাসীরা। মাথার ওপর হাত তুলে জোনাস বুঝিয়েছিলেন তাঁরা শত্রু নন, বরং বিপদে পড়ে সাহায্য চাইতে এসেছেন। তাঁদের গাড়ি পড়ে আছে মরুভূমির বুকে। সেটিকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং গাড়ির ব্যাটারি চার্জ দিয়ে দিতে হবে। এর জন্য যা টাকা লাগবে তাঁরা দেবেন।
গ্রামবাসীরা বলেছিলেন, বালি সরিয়ে তাঁরা গাড়ি উঠিয়ে দেবেন। কিন্তু তাঁদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। তাই তারা ব্যাটারিতে চার্জ দিতে পারবেন না। তবে দূরে একটি গ্রামে বিদ্যুৎ আছে, সেখান থেকে ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে আনবেন। তবে সময় দিতে হবে দু’দিন। গ্রামবাসীদের কথা বিশ্বাস হয়নি জোনাসদের। কারণ গ্রামের খান কুড়ি কুঁড়েঘরের ভেতরটা দিনের আলোর মত ঝক ঝক করছিল। অথচ গ্রামবাসীরা বলছেন গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। জল খাওয়ার অছিলায় গ্রামে ঢুকেছিলেন দুজন। বিদ্যুতের খুঁটি বা তার কিছুই নজরে পড়েনি তাঁদের। বরং কানে এসেছিল একটা শোঁ শোঁ শব্দ এবং বাতাস নিয়ে এসেছিল কেরোসিনের গন্ধ।
একটি কুঁড়েতে জল খেতে ঢুকে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন জোনাস। আবিষ্কারের নয় দশক পরেও আফ্রিকার মরুভূমির প্রান্তে থাকা এক আদিবাসী গ্রামকে আলোকিত করে চলেছে ম্যাক্স গ্র্যাটজের কোম্পানির পেট্রোম্যাক্স। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল জোনাসের। সেই গ্রামেই থেকে গিয়েছিলেন। গ্রামবাসীরা উটের পিঠে করে গিয়ে গাড়ির ব্যাটারি চার্জ দিয়ে নিয়ে এসেছিল। উদ্ধার করেছিল বালিতে আধডোবা গাড়ি।
দ্রুত দেশে ফিরেছিলেন জোনাস
অভিযানে আর তাঁর মন ছিল না। তাঁর মন ছেয়েছিল ‘পেট্রোম্যাক্স’। দেশে ফিরে তিনি বিভিন্ন রফতানিকারক সংস্থার কাছে জানতে চেয়েছিলেন বিশ্ব বাজারে পেট্রোম্যাক্সের চাহিদা। উত্তর এসেছিল ‘কোনও বাজার নেই’। কিন্তু জাত্যাভিমানী জার্মান জোনাস পণ করেছিলেন, আর এক জার্মান ম্যাক্স গ্র্যাটজের অমূল্য আবিষ্কারকে হারাতে দেবেন না বলে। পুরোনো জিনিসপত্রের দোকান থেকে কিনে ফেলেছিলেন পঞ্চাশটা হ্যাজাক। তারপর সেগুলিকে নিজের হাতে খুলে আবার লাগিয়েও ফেলেছিলেন ২৩ বছরের জোনাস।
এরপর জোনাস, জার্মান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কিনে ফেলেছিলেন কয়েক হাজার পড়ে থাকা পেট্রোম্যাক্স। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পেট্রোম্যাক্সের কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক পাওয়ার জন্য। সফল হয়েছিলেন জোনাস। কলেজের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কিছুদিনের মধ্যেই শুরু করেছিলেন পেট্রোম্যাক্সের কারখানা। তবে একটি বিষয়ে জোনাস ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি স্রষ্টার সৃষ্টিকে পাল্টাবেন না। পেট্রোম্যাক্সের আগের বৈশিষ্ট্য ও রূপই ধরে রাখবেন। কারণ পেট্রোম্যাক্সের সর্বাঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় ১০০ বছরের ইতিহাস।
কিন্তু মহাকাশ পর্যটনের যুগে হ্যাজাক কিনবে কে!
সম্ভাব্য ক্রেতা নিয়ে গবেষণা আগেই সেরে রেখেছিলেন কমার্সের ছাত্র জোনাস। তাঁর কারখানায় তৈরি পেট্রোম্যাক্সের ক্রেতা হবে ইউরোপ আমেরিকার নবীন প্রজন্ম। যাদের মধ্যে ক্যাম্পিং খুব জনপ্রিয়। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় যারা ঘুরে বেড়ায় দেশ বিদেশের মরুভূমি জঙ্গল পাহাড়ে। প্রকৃতির কোলে তাঁবু পেতে কাটিয়ে আসে ক’দিন। রাতে তাদের সঙ্গী হবে পেট্রোম্যাক্স। ব্যাটারি চালিত বাতির ব্যাটারি ফুরিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে তাদের আর থাকতে হবে না। কারণ এক লিটার কেরোসিনে জোনাসের হ্যাজাক জ্বলবে প্রায় আট ঘন্টা। এছাড়া পেট্রোম্যাক্সের নতুন ক্রেতার সন্ধান পেয়েছিলেন আফ্রিকাতেও। কারখানা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে গেছিলেন অর্ডার। আফ্রিকার বিভিন্ন ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া পর্যটকদের ক্যাম্প ও সাফারি লজগুলির লনকে আলোকিত করবে তাঁর কারখানার পেট্রোম্যাক্স।
তবে জোনাস ধরেই নিয়েছিলেন, ইউরোপ আমেরিকার নবীন প্রজন্ম প্রথমে পেট্রোম্যাক্স কিনতে চাইবে না। তাই তিনি নবীন প্রজন্মকে প্রলুব্ধ করার জন্য হরেক রকম ক্যাম্পিং ও অ্যাডভেঞ্চার গিয়ার তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। দামে কম ও টেকসই হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল সেগুলি। ক্যাম্পিং ও অ্যাডভেঞ্চার গিয়ার বিক্রির সময় সুকৌশলে একজন দু’জন করে ক্রেতাকে পেট্রোম্যাক্স গছিয়ে দিতে শুরু করেছিলেন জোনাস। ক্যাম্পিংয়ে সেই ক্রেতারা পেট্রোম্যাক্সের কার্যক্ষমতা দেখে দারুণ খুশি হয়েছিলেন। কারণ জোনাসের হ্যাজাক ঝোড়ো হাওয়াতেও নেভে না।
প্রথমদিকের ক্রেতাদের কাছ থেকেই পেট্রোম্যাক্সের খবর পেয়েছিলেন আরও কিছু ক্রেতা। এভাবেই ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছিল পেট্রোম্যাক্সের ক্রেতার সংখ্যা। আজ জোনাস বছরে কয়েক কোটি ডলারের পেট্রোম্যাক্স বিক্রি করেন। ইউরোপের ও আমেরিকার অসংখ্য ক্যাম্পার আজ ব্যবহার করেন জোনাসের পেট্রোম্যাক্স। এভাবেই এক দুর্দমনীয় জার্মানের অদম্য প্রচেষ্টায়, প্রায় মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে এসেছে আর এক জার্মানের অমর সৃষ্টি ‘পেট্রোম্যাক্স’। অরণ্য পাহাড় মরুভূমিতে পাতা রঙিন ফুলের মতো তাঁবুগুলিকে আলোকিত করে চলেছে নিশুতি রাতের নতুন সূর্য হয়ে।